জমি-শিকড়-আকাশ ভপেন্রমোহন সরকার €)131 0৯7] ০৬ 9 11) রর বড & কিল ৮০171 রে মিত্র ও ৫০ঘাৰ -১০, শ্্যামাচরণ ৫ সীট, কনিনক1ভা-১২ স্*্্র' টাকা আষাঢ় ১৩৬৭ সাল বাহ ার9[হিওধ দােল যেত 00590 স0........ ঢু. 20০৯৯ 3 তু 2.০০০০০৮৪১৯,, টিটি ১ রনি সবেশ্বর সুর করিয়া গীতা পাঠ করিতেছেন । প্রায়-মুখস্থ শ্লোকগুলির উচ্চারণ-সথুখে বিভোর হইয়া! উঠিয়াছেন ৷ অধ্যায় শেষ হইলেও কিছুক্ষণ কান পাতিয়! স্তব্ধ হইয়। রহিলেন। ছন্দ-মাধুর্য কানের মধ্যে তখনও যেন ঝংকার তুলিতেছে । অবশেষে গ্রন্থখানি বন্ধ করিয়া! প্রণাম করিলেন। সযত্রে যথাস্থানে রাখিয়! দিলেন । উঠিলেন। খডমের শব্দে চকিত হইয়া স্ত্রী সুনয়ন। খাবার লইয়া! আসিলেন। সর্বেশ্বর চি'ড়া-দই মাখিতে আরম্ভ করিয়াই থামিয়া গেলেন ।--কলা! নেই ? না।-_স্ুনয়না বলিলেন ।-_-থাকবে কোথেকে ? কালকেই তে! আনা হ'ল ?সবেপ্র অবাক হইয়া বলিয়া উঠিলেন। রাত্রে ছুধের সঙ্গে সকলকে দিলাম যে । সবেখর মুখ নামাইয়! প্রতিক্রিয়া গোপন করিয়া ফেলিলেন। সশব্দে খাইতে আব্রস্ভ করিলেন । স্থুনয়ন! সাস্ত্বনার হ্থরে বলিলেন, আজ বাজার থেকে এনো আবার । রেখে দোব তোমার জনে । সর্বেশ্বর কোনও জবাব দিলেন না । বাব।, শ্বামীজী এসেছেন |--ছেৌট মেয়ে উমা আসিয়! খবর দিল | বাচ্ছি। বসতে বল্‌ ।-_সবেশ্বর খাওয়া শেষ করিয়া! উঠিলেন। ২ জমি-শিকড়-আকাশ স্বামী গৌড়ানন্দই সবেপ্বরকে অভ্যর্থনা করিলেন, আস্থন। অনেক দিন যান নি আশ্রমে ! ভাবলাম, অন্থুখ-বিস্ুখ হ'ল নাকি ! সবেশ্বর হাসিয়া! বলিলেন, না না। পরীক্ষার হাঙ্গামা গেল। সময়ই পাই নি। আজ বিকেলের দিকে আসন্ন না । প্রফেসর দত্ত যাঁবেন। আলাপ কর! যাবে । যাব।-_সরব্বেশ্বর জবাব দিলেন । একটু ভাবিয়া বলিলেন, গুঁর অঙ্গে আলাপ করতে ভালই লাগে । আমার মনে হয়, রামমোহনবাবুর অবিশ্বাস বিশ্বাসেরউ আর এক রূপ । এথিকৃস্‌ মানেন, র্রিলিজিয়ন মানেন না।--গোৌড়ানন্দ হাতিয়া বলিলেন, নীতি মানেন, ঈশ্বর মানেন ন| | কিন্ত কাঁন আর মাথার মত ছুটে।র সম্বন্ধ ।--সবেশখ্বর দুঢ় প্রত্যয়ের স্বাভাবিক সহজ কথায় বলিয়া উঠিলেন, একটা মানলে আর একটা স্বতঃসিদ্ধের মত নানা হয়ে গেল যে। গৌড়ানন্দ সমর্থনে হাঁসিলেন শুধু। বলিলেন, ভাল কথা, বারেশ্বরের স্থবিধে কিছু হ'ল? কি হবে ?-_সবেশ্বর বলিলেন, নিজে কোন চেষ্টা করবে না 'কিকরবে তবে? যাকরছে। দালালি । দালালি ?_গৌঁড়ানন্দ সবিষ্ময়ে বলিয়া উগ্ঠিলেন, দালালি করতে পারবে ? কি করবে !__সবেশ্বর সখেদে বলিলেন, বাড়িতে সেধে কে বড় চাকরি দিতে আসবে বলুন ? অর্ডার*্সাপ্লাই, দালালি এই সব করে আর কি। একটা কিছু করতে তো! হবেই ? একা আর পেরে উঠছি ন! জমি-শিকড়-আকাশ ৩ স্বামীজী। একট! হেডমান্টারের আধ যে বেশে একজন রাজমিস্্রির আয়ের সমান, সে দেশে প্রফেসরির চেয়ে দালালিই ভাল। অনেক বেশি পয়সা । একটু থামিয়া বলিলেন, সংসারট। বড় হাঙ্গামা স্বামীজী | আবার বপিলেন, আপনার! বেশ আছেন । আশ্রম জীবন ! এক- একবার ভাৰি-- সবেঘ্বর শেষ করিলেন না। গোৌঁড়ানন্দ ম্মিতহাস্তে বুঝিয়া লইলেন। জিজ্ঞাস। করিলেন না,কি ভাবেন । বলিলেন, কিন্ত সংসারে থেকেও নিলিপ্ত জীবন, সেই তো আদর্শ । বড় কঠিন স্বামীজী | কঠিন তো বটেই ।_ স্বামীজী সমর্থন করিলেন । কেহই আর অগ্রসর হইলেন না । সংকোচ বোধ করিলেন সম্ভবত । গোৌঁড়ানন্দ পূর্ণ প্রসঙ্গে কিরিরা গেলেন | বলিলেন, আপনার ভাই-_ বীরেশ্বরের কাছে অনেক আশা! করেছিলাম । সর্বেশ্বর একটুখানি করুণ হাস্তপহকারে বলিলেন, আশা! আমার কাছেও অনেকে অনেক আশ! করেছিল স্বামীজী | আশ! ! গৌডানন্দ বেদনার সুরে কহিলেন, তাই বটে। আপনার লেখাটা শেষ হরেছে ?-সর্বেশ্বর হঠাৎ যেন ধ্যানলোক হইতে নামিয়া আসিলেন। গভীর তৃপ্তির উপর দিয়! ছোট স্মিত হান্তের ঢেউ খেলিয়! গেল । গৌঁড়ানন্দ বলিলেন, হ্যা, শেষ হয়েছে । দেখাব আপনাকে । দেখব ।-_সর্বেশ্বর আগ্রহ প্রকাশ করিলেন । ইংরাজীতেই লিখেছেন শেষ পর্যস্ত ? | ই্যা।__গোৌঁড়ানন্দ অহেতুক দৃঢ়স্বরে কহিলেন শুধু বাংলা দেশের অন্তে ওটা লিখি নি আমি। গোটা পৃথিবীর লোকে পড়ুক_-এই ৪. জমি-শিকড়-আকাপ আমার ইচ্ছে। অবশ্য না-পড়ার স্বাধীনতা তাদের রইল ।--বলিয় হাসিয়া! উঠিলেন। পড়বে না কেন, পড়বে ।--সর্বেশ্বর সাস্বনা দিলেন। যাবেন তা হ'লে সন্ধ্যেবেলা ? নিশ্চয় যাব ।-সর্বেশ্বর বলিলেন, আপনার বইখান1 দেখব | আচ্ছ, উঠি তবে। বেরুবেন নাকি ? ই্যা, বাজারের দিকে যাব । বাজারট! নিজেই করি স্বামীজী | গৌড়ানন্দ গাত্রোথান করিয়াছিলেন । একটু দ্রাডাইয়! বলিলেন, খাওয়ার জিনিস নিজের কচিমত কেনার একটা আনন্দও তো! আছে? ত। আছে ।--সর্বেশ্বর লঙ্জ।র পরিবর্তে গর্ব বোঁধ করিলেন এবার। গৌড়ানন্দ চলিয়। গেলেন। অর্বেশ্বর ভৃত্য লোচনকে সঙ্গে লইয়া বাজারের দিকে রওন! হইলেন । পথে দ্বিতীয় কালীবাড়ির উদ্দেশে প্রণাম শেষ করিয়া পা বাড়াইতেই সর্বেশ্বর বাধাপ্রাপ্ত হইলেন । বীরেশ্বর | সর্বেশ্বরের গায়ে ঠেকিয়া প্রায় হোঁচট খাইয়া উঠিল বীরেশ্বর | লজ্জিত মুদছ্বকণ্ঠে বলিল, ও, দাঁদ] ! হ্যা।__বলিয়! নিঃশব্দে সবেশ্বর অগ্রসর হইলেন । বীরেশ্বর ধীরে ধীরে কয়েক পা চলিয়! হঠাৎ ঘুরিয়া দাড়াইল। ছুটিয়া সর্বেখবরকে ধরিযা বপিল, একটা কথা! । আমি একটা মিথ্যে কথা ব'লে এসেছি । তোমাকে খ'দ জিজ্ঞাসা করে-_ সবেশ্বর থমকিয়। দাড়াইলেন। কি কথা? কয়েক দিনের জন্যে কিছু টাকা লোন নিতে হুশ । সাগরমল দিতে চায় না। অনেক ব'লে-ক'য়ে_। বলেছি যে, বাড়িটা আমাদেরই ।-- বীরেশ্বর নিঃসংকোচে ঝরঝর করির। বলিয়া গেল । জমি-শিকড়-আকাঁশ ৫ সর্বেখখর বিমুঢের মত কিছুক্ষণ তাঁকাইয়া রহিলেন। অবশেষে ত্রুদ্ধকণ্ঠে বলিলেন, আর আমাকে জিজ্ঞাসা করলে তাই সত্যি ব'লে স্বীকার করতে হবে ? আমি বলব, এটা কাকার বাড়ি নয়, আমাদেরই ? আমি-_-আমি বলব এই মিথ্যে কথা? আচ্ছা, থাকৃ।--বীরেশ্বর বিবেচন! করিয়া বলিল, দোষ তো নেই কিছু । শুধু কথ! । টাকাটা! তো সাত দিনের নধ্যেই দিরে দিচ্ছি। আচ্ছা, থাক । জিজ্ঞেস করবে না নোধ হয়। উত্তরের অপেক্ষ। না করির! বীরেশ্বর দ্রুতপদে ফিরিয়া! গেল। খদি জিজ্ঞেস করে ?--সভয়ে ভাবিল বীরেশ্বর । নাঃ। বাড়ি ফিরিয়া বীরেশ্বর ।নজের ঘরে ঢুকিয়া সশব্দে “রজ। বন্ধ করিয়। দিল। কিছুক্ষণ দরজায় পিঠ লাগাইয়৷ বাহিরের পৃথিবীটাকে যেন গিছনে ঠেলিয়! রাখিতে লাগিল। মাথাটা বারকয়েক ঝাকিয়া লইল মনে মনে । মুক্ত বীরেশ্বর এবার হালকা দেহে ছোট টেবিলটার দিকে অগ্রসর হইল। কাগজের নিশান! দেওয়া বইখান। খুলিয়া! রুদ্ধ- নিশ্বাসে পড়িতে আরম্ভ করিল । সাগরমল ! তীক্ষ শ্লেষাত্বক এক টুকরা হাসি ফুটিয়া উঠিল বীরেশ্বরের মুখে। চার-পাঁচ লাইন গোড়া হইতে আবার পড়িতে হইল । বার্গসয়ের “এলঙ তাইটালে'র তলায় সাগরমল এবার ডুবিয়! গেল। মাঝে মাঝে মনে আসে, কিন্ত বসে না আর। স্কানাভাবে সাগরমলের। বীরেশ্বরের মন হইতে তখন খসিয়। গেল । পড়িতে পড়িতে সঙ্গে সঙ্গে পাশে পাশে ছোট টিপ্লনীর সমালোচনা লিখিয়া যাইতেছিল বীরেশ্বর । “এটা ঘুক্তি নয়”, 'প্যাচ', “নো? “ফ্যালাসি'। ইত্যাদি। ৬ জমি-শিকড়-আকাশ দরজায় কে ধাক্কা দিল। ঠাকুরপো1, দরজা বন্ধ ক'রে দিয়েছ কেন? খোল । স্ুনয়ন! | কেন ?-_বীরেশ্বর ভ্রকুঞ্চিত করিয়া প্রশ্ন করিল। থাবে ন]? সন্কালে বেরিয়ে গেছ, কিঢুই তো খাও নি! কিচ্ছ খাব না বউদি । খিদে নেই ।-_বীরেশ্বর করুণস্বরে কহিল। দরজা খোল তে! । কাজ আছে। বীরেশ্বর পাতার সংখ্যাটা দেখিয়া! লইয়া! দরজ। খুলিয়া দিল । সুনয়না ঘরে ঢুকিয়া বইখানা বন্ধ করিয়া দিলেন।--চল। বীরেশ্বর হতাশ দৃষ্টিতে বইখানার দিকে একবার তাকাইয়! সুনয়নার সঙ্গে বাহির হইয়। গেল । খাইতে আরম্ভ করিয়৷ বীরেশ্বর হাসিয়া বলিল, আজকে সাগরমলের কাছে কি চমৎকার মিথ্যে কথাটা বলেছি বউদি । তাঁই নাকি ?-_স্থুনয়ন! উৎসাহ প্রকাঁশ করিয়! বলিলেন, মিথ্যে কথ! বলতে পার তুমি € পারিনা? খুব পারি। এখন জলের মত বলতে পারি। না বললে ছাড়ে না যে! তা হ'লে বলবে না কেন? বেশ করেছ। স্ুনয়না বলিলেন । আমি আরও ভাবছিলাম, তুমি দীপিকাদের ওখানে গেছ । না না।--বীরেশ্বর তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ করিয়! উঠিল। স্ুনয়না কিছুক্ষণ সম্মিত নয়নে তাকাইয়! থাকিয়া বলিলেন, কিছু আশা-ভরস! পেলে £ কিসের আশী-ভরস! 1-_বীরেশ্বর যেন চমকিয়া উঠিল। পরক্ষণে জোরে হাসিয়া উঠ্ঠিল। বলিল, বড় ভুল বুঝেছ বউদ্ি। ওসব জমি-শিকড়-আকাশ ৭ আশাভরসার কোন স্থন নেই আমার জীবনে । ওর চেয়ে অনেক--- অনেক বড় কাজ আছে আমার । পু কিকাজ? বীরেশ্বর মনে মনে লজ্জিত হইল । ছি-ছি! একান্ত নিজস্ব গোপন কথা কাহারও কাছে বলা হাস্তকর | কিন্তু বউদি--| বউদির কাছে বল! যার । ভাবিল বীরেশ্বর | লেখাপড়ার কাজ তো। ?__স্গুনয়না! আবার বলিলেন, সে আমি বলেছি দীপিকার কাছে। একটু ছিট আছে। ছিটই বটে। বীরেশ্বর বউদির অজ্ঞতায় কৃপাহান্ত করিয়া বলিল, কিন্ত তোমার সঙ্গে তার দেখ। হ'ল কোথায় ? স্থনমন! মিটিমিটি হাসিতে লাগিলেন । বলিলেন, এসেছিল। এখানে ? ই্যা। সেইজন্তেই তো বলছি । আমারও মনে হ'ল যেন-- যেন কি?”_বীরেশ্বর মুখ তুলিয়! প্রশ্ন করিয়াই তৎক্ষণাৎ আবার নতযুখে হাত ধুইতে ব্যস্ত হইল। আর বেশি বেগ পেতে হবে না তোমায় । এখন শুধু-_ বীরেশ্বর উঠিয়া পড়িল |_ভুল, ভুল বউদি। ওকে চিনতে পার নি। বাহির হইবার যুখে হঠাৎ ঘুরিয়! দাড়াইল।-__কি বলছিলে ? ওঃ! খেপেছ 1? সর্বনাশ ! মুখেও এনো না। ঘরে ঢুকিয়া দরজাটা! আবার বদ্ধ করিতে যাইয়া বীরেশ্বর থামিয়া রহিল কিছুক্ষণ। দরজ| খাল! রাখিয়া হাত ছুইট! নামাইয়! লইয়া ধীরে ধীরে টেবিলের কাছে গিয়া দাড়াইল। বইখান! খুলিয়৷ কয়েক পাঁত। উপ্টাইয়া আনার বন্ধ করিয়! রাখিল। একখানা খাতা বাহির ৮ জমি-শিকড়-আকাশ করিয়৷ খুলিয়া! শেষ লাইনটার উপর চোখ বুলাইর়া লইয়া জানালা দিয়া বাহিরের দিকে তাঁকাইয়! রহিল । পো করিয়া একটা মোটর-সাইকেল আঁসিয়৷ বাড়ির সম্মুখে ক্যাচ করিয়া খামিয়া গেল। মচমচ শব্দের তরঙ্গ তুলিয়া মিলিটারী ভঙ্গীতে ঘরে প্রবেশ করিল একজন সতেজ বলবাশ যুবক | বলেন্দু। বীরেশদ1 !--বলেন্দু বসিয়া টেবিলে একটা কিল মারিয়া বলিল, আজকে ছটায় রেডি হয়ে থাকবেন । কি ব্যাপার বলুন ভো ?-_বীরেশ্বর বলেন্দুর ধাক্কা খাইয়৷ যেন জাগিয়া উঠিল । শিকারে যাব | বাঘ মার! দেখতে চেয়েছিলেন না £ হ্যা হ্যা । আজ নিয়ে যাৰ আপনাকে | খুব ভাল ক'রে মাচা বানানে। হয়েছে । যাবেন তো? যাব। বেশ। ছটায়। এটাকি বই? নাম পড়িয়া তাডাতাডি বন্ধ করিয়। ফেলিল। ওরেবাবা ! সাংঘাতিক ! বীরেশ্বর মৃদ্ুহাস্তে বইখান! হাতে তুলিয়৷ লইল। ফোন দার্শনিক ব্যাপার নিশ্চয়ই ? হ্য।, বেজ্ঞানিক-দর্শশ বলা যায়।-_বীরেশ্বর করুণার সঙ্গে বুঝাইয়! দিল। বলেন্দু হাত ছুইট! কপালে ঠেকাইয়! সতরে বলিল, মাথায় থাকুন। তা হ'লে ছটা । আমি তুলে নিয়ে যাব। একটা লাফ দিয়া উঠিয়া! পড়িল বলেন্দু। যেমন আসিরাছিল তেমনই সশব্দে বাহির হইয়! গেল। মোটর-সাইকেলের তটভট শব্দে আর হইয়! বীরেশ্বর জানালার কাছে গিয়া দাড়াইল। জমি-শিকড়-আকাশ ৯ সৈন্য !_হঠাৎ মনে হইল বীরেশ্বরের । এতক্ষণে অবজ্ঞা করিতে পারিয়া সন্ত্ট চিত্তে সরিয়া আসিল ভিতরের দিকে । ঘড়ি দেখিয়া আঁৎকাইয়। উঠিল। অনেক কাজ আছে। বইখানা এবং খাতাখান! যত্র করিয়! রাখিয়! দিয়! বীরেশ্বরও বাহির হইল। পথে নামিতেই মর্বেশ্বরের সঙ্গে আবার দেখ! হইল। সর্বেশ্বর ' বাজার করিয়া ফিরিতেটিলেন। বীরেশ্বর থমকিয়৷ দীড়াইল। বলিল, সাগরমলের সঙ্গে দেখ। হয়েছে নাকি? ন|-_সর্ধেবর গম্ভার মুখে বলিলেন । বীরেশ্বর তাভাতাড়ি পাশ কাটাইয়! চলি গেল। সর্বেশ্বর বাঁড়ির মধ্যে ঢুকিলেন। স্থুনয়ন| জিন্জীসা করিলেন,মাছ আন নি? সর্বেশ্বর সহর্ষে বপিলেন, এনেছি । একেবারে টাটকা পাবদ! মাছ। কই, দেখি ?-_লোচনের হাত হইতে মাছের পুঁটলিটা লইয়া খুণিতে লাগিলেন সুনয়ন| | সর্বেশ্বর জামা খুলিতে খুলিতে বলিলেন, বেশ ক'রে একটু সরষে দিয়ে-_বুঝেছ? আচ্ছা! ।--স্ুনয়ন1! আশ্বাস দিলেন ।-_-কলা এনেছ ? এনেছি এক কাদি।--সবেশ্বর ব্যথিত কে বলিলেন, ছোয়া যায় নাঁ। দিন দিন যেন বাড়ছেই দাম। উঠানে ছায়ার দিকে দৃষ্টি পড়ায় ব্যস্ত হইয়া উঠিলেন। বলিলেন, বেলা হয়ে গেছে। একটু তাড়াভাড়ি কর। ্‌ বীরেশ্বর রাস্তা হইতে পলাতকের মত ঢুকিয়! পড়িল দীপিকাদের বাড়ি। দীপিকার দাদ! প্রদীপের নাম ধরিয়া একবার ডাক দিয় ভিতরে চলিয়। গেল। প্রদীপ ঘরেই ছিল। বীরেশ্বর শরীরট। প্রদীপের বিছানায় এলাইয়! দিয়! বলিল, দরজাট! বন্ধ করে দাও ভাই। দীপিকাও ছিল ঘরে। হাতের বইখান| বন্ধ করির! দিয়! প্রদীপের মুখের দিকে চাহিয়া হাসিয়া ফেলিল। প্রদীপ বলিল, কি ব্যাপার বীরেশদ! £ কেউ তাড়া করেছে নাকি? হ্যা, ভয়ঙ্কর ।__বীরেশ্বর একটু ধাতস্থ হইয়। হাঁসির! জবাব দিল। কে? দীপিকা সকৌতুকে জিজ্ঞাস! করিল। সবাই ।-বীরেখবর আলম্ততরে বলিল, ব্যবসা! তো কর নি প্রদীপ! ব্যবসাই তো! ভাল ।- প্রদীপ বলিল। ভাল, আর উঠতে ন! হ'লে ।--নিজের কাছে বলিল বীরেশ্বর | উঠতে না হ'লে! অতল কাদার মধ্যে নাক পর্যন্ত ডুবে গেলে অবস্থাটা! কি রকম হয়? ভাল? বরাবর বাস করলে ভালই বোধ করি। কিন্ত আমাকে যে আবার উঠে আসতে হয় । ব্যবসা! কাদার মত বুঝি ?--দীপিকা জিজ্ঞাসা করিল। হ্যা। আর মানুষগুলো! কেচোর মত, কিলবিল করে । দীপিকা খিলখিল এবং প্রদীপ হো-হো! করিয়! হাসিয়া উঠিল। বীরেশ্বর হাসি-হাসি মুখে বিরস তীক্ষকণ্ঠে আবার বলিল, যতক্ষণ থাকি আমাকেও করতে হয়। ওদের মতই। কিকরব বল? জমি-শিকড়-আকাশ ১১ প্রফেসরি ন।৷ হোক, একটা মাস্টারিও তো! কোনখানে নিভে পারতেন । প্রদীপ দুঃখ প্রকাশ করিল । পারতাম । কিন্ত সেও তো আর এক রকমে কিলবিল করতে হ'ত, পয়সার অভাবে । এ কথা সমর্থন করে ন৷ প্রদীপ । অগ্তত প্রতিবাদের মহৎ সুযোগ পাইয়! উদাত্ত কঠে বলিল, পয়সাকে আপনি এত উচ্চে স্থান দিচ্ছেন কেন বীরেশদা ? বড় ছুঃখে পড়ে ভাই ।-_বারেশ্বর হাসিয়া ফেলিল ।-_কিছ্ক উচ্চে তে! নয়। পয়স| থাকলেও লোকে কাদার মধ্যে কিলবিল করে। তবে? জীবনটাই কিলবিল করছে এখনও --বীরেশ্বর জবাব না দিয়া হঠাৎ নিরুদ্দিষ্ট মন্তব্য করিয়া উঠিল! তা হ'লে তে পয়স। থাকা না-থাঁকা সমান ।--প্রদীপ বলিল । বারেশ্বর শূন্ত হইতে যুহুতের মধ্যে মাটিতে নামিয়া আসিল। বলিল, নান] না। পয়সার আমার বড় প্রয়োজন | আত্মরক্ষার জন্যেই প্রয়োজন । অল্প সময়ে বেশি পয়স|। দ্বরীপিকা আলোচনায় যোগ দিতে না পারিয়! এতক্ষণ অস্বস্তিবোধ করিতেছিল এবার বলিল, কি করবেন বেশি পয়স। দিয়ে ? অনেক কাজ ।-_সংক্ষেপে বলিল বীরেশবর | প্রদীপ হাসিয়! দীপিকাকে বলিল, সেদিন কীরেশদার বউদি বললেন না--- ছিট আছে ।-_দীপিকা মিষ্টি করিয়! একটু হাসিল । বীরেশ্বর কিছুট! নিস্পৃহ, কিছুটা উৎসুক কম্বরে বলিল, আমার নামে যা-তা নিন্দে করেছেন বুঝি বউদি? ১২ জমি-শিকড়-আকাশ হ্যা। বউদি কিন্ত আপনার নিন্দেয় পঞ্চমুখ একেবারে ।__দীপিক। স্পষ্ট পোঁহাঁগের স্বরে বলিল। বলিয়! বীরেশ্বরের:দিকে চাহিতে তাহার একাগ্র চক্ষুর উপর মুহূর্তের ভন্ত স্থির হইয়া রহিল। বীরেশ্বর তাড়া- তাড়ি দৃষ্টি সরাইয়া কিছু বলার তাগিদে বলিতে যাইয়া মুখ দিয়া বাহির হইল, অনেক কাজ-_অনেক | দীপিকার স্থুরট| মনের তলায় ঢেউ তুলিয়! বহিয়! যাইতেছিল ।--স্পষ্ট। এহ তে। স্পষ্ট । বীরেশ্বর উঠিয়া! বসিল । প্রদীপ বশিল, আবার কি কাজ? কাজ 1? বারেশ্বর হাতড়াইতে লাপিল। অনেক কাজ ব'লে উঠে বসলেন যে ? ওঃ !-_বীরেশ্বর জাগ্রত হইল ।--কা'দ আছে তো। এখুনি বেগ্তে হবে আবার । কাদায় ?-প্রদীপ হাসিয়া জিজ্ঞাস! করিল । কি করব বল? বাহিরের মোটর-সাইকেলের উদ্ধত শব্দে থামিয়া বারেশ্বর উৎকর্ণ হইয়া রহিল | বপিল, বলেন্দুবাবু বোথ হর। সঙ্গে সঙ্গে ঢষ্টটা জোর করিয়া দীপিকার উপর পতিত হইল। কিন্ত দীপিকার নত চক্ষু দেখা গেল ন। জুতার অশান্ত আওয়াজে বীরের নিঃসন্দেহ হইল । এবার বলিল, বলেন্দুবাবু। আবার শুইয়! পড়িল। দীপিকা আড়চোখে দেখিয়া লইল। প্রদীপ আছ ?_-বলিতে বলিতে বলেন্দু ঝড়ের মত ঢুকিয়। পড়িল ঘরে। একটুখানি থমকিরা দাড়াইল। বীরেশদা নাকি? বেশ, আপনার সঙ্গে আবারও দেখ! হয়ে গেল। জমি-শিকড়-আকাশ ১৩ প্রদীপ উঠিয়া বসিতে দিল। দীপিকাঁও উঠিতেছিল, দরকার হইল ন| বলিয়া আবার বসিল। কিন্তু বলেন্দু ন! বসিয়! ঘরের মধ্যে ছুটিয়া বেড়াইতে লাগিল। মাথার একটা ঝীকুনিতে চুলগুলি সরিয়া গেল পিছনে | বলিল, না বসব না আমি । সময় নেই। বীরেশদা, আপনি কিন্ত রেডি হয়ে থাকবেন । বারেশ্বর ক্লান্তস্বরে বলিল, হ্যা, থাকব । কোথায় যাবেন ?- প্রদীপ জিজ্ঞাসা করিল । শিকারে ।__বলেন্দু প্রসঙ্গটাকে চাঁপিয়া ধরিল।-যাবে নাকি ? যাব--শ্রদীপ আবদারের স্থরে কহিল । নেবেন? আদ ন|।_বচুলন্দু খুশি হইয়! জবান দিল, আর একদিন নিয়ে যাঁব। দীপিক1 বলিল, বাঘ মারবেন নাকি বলেনবাবু? না, বলেনদ1 |--প্রদীপ আপত্তি করিয়া উঠিল, বাঘ দেখলে আজ মারবেন না কিন্ধ। আমি ত। হ'লে দেখতে পান না। আজকে হরিণ। যা পাই ।--বলেন্দু হাসিয়া বলিল ।--ও, ভাল কথা। কালকে খেল! আছে মাঠে । যাও তো কার্ড ছুগে! রেখে দাও | দুইখান| কার্ড বাহির করিষা ধরিল | আপনি খেপছেন তে1 ?__দীপিকা জিজ্ঞাস। করিল । প্রদীপ বলিধা! উঠ্ঠিল, ওরে বাস্‌ রে! বলেনা না খেললে টাউন ক্লাব খেলেছে তনে। বলেন্দু দৃদুমন্দ হাসিতেছিল। কিন্তু ছুণান! দিলেন কেন ?-_ প্রদীপ বলিল । বলেন্দু বলিল, দীপিকা দেখতে চেয়েছিল যে। একটু চমকিয়! উঠিল দীপিকা । মুখের উপর এক ঝলক রক্ত বেশি ১৪ জমি-শিকড়-আকাশ আমিয়া গেল। কিন্ত জোর করিয়! বলিল, হ্যা, ভারি ইচ্ছে করে ফুটবল-খেশ। দেখতে । বীরেশ্বর নিশ্বাস বন্ধ করিয়। পড়িয়! ছিল । হঠাৎ উঠিয়! বসিল। বলিল, যাই প্রদীপ । বীরেশদ1, খেল! দেখবেন নাকি ?-_বলেন্দু জিজ্ঞাসা করিল। না।-_বারেশ্বর ওদাস্তভরে কহিল । খেল! আমি দ্রেখি না । সময়ই পাই না । তুচ্ছ খেলা-টেলা দেখেন না বীরেশদা।-_-বলেন্দু ঠাট্টা করিয়া বলিল, অনেক উচ্চনার্গে উঠে গেছেন । যেসব বইপত্র দেখেছি পড়তে, সাংঘাতিক ! বীরেশদ] বয়সে আমার সমানই ; কিন্ত মনে মনে আমার ঠাকুরদার মত । বীরেশ্বর ছাড় সকলেই হাসির! উঠিল! বীরেশ্বর একটু যেন লজ্জিত হইল । বাহাছরির ঢঙে কোন কথ! না বলিতেই সে কৃত- সংকল্প । হঠাৎ ঝৌঁকের মাথায় এই ভুলটা! হইয়া গিয়াছে ভাবিয়! অন্থতপ্ত হইল। বলিল, তা হ'লে তো শিকারের জন্ঠে লাফাতুম না। খেল! দেখতে আমার ভাল না লাগলে কিকরব বলুন? যেদিন ভাল লাগে, সেদিন যাই । কোনও দিন ভাল লাগে আপনার ?--বলেন্দু২কহিল, আমার কিন্ত মনে হয় না। প্রদীপ সাক্ষী আছে ।-_বীরেশ্বর শরীরটা যেন একটু আলগা করিয়া দিল একটু হাসিয়!।__-বল তে৷ প্রদীপ, গত বছর তোমার সঙ্গে একদিন খেল! দেখতে যাই নি? প্রদীপ এবং বলেন্দু উচ্চহাস্তে ঘর তরিয়! দ্রিল। ঘরের রুদ্ধ-কাঠিন্ত গলিয়া৷ সহজ হইয়া গেল দীপিকার কাছে । জমি-শিকড়-আকাশ ১৫ তবে ?--বলেন্দু হাসিতে হাসিতে বলিল | ঘড়ি দেখিয় হঠাৎ ব্যস্ত হইয়া পড়িল! আচ্ছা, চলি তবে । দীপিক! বলিয়। উঠ্ঠিল, দাড়িয়েই চ'লে যাচ্ছেন? বসবেন ন| প্রতিজ্ঞ করেছেন নাঁকি ? বলেন্দু ধপ করিয়া বধিয়। পড়িল ।__হৃ'ল তো? প্রতিজ্ঞা করিনি, দেখ | দীপিকা ততক্ষণে নতমুখে ভ্রকুঞ্চিত করিয়া নীরব হইয়া! গিয়াছে । বলেন্দুর ছষ্টি মুহূরের জন্য দীপিকার উপর আটকাইয়া গেল। একটুখানি অচেতন বিস্ময়ের আভাস খেলিয়! গেল চোখে । প্রদীপকে বলিল, আমার সঙ্গে আর দেখ! হবে ন! কিন্ত । আর একেবারে খেলার মাঠে। বেশঃ আমর। চ'লে যাব 1- প্রদীপ বলিল । এবার উঠ্ি।-_বীরেশ্বরের দিকে তাকাইয়! উঠিয়া দাড়াইল বলেন্দু। --বীরেশদার দেরী আছে তো? না, চলুন ।--বীরেশ্বরও উঠ্ঠিরা পড়িল।--ছাপনি কোন্‌ দিকে যাবেন? সোজ। বাসায় এখন ! আমি একটু বাজারের দিকে যাব। আমি দিয়ে যেতে পারি আপনাকে । না না।-_বীরেশ্বর তাড়াতাড়ি আপত্তি করিয়া উঠিল। ওসব কলের গাড়িতে আমার ভ্থবিধে লাগে না। | আবার ! বীরেশ্বর আবার অনুতপ্ত হইল ।--তবে প্রয়োজন হ'লে কোন প্রশ্ন নেই। বলেন্দু কিন্ত কপাহাস্তের তরঙ্গ তুলিয়! দিয়া সশব্দে বাহির হইয়া গেল। ১৬ জমি-শিকড়-আকাশ বীরেশ্বর দরজার কাছে যাইয়া! একবার কিরিয়া তাঁকাইল। বাহিরে বলেন্দুর গাড়ীর গর্জন শোনা গেল। প্রদীপ খাড়! হইয়া উঠিয়া! বলিল, ওই যে ! বলেনদ! গাড়ি স্টার্ট দিলে। দিলেই তে। | বারেশ্বর হাসিয়া কেলিল। তীক্ষু মৃদ্বকঠে আবার বলিল, প্রদীপ যখন বলেনদা বলে, আমার মনে হয় বলদ বলছে । ছোট এক ঝলক হাসির সঙ্গে বীরেশ্বরও আর কোন দ্রিকে না চাহিয় চলিয়া গেল । প্রদাপ আর দীপিক! পরস্পর ভিজ্ঞান্থ দৃষ্টিতে তাকাইল। শেষে প্রদীপ মুচকি হাসিয়। বলিল, বলেনদাকে দেখতে পারেন না বীরেশদ। | হ্যা ।--বলিয়! দীপিকা সধোমুখে পডিতে আরম্ত করিল। ৩ গৌঁড়ানন্দ দাড়াইয়া আশ্রমের গাভী-দোহন পরিদর্শন করিতেছিলেন। সের পাঁচেক হবে মনে হয়, কি বল? তা তো! হবেই ।__-দোহনকারী গোয়াল! বলিল। এ বেলা এর বেশি হয় না।--গোঁড়ানন্দ বলিলেন, বাছুরকে কট দিয়ে দুধ বেশি কর! তাল কথা নয়। নাঃ 1-_-গোয়াল! সমর্থনস্চক ধ্বনি করিয়া উঠিল । এই সময়ে সর্বেশ্বর উপস্থিত হইলেন । আন্ুন।-_-গোৌড়ানন্দ অভ্যর্থনা করিলেন । সবেশ্বর হাতের লাঠিট। ঠেস দিয়! দাড়াইলেন। গাভীটার দিকে দৃষ্টি বুলাইয়া বলিলেন, এ গাইটাই আপনার সবচেয়ে ভাল, বেশ নুলক্ষণ] | দুধও বোধ করি ভালই দেয়? জমি-শিকড়-আকাশ ১৭ এ বেল সের পাঁচেক হয়।-_-গৌড়ানন্দ সবিনয়ে বলিলেন-__ ন, বসিগে। চলুন ।-_সর্বেশ্বর সঙ্গে চলিতে লাগিলেন। চারিদিকে আর একবার দৃষ্টিপাত করিয়া একট! উদ্যত নিশ্বাস চাপিয়! গেলেন। মুছ্ধ ধরা গলায় বলিলেন, আশ্রমের একটা জাছু আছে। গোড়ানন্দ সহাস্তে নিরর্থক প্রশ্ন করিলেন, কেন? আর ফিরে যেতে ইচ্ছা করে না। মনে হয়, আমাদের খষিযুগে ফিরে এসেছি । তেমনই শাস্ত সমাহিত পরিবেশ । তেমনই 1-__হঠাৎ ব্যগ্রকণ্ঠে বলিলেন, ভারতবর্ষ আপনাদের কাছে খণনী স্বামীজী। ভারতের আত্মাকে আপনারাই আজও ধ'রে রেখেছেন, মরতে দেন নি। গৌঁড়ানন্দও গভীর হইলেন । খোল! বারান্দায় একখান! চেয়ার সর্বেশ্বরকে আগাইয়! দিয় নিজে আর একটায় বসিলেন! একটু যেন লজ্জা! বোধ করিলেন । বলিলেন, চেয়ারে ব'সে একটুও আরাম পাই না আমি, কিস্ত আপনারা, যাঁরা আসেন--একটা মাছুর আনব ? হ্যা হা]। খুব ভাল হবে । চেয়ারগুলি এক পাশে সরাইয়। গৌড়ানন্দ একট! মাছুর বিছাইয়! দিলেন। প্রফেসর দত্ত আসিলেন। রামমোহন দত্ব। মাছুর দেখিয়! বলিলেন, আজ কি খাটি ভারতীয় মতে? গৌড়ানন্দ কোন অবাব ন! দরিয়া বলিলেন, বন্ছুন। রামমোহনবাবুর একটু কষ্ট হবে ।__সর্বেশ্বরের দিকে তাকাইয়া বলিলেন। আবহাওয়াটা দত্ত শুঁকিয়া লইলেন। হাসিয়! বলিলেন, কিছু না । আমিও তে! ভারতীয় আত্মারই অংশ। ২ ১৮ জমি-শিকড়-আকাশ সর্বেশ্বর গভীরম্বরে কহিলেন, আমি বলছিলাম স্বামীজীকে। ভারতের খবি-আত্মা আপনারাই আজও বাচিয়ে রেখেছেন একটু পরে যোগ করিয়! দিলেন, মরতে দেল নি। অধ্যাপক ক্ষণকাল নির্বাক থাকিয়৷ দৃষ্টিকটূতার প্রায় সীমানায় আসিয়া বলিয়া উঠিলেন, আত্মা! ঠিক শব্দটাই আপনি ঝাবহার করেছেন। খষি-আত্ম! ! গৌঁডানন্দ বলিলেন, তারতে র সনাতন শাশ্বত আত্মাই খষি-আত্মা । এই তে] বলতে চেয়েছেন আপনি ?--সর্বেশ্বরকে জিজ্ঞাসা করিলেন । কিন্ত রাজসিক ক্ষত্রিয় আত্বাও তো! ভারতের সনাতন ? কাজেই ওট! আলাদ! ক'রে বলাই ভাল হয়েছে ।-__রামমোহন যুক্তি দিলেন । গোড়ানন্দ অস্বস্তি বোধ করিতে লাগিলেন। স্থানচ্যুত হইয়া নীচে চাপ! পড়িয়! যাইতেছেন অন্থতব করিলেন। অথচ কথাগুলিও প্রায় অর্থশৃন্ত অথব1 অবান্তর | বিদ্রপ ?-চকিতে ভাবিলেন একবার । রামমোহন আবার বলিলেন, তা ছাড়! অনার্য তামসিক আত্মা, সেও ভারতের সনাতন। যে আত্ম! প্রচণ্ড আর্ধ-আত্মাকে প্রায় ধ্বংস করে একচ্ছত্র রাজত্ব করছে আজও । সর্বেশ্বর উত্তেজিত হইয়! উঠিলেন।-সুল করছেন আপনি। আত্ম! তামসিক হয় না। রাজসিকও হয় না। তমসায় আচ্ছন্ন হতে পারে। খসি-আত্বা বলতে আমি মুক্ত জ্ঞানী আত্বার কথাই বলেছি । ধার! বাঁচিয়ে রেখেছেন, তারা নমন্থ | বিনীত হাক্ষে গৌড়ানম্দ উদ্যত রামমোহনকে বাধ! দিলেন এবার । বলিলেন, কিন্ত আর বেশিক্ষণ খড়া চালালে সেটাও ম'রে যাবার তয় আছে যে। তিনজনই হাসিয়া উঠিলেন জমি-শিকড়-আকাশ ১৯ রামমোহন বলিলেন, আমি বলতে চাইছিলাম যে, গুধু ভারতের আত্মা বলতে ঠিক কোন্টা বোঝায় বল! মুশকিল । বলেন কি ?-_সর্বেশ্বর সবিদ্বয়ে বলিয়া উঠিলেন । গোঁড়ানন্দ এতক্ষণে সোজা! হইয়া বসিলেন। ওঃ! তাই বুঝি ধবি-আত্ব! শব্দটা এত সমর্থন করেছেন +_-সর্বেশ্বর কহিলেন । ভারতের আত্ম বলতে আপনার কি মনে হয় 1-_-গোৌঁড়ানন্দ সতেজে প্রশ্ন করিলেন । অম্পষ্ট ধোয়ার মত। কিন্ত ধার! বলেন, তাদের অর্থ বৃঝি। কি বোঝেন ?--গোৌড়ানন্দ আবার গুরু গভীর প্রশ্ন করিলেন । বৃঝি যে, তারা বেদ বেদান্ত উপনিষদ গীতা আর ভারতবর্ষ একাকার মনে করেন । ভুল করেন? মারাত্বক ভূল। কতকগুলি পুঁধিমাত্র, তার সঙ্গে ভারতবর্ষের '্ীবনের কোন যোগ নেই । বাইরের জগৎকে আমর! ধাপ্পা দিচ্ছ। নিজেকেও | এই পুঁথি সম্বল ক'রে আমরা ছুনিয়ার স্পিরিচুয়াল লিডার- শিপের পদের জন্ত দরখাস্ত করেছি । কেউ কেউ পিঠ চাপড়াচ্ছে। অতি হান্তকর পরিস্থিতি । সর্বেশ্বর উত্তেজনায় বাক্যহীন হুইয়! গৌঁড়ানন্দের যুখের দিকে 'তাকাইলেন। গোঁড়ানন্ব স্থিতপ্রজ্ঞ-তঙ্গীতে নৃদুহান্ত করিয়! বলিলেন, অনেকগুলি তীক্ষ শব্দ স্থষ্টি করলেন আপনি ॥। দেশকে ভালবাসেন ব'লে রাগ ক'রে বলছেন হয়তো! | কিন্ত সত্য বলেন নি। সত্যত্ষ্টা খবিদের কথা বাদ দিলাম । চেতন্ত, রামকৃষ্ণ, গান্ধী এ যুগের কথ! । জীবনের সজে যোগ নেই ? ২০ জমি-শিকড়-আকাশ রামমোহন তীক্ষুকণ্ে বলিয়া উঠিলেন, অবতারের লিষ্টিটা আর একটু বেড়েছে । কিন্ত নতুন দেবতা আর মন্দিরের সংখ্যা বৃদ্ধি হয়েছে মাত্র। জীবন একটান| অব্যাহত নিজের খাতেই চলেছে । একটুও এদিক ওদিক হয়নি তো! সোল অব ইওিয়! !__রামমোহন হাস্য করিলেন ।-_পৃথিবী এখন ভারতের দিকে তাকিয়ে আছে-_স্পিরিচুয়াল লিডার ভারত পথ দেখাবে ! নিশ্চয়ই দেখাবে । সর্বেশ্বর উচ্চকঠে ঘোষণা! করিলেন । নিজে দুচোখে কিছু দেখতে পাচ্ছে না যে! অন্ধের মত ধাক্কা খেতে খেতে এগুচ্ছে। কিন্ত এগুচ্ছে । গোঁড়ানন্দ গ'জিয়| দিলেন । খানার দিকে কি ন! ঠিক নেই-_রামমোহন হাসিয়া জবাব দিলেন । গৌড়ানন্দ দৃঢ় বিশ্বাসের জোরে বলিলেন, সে ভয় নেই। আপনার ওই অবতার, দেবত1 আর খধিদের নিফম্প আলে! জ্বলছে সম্মুথে । দিক ভুল হবার তয় নেই । সবেশ্থর উচ্ছাসপূর্ণ দৃষ্টিতে গৌড়ানন্দের দিকে তাঁকাইলেন, বলিলেন, এর ওপর কোন কথ! নেই। রামমোহন যেন হঠাৎ অশেষ ক্লান্তি বোধ করিলেন । একটুখানি হাসিয়া নীরব রহিলেন। গৌড়ানন্দ বিজয়-গৌরবে সন্মিতবদনে অপেক্ষা করিতে লাগিলেন। কিন্ত সবেশ্বর বেশি সময় দিতে রাজি হইলেন না। গোঁড়ানন্দকে বলিলেন, কই, আপনার লেখাটা! দেখাবেন ন!? ওঃ, ই11---গৌড়ানন্ব উঠিয়! খাতাখান! আনিয়া দিলেন । বলিলেন, নিয়ে ধান। কিন্তু বেশি দেরি করবেন না। পাঠাতে হবে । সবেশ্বর নামটা পড়িলেন। গীত! আযাও দি মভার্ণ ওয়ান্ড |. লাষ জমি-শিকড়-আকাশ ২১ পড়িয়া অধিকতর শ্রদ্ধার ভাব ফুটিয়! উঠিল চোখে মুখে । নামের মধ্যেই আইডিয়াটা অনেকখানি ফুটে উঠেছে মনে হচ্ছে ! অস্তত তাই চেয়েছি আমি ।--গৌড়ানন্দ বলিলেন। চমৎকার নামট! হয়েছে ।- সর্বেশ্বর পাতা উল্টাইতে লাগিলেন । গোৌড়ানন্দ কিছু বলিবার জন্ত বলিলেন, রামমোহনবাবু পড়েছেন। ভাল হয়েছে লেখা ।--রামমোহন জড়ত৷ ভাঙিয়া বলিলেন, শুধু ভারতীয় নয়, ইউরোপীয় দর্শনও উনি সমগ্রভাবে বিচার করেছেন। বেশ পাণ্ডিত্যের সঙ্গেই ফরেছেন। তবে-| একটু হাসিয়া! বলিলেন, ওই-ব্যাক টু গীতা । আবার গভীর হইয়া বলিলেন, কিন্ত লেখা হিসেবে সার্থক হয়েছে । আমার মনে হয়, ভালই চলবে । আনকাল এসব বইয়ের কাটতি অনেক বেড়েছে সব দেশে । নাম-কর| কাউকে দিয়ে একট] ভূমিকার মত লিখিয়ে নিতে পারলে সুবিধে হয় । রামমোহনবাবুর আপব্ি শুধু “ব্যাক টু গীতা"য়।_ গৌড়ানন্দ বলিলেন । কতগুলি অস্থবিধে আছে কিনা ।__রামমোহন বলিলেন, ব্যাক ঢু একবার আরম করলে আর শেষ নেই যে! ব্যাক টু বুদ্ধ, শ্রীষ্ট, কন্ফুসিয়াস। অফুরত্ত। এক আমাদেরই কত রকম আছে। শেষ কোথায় ? তার চেয়ে সমস্ত পৃথিবীর জন্তে একট! ফরোয়ার্ড কিছু করা যায় না? গৌড়ানন্দ দৃঢন্বরে কহিলেন, সমন্বয়? তাই তো! আমি চেষ্টা করেছি রামমোহনবাবু। বেদান্তের ভিত্তিতে ।--রামমোহন হাসিয়া ষলিলেন, যাই হোক, বইখানার আদর হবে এ আমি বলতে পারি । বিক্রি ভাল হবে। বিক্রি ভাল হোক, এ আমি চাইই তো।-_গোড়ানন্দ স্পষ্ট উক্তি ২২ জমি-শিকড়-আকাশ করিলেন। আমার আশ্রমেরও টাকার প্রয়োজন | আর যার! কিনবে, তার! পড়বেও নিশ্চয়ই ? পড়বে । সেই কথাই বলছিলাম ।--রামমোহন বলিলেন । কিনলে তো! আর না প'ড়ে ফেলে দিতে পায়ে না, কি বলেন? --সর্বেশ্বর কহিলেন । গোৌডানন্দ হাসিয়! উঠিলেন। রামমোহন ক্ষণকাল নীরব থাকিয়! বেদনার স্থরে বলিলেন, আমাকে আপনারা স্ুল বুঝবেন না। আমি ঠিক-ঠিকমত বলতে 'পারিনি হয়তো । না না ।--গোঁড়ানন্দ এবং সর্বেশ্বর অহৃতপ্ব কঠে একসজে বলিয়া উঠিলেন। গৌঁড়ানন্ব সর্বেশ্বরকে লক্ষ্য করিয়া আরও হফলিলেন, জানেন? গর কাছে আমি অনেক খনী। পরামর্শ দিয়ে, বই দিয়ে, নানা রকমে উনি আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন। আমি ম্বীকার করেছি ভূমিকায় । সর্বেশ্বর বিদ্িত হুইলেন। রামমোহন বিনীত প্রতিবাদ করিয়া! বিদায় চাহিলেন। চলুন । আমিও যাচ্ছি ।--সর্বেশ্বর বলিলেন । বিদায় লইয়া! উভয়ে একসঙ্গে রওনা! হইলেন। পথে রাম্মোহনই প্রথম কথা ৰবলিলেন। বিশ্বাস করুন মাস্টার মশাই, শ্বামীজীকে আঘাত দিয়ে কোন কথ। বলার ইচ্ছে আমার এতটুকু ছিল না। কিন্ত- আমার যেন কোন স্বাধীনতাই নেই ।--অনেকটা যেন আপন মনে বলিতে লাগিলেন, যা বলতে চাই নে, কে ষেন ঠেলে বার ক'রে দেয় মুখে। শরীর ? সর্বেশ্বর সহসা কোন জবাব দিতে পারিলেন ন1। জমি-শিকড়-আকাশ ২৩ অবশ্থ এও সত্যি যে, মনে মনে যে তাবে ভাবি, আমি তাই বলেছি। তবে তো! আপনার মনই বলেছে ।--সর্বেশ্বর এবার বলিলেন। কিন্তু তা তো নয়। ওতাবে ন! বলার সংকল্পও তো আমার মনেরই! ত| নর ।--হঠাৎ আবার বল্লিয়। উঠিলেন, হবে হয়তো । জমি সংকল্প করি, মন ভেঙে দেয়। গভীর দার্শনিক সমস্যা এটা । কাজেই এর মীমাংসা নেই বোধ হয়।--সর্বেশ্বর বিষয়োচিত গাভীর্যের সঙ্গে জবাব দিলেন। ন| না ।--ছাসিয়! হালক। শ্ররে রামমোহন বলিলেন, দার্শনিক সমন্য! ছিদাৰে আনি বলিনি কিন্তু। নিতান্তই আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার । দর্ঁনিক? নান! । সর্বথরও হসিয়। নিঃশব্দে হাটিতে লাগিলেন । এক সময়ে বলিলেন, এক দিক নিয়ে স্বমীজীর সঙ্গ আপনার মিল আছে। আপনিও অবিবাহিত সুখী মাহৃয। সংসারের ঝামেলা নেই। মুক্ত। বিয়ে করিনি, কিন্তু সংসার তো! আমার আছেই মাস্টার মশাই। সর্বেশ্বর হাসিলেন একটু ।-_বিয়ে-কর। সংসার অন্ত রফম ব্যাপার রামমোহনবাবু। হঠাৎ রামমোহন থামিয়া গেলেন। বলিলেন, আচ্ছা, নমন্কার | আমার এই পিকে একটু কাজ আছে।--বলিয়! উত্তরের অপেক্ষা না করিয়াই ক্রত পাশের রাস্তায় অগ্রসর হইয়। গেলেন। সবেশ্বির অবাক হইয়া সেই দিকে কিছুকাল তাকাইয়! থাকিয়। আবার চলিতে লাগিলেন। & ছোট শহরে হুনুস্থল পড়িয়া গেল সকালবেলায়। বলেন্দু প্রকাণ্ড বাঘ মারিয়া আনিয়াছে। সকাল হইতেই অবিরাম লোক আসিতেছে বলেন্দুর বাঁড়ি। বলেম্দু অমায়িক হাসিমুখে দেখাইতেছে এবং শিকার-কাহিনী বর্ণনা করিতেছে। প্রদীপের সঙ্গে দীপিকাও আসিয়! দেখিয়া গেল। একবার বাঘ, আর বার বলেন্দুর দিকে তাকাইতে দীপিকার চক্ষে যাহা ফুটিয়া উঠিতেছিল, বলেন্দু দেখিয়াছে এবং বিজয়ী বীরের প্রাপ্য জয়মাল্যের মত হেলায় গ্রহণ করিয়াছে । প্রদীপ ফিসফিস করিয়া জিজ্ঞাস! করিল, পুরুষ-বাঁঘ নাকি বলেনদা ? বলেন্দু জোরে হাসিয়। উঠিয়া স্পষ্ট করিয়। বলিল, না, মেয়ে-বাঘ। »-বলিয়া দীপিকার চক্ষু দুইটি দখল করিয়া ফেলিল। দীপিকার মনে হইল, মৃত বাঘট সে নিজেই । ফিরিবার পথে প্রদীপ বলিল, শক্তিমান পুরুষ বলেনদ]। দীপিকা কোন জবাব দিল ন1। বীরেশদাও তো! ছিলেন সঙ্গে ?-_খানিকক্ষণ চুপচাপ থাকিয়া প্রদীপ আবার বলিয়া উঠিল, ডাকে তো! দেখলাম না? দীপিক। মৃদুত্বরে বলিল, ঘুমুচ্ছেন বোধ করি এখনও | নয়তো বই. নিয়ে বসেছেন এতক্ষণ । চল্‌, দেখে যাই বীরেশদাকে । যাবি? কি হবে? দীপিক1 হতাশ কণ্ঠে বলিয়া! উঠিল। জমি-শিকড়-আকাশ ২৫ প্রদীপ আশ্চর্য হইয়। ফিরিয়। চাহিল। নিজের উপর রাগ হইল দীপিকার । অর্থহীন। মুহ্্ে বদলায়! বলিল, চল, যাই । সর্বেশ্বরের গীতাপাঠের শব্দে বীরেশ্বরের কাচা ঘুম ভাঙিয়া গেল। অতৃপ্ত চক্ষে জাল! এবং ক্লান্তি লইয়াও ধড়মড় করিয়! উঠিয়া বসিল। ছুই হাতে চক্ষু কচলাইতে কচলাইতে বাহিরে আসিয়। দীড়াইল। শুনিতে ভালই লাগে সংস্কৃত শ্লোক । যুক্তিকে অসার করিয়া দেয় এত জোরের সঙ্গে বলা, এত কবিত্ব !- বিশ্লেষণ করিয়! ফেলিল বীরেশ্বর | হঠাৎ যেন তাডা খাইয়া ধাবিত হইল। আধ ঘণ্টার মধ্যে বাজে সময় নষ্ট করার কাজগুলি সারিয়৷ আসিয়! বীরেশ্বর বই খুলিয়৷ বসিয়! গেল। কিন্তু বিশ্বাসঘাতকতা! করিল চক্ষু । চক্ষু বুজিয়া আসিতেছে । কিছুক্ষণ মন আর চক্ষুর ধস্তাধস্তির পরে অবশ মাথাট। নিঃশব্বে টেবিলের উপর পড়িয়া! গেল। ঘুমে । ঘণ্টাখানেক পরে স্ুনয়ন! ডাকিতে আসিয়া পা টিপিয়! টিপিয়! ফিরিয়৷ গেলেন। আরও কিছুক্ষণ পরে প্রদীপ আর দীপিকা আসিয়৷ পৌছিল। দীপিক! ডাকিয়! লইয়া আফিল সুনয়নাকে । ক্ষণকাল দীড়াইয়া দেখিতে দেখিতে দীপিক! খিলখিল করিয়! হাসিয়া! উঠিল। বীরেশ্বর জাগিয়| উঠিয়াই শশব্যস্তে বইয়ের পাতা উল্টাইতে লাগিল। পরক্ষণে হাসির শব্ট। কান হইতে মস্তিষ্কে আঘাত করিল, যখন মুখ তুলিয়! দেখিল সকলকে | চমকিয়! একটু যেন গটাইয়! গেল। অপ্রতিত হাসির সঙ্গে অভ্যর্থনা! করিল প্রদীপদের । ২৬ জমি-শিকড়-আকাশ দীপিকা বলিল, আমি দাদাকে বলেছিলাম, হয় ঘুমুচ্ছেন, নয়তে? পড়ছেন । দেখছি, আপনি ছুটোই করছেন । ও, হ্থ্যা।-_বীরেশ্বর সলজ্জ জবাব দিল । স্থনয়না বলিলেন, ইচ্ছে ক'রে তো ঘুমোয় না। চোখ ভেঙে পড়লে ঠাকুরপো! কি করবে? বাঘ দেখে এলাম বীরেশদা | প্রদীপ প্রথম কথা বলিল । ওঃ! তোমর!| বাঘ দেখতে বেরিয়েছ বুঝি 1-_বীরেশ্বর বই বন্ধ করিয়া ফেলিল। তাই বল।- দীপিকার দৃষ্টি খুঁজিতে লাগিল--বৃথ]। ছিতীয়বার বলিল. তাই বল। হ্যা, বলেম্দুবাবুর হাত খুব ভাল । এক গুলিতেই শেষ করেছেন অত বড বাঘটাকে । প্রদীপের শরীরট! যেন চনচন করিয়! উঠিল ।-_সত্যি, কি হাত! বীরেশ্বর কঠিন কণ্ঠে বলিল, শুধু হাত নয় ; গায়ে বলও আছে বঞ্ন্দে বাবুর । অসাধারণ! দীপিক! এবার জানালার দিক হইতে ফিরিয়া! তাকাইল। গ্ুনয়না তাহার হাত ছুইট1 ধরিয়! বলিলেন, তোমার সঙ্গে গল্প করব, চল । কাজ করব আর গল্প করব। বীরেখ্বর আরও কিছু বলিবার জন্য গুছাইতেছিল । বল! হইল না। হ্ুনয়না দীপিকাকে টানিয়া লইয়া! গেলেন। বীরেশ্বর নীরব হইল। প্রদীপ আলমারির বইগুলি নাড়িয়! চাঁড়িয়া দেখিতে লাগিল কিছুক্ষণ পরে বীরেশ্বর হঠাৎ উঠিয়া! বলিল, আমাকে একটু বেরুতে হচ্ছে প্রদীপ। তোমর! বউদ্দির সঙ্গে গল্প কর। একসঙ্গেই যাচ্ছি, চলুন না| ।-_প্রদদীপ বলিল, দীপিকা! আস্মক। আমার সময় নেই যে।--পায়চারি করিতে করিতে বলিল বীরেশ্বর, তা ছাড়া আমি অন্ত দিকে যাব | তুমি বস প্রদীপ । জমি-শিকড়-আকাশ ২৭ বীরেশ্বর বহির হইয়া গেল। প্রদীপ অবাক হইয়া মুছূর্তকাল যূঢ়ের মত তাকাইয়! থাকিয়া দীপিকাকে ডাকিল। ম্ুনয়ন! এবং দীপিকা উভয়ে চুটিয়া আমিল। বীরেশদ| চ'লে গেলেন ।--প্রদীপ অসহায়ের মত বলিল। চ'লেগেল 1__স্থনয়ন! ব্যস্ত হইয়া! পড়িলেন ।--দেখেছ ? না! খেয়েই চ'লে গেল। জরুরী কাজ আছে বোধ করি ।-_-বলিয়া দীপিকা আলমারির কাছে গিয়া বই দেখিতে আরম্ভ করিল । তোমরা কিন্তু ব'স তাই ।--সুনয়না বলিলেন, আমি এক্ষুনি আসছি । সবই প্রায় নতুন বই ।-_দীপিকা বলিয়া উঠিল। স্থনয়ন! ঘুরিয়া দীড়াইয়া বলিলেন, যা রোজগার করে, অধে'ক টাকাই তো! ৰই কিনতে যায় ঠাকুরপোর ।--বলিয়া রান্নাঘরের দিকে চলিয়া গেলেন । বীরেশদ1 ও-রকম ক'রে চ'লে গেলেন কেন বুঝলাম ন1।--প্রদীপ বলিল। কি রকম দীপিকা প্রশ্ন করিল। মনে হ'ল যেন-_। কথাবার্ড| নেই, হঠাৎ বেরিয়ে গেলেন। প্রদীপের দিকে পিছন করিয়। ঈাড়াইয়। ছিল দীপিক! ৷ মুখ টিপিয়া হাসিল একটু আড়ালে । বলিল, কিছু ব'লে গেলেন না? | শুধু বললেন, বেরুতে হবে, কাজ আছে। দীপিকা কোন কথা না বলিয়া! একটার পর একটা বই খুলিয়া একটু দেখিয়া রাখিয়া দিতে লাগিল । প্রদীপ তাড়! দিল, চল্‌। আর দেরি করছিস কেন ? বীরেশদার বউদি বসতে বললেন যে। জলখাবার করছেন। ২৮ জমি-শিকড়-আকাশ কেনরে? না খেয়ে যেতে দেবেন না! ।-_বলির দীপিকা ঘুরিয়া, আসিয়। বসিল। মাস্টার মশাই আসছেন ।- প্রদীপ দেহ্তে পাইয়া! বলিল । সর্বেখ্বর আসিয়! প্রদীপদের দেখিয়া দরজার সম্মথে থামিলেন | বলিলেন, বীরেশ নেই বুঝি? ন1।-_বলিয়! প্রদীপ ও দীপিক1 উভয়েই দাড়াইল। বস ব'স।--সর্বেশ্বর বলিলেন। আরে, তোমরা দেখ নি, বলেন্দু মস্ত বাঘ মেরে এনেছে একট! ? হ্যা, দেখে এসেছি আমর1 ।--দীপিকা বিনীত জবাব দ্রিল। আমিও দেখে এলাম। মস্ত বড় বাঘ। রয়াল বেঙ্গল বোধ হয়। বলেন্দু ভাল শিকারী হয়ে উঠেছে তো !--সহর্ষে বলিতে বলিতে সর্বেশ্বর ভিতরের দিকে গেলেন । পরক্ষণে আচমকা বাঁরেশ্বর আসিয়৷ প্রবেশ করিল ঘরে । কৈফিয়ৎ দিতে গিয়া আক্রোশের সুর বাহির হইল । বলিল, কাছেই এক ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখ! করতে গিয়েছিলাম | বাসায় নেই এখন । পরে যেতে হবে। বলা শেষ হওয়ামাত্র মুখমণ্ডল আরও কুঞ্চিত হুইল বীরেশ্বরের | তীক্ষ দৃষ্টিতে চাহিয়! দেখিয়া লইল, দীপিকা হাসিতেছে কি না! ধরিতে পারিল না। ভাল হয়েছে ।--প্রদীপ বলিল, বউদ্দি আমাদের ঘরে বন্ধ ক'রে কোথায় যে চ'লে গেলেন ! চুপচাপ ব'সে আছি আমরা । তাই নাকি ?--বীরেশ্বর তাড়াতাড়ি বলিল, আচ্ছা, ডেকে আনছি আমি। দীপিকা বলিল, আপনি বন্থুন না । উনি আমবেন এখুনি । আপনার জমি-শিকড়-আকাশ ২৯ তে কিছুই খাওয়। হয় নি এখনও ? বলছিলেন বউদি। শান্ত দৃষ্টিতে তাকাইল বীরেশ্বর। দীপিকাও চক্ষু সরাইয়া লইল ন৷ এবার । স্থনয়ন! আসিয়! তিনজনকেই ডাকিয়! লইয়! গেলেন। বিদায় লইয়| পথে নামিয়! দীপিকা হঠাৎ বলিল, বই লিখছেন। কে ?- প্রদীপ বোকার কত প্রশ্ন করিয়াই পরক্ষণে সংশোধন করিয়। লইল ।--ও, বীরেশদ। ? দীপিকা! শুধু ঘাড় নাড়িল। হ্যা।--প্রদীপ বলিল, দেখেছি খাত। । দীপিকা একটু মধুর হাসি মিশাইয়! বলিল, এঁ রকম পাগলাটে কবি- কবি গোছের মানুষ তে।! বড় লেখক হবেন আমার মনে হয়। কিন্ত কবিতা তে! লিখছেন না ! কি মাথামুণ্ লিখছেন, এক লাইনও বোঝা যায় না। দীপিক] সগর্বে হাঁসিয়। বলিল, বোঝ] যায় না? খুব উচু দরের লেখা হচ্ছে বোধ হয়। প্রদীপ সমর্থন করিল ভাবটা । ৫. পিতৃহীন প্রদীপ ও দীপিকার মাতা শাস্তিলতাই এখন তাহাদের অভিভাবিক! | দীপিকার খেল! দেখিতে যাওয়ার প্রস্তাবে তিনি আপত্তি করিলেন ।-_মেয়েছেলে আবার ফুটবল খেল! দেখে কি? বাঃ 1--দীপিকা ভয়ে অস্বস্তিতে বলিল, দাদার সঙ্গে তো! যাচ্ছি। তা ছাড়া বলেনবাবু অত ক'রে অন্রোধ ক'রে গেছেন, না. গেলে অসন্তষ্ট হবেন ন! ? ৩০ অমি-শিকড়-আকাশ শাস্তিলতা দমিয়া গেলেন। কিন্ত কথা বন্ধ করিলেন না।-_ বড়লোকের মেয়েরা যায়, তাদের শোভ1 পায়। গরিবের মেয়ে, ফুটবল-খেলা! দেখে! কর্গে যা! খুশি ।--বকিতে বকিতে সরিয়৷ গেলেন । খেলার মাঠে যাওয়ার রাস্তার ধারে এক চ-কোম্পানির অফিসের বারান্দায় দীড়াইয়া ছিল বীরেশ্বর। দীপিকার সঙ্গে অনিবার্ধভাবে চোখাচোখি হইল। | প্রদীপ ডাঁকিতে গিয়া! দীপিকার তর্জনীর মু আঘাতে থামিয়া গেল। বীরেশ্বর তীক্ষ অপলক দৃষ্টিতে তাকাইয়! রহিল। দীপিকার শরীর এবং চক্ষু সম্ুচিত হইয়া এতটুকু হইয়া গেল যেন। কিছুদূর অগ্রসর হইয়া বীরেশ্বরের ক্ষেত্রসীম! পার হইয়া! গেলে আবার সাহসী হইল দীপিকা । ফিরিয়া! চাহিতে দেখিল, বীরেশ্বর তখনও তাকাইয়! আছে। একটা! বিশ্রী অস্বস্তিতে ভরিয়৷ উঠিল দীপিকার শরীর । ধীরে ধীরে অফিসের মধ্যে প্রবেশ করিল বীরেশ্বর | কি মশায়? প্রৌঢ় তদ্রলোকের কাগজপত্র হইতে মুখ তুলিয়! দরাজ আওয়াজে বলিয়া! উঠিলেন, বেশ, আর পাত্তাই নেই আপনার ? নিমেষের মধ্যে জাছ্মস্ত্রের ক্রিয়। হইল কথ! কয়টিতে । পেটের তল! হইতে যেন বীরেশ্বর চমৎকার এক বীরেশ্বরকে বাহির করিয়া দিল। দুরে সুর মিলাইয়! সে বলিল, আর বলবেন না, স্থবোধবাবৃ। 'নানান ঝামেলায় আর আসতেই পারি নি। কিন্ত আমার ঠিক মনে "আছে হুবোধবাবু। মনে থাকলেই ভাল ।-_নুবোধবাব্‌ প্রবোধ মানিলেন না। মনে আছে ঠিক। স্ভুলব কেন? আবার আসতে হবে না? জমি-শিকড়-আকাশ ৩১ ব্যবসা ক'রে খাই যখন? এক দিনের তো কাজ নয়?--বীবেশ্বর পাঁক! ব্যবসায়ীর মত বলিয়া! গেল। সেই তো৷ তাবি। পাই নি, বুঝলেন না? পার্কার ফিফটিওয়ান কারও স্টকে নেই। অর্ডার দিয়ে রেখেছি আমি । অবলীলাক্রমে মিথ্যা! কথাগুলি বলিয়া গেল বারেশ্বর। শ্বোধ লাহিড়ীর সঙ্গে নাড়ীর যোগস্থত্র বাধ! আছে যেন! মনে হইল তার। কি যে বলছেন, মশায় !--লুবোধ লাহিড়ী ধাগ্পা দিঙ্প, কালকে আমি নিজে দেখলাম টাউন স্টোসের দোকানে। বীরেশ্বর হাফ ছাড়িল। টাউন স্টোসের খবরট! সৌতভাগ্যক্রমে তাহার জান! ছিল। আনন্দে হে।-হো! করিয়া হাসিয়! উঠিল। বলিল, এটা তে। ভুল কথ! বললেন স্থুবোধবাবু। আমি আজও ওদের কাছে খবর নিয়েছি । এক মাস হ'ল ওদের স্টক ফুরিয়ে গেছে। কোথায়? টাউন স্টোস। আরে, না না।-_ম্থবোধ তাড়াতাড়ি সংশোধন করিলেন। টাউন স্টোসকে বললে? দাসব্রাদাস"। দাস ব্রাদাসের দোকানে । দাস ব্রাদাস+1- বীরেশ্বর একটু অনিশ্চিত কণ্ঠে বলিল, ওদের এঁ যে, কি নাম ওর? আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, বললে যে এখনও আসে নি? কবে? তবে স্্যা, আমি জিজ্ঞাস! করেছিলাম পরশু দিন। কাল যদি এসে খাকে বলতে পারি নে। আজকেই খোজ নেব আমি। এসেছে ।__স্থবোধ লাহিড়ী বলিলেন, অনেক নতুন কলম এসেছে ওদের । অবস্ত ঠিক ফিফ.টিওয়ান আমি দেখি নি--বুঝলেন না । ৩২ জমি-শিকড়-আকাশ বুঝেছি ।--বীরেশ্বর গাভীর্যের সঙ্গে জবাব দিল, আচ্ছা, আজকেই দেখব আমি । একটু থামিয়! নীচু গলায় বলিল, স্থবোধবাবু, কোদালি আর ছুরির অর্ডারট! কিন্ত আমাকে করিয়ে দিতে হবে । আপনাকে দিয়ে আমার লাভ কি মশায়? কেন ?--বীরেশ্বর কালো মুখে বলিল, আপনার প্রাপ্য তো আমি কোনদিনই ফাকি দিই নি। ৮ ন! না। তা আমিবলছি নে।-সুবোধ পরম বিবেচকের মত বলিলেন, তা ছাড়া দর-কষাকষি ক'রে চশমখোরের মত প্রাপ্য আদায় করা আমার স্বভাব নয়, তা তে। জানেন । ত1 তো! জানি। বদ্ধুবান্ধবের উপকার করব একটু, এর আবার দরাদরি কি? তা তো৷ বটেই। আরে মশায়, আর সকলের মত তাই যদি পারতাম, তবে বাড়িতে এন্দিন অট্টালিকা উঠে যেত । হঠে-হে। গল! আরও ছোট করিয়া সুবোধ লাহিড়ী বীরেশ্বরকে বিশ্বাসের ভাগী করিয়া বলিলেন, জানেন, জটুবাবু আমাকে সিক্স পাসেন্টি অফার দিয়ে গেল এই অর্ডারের জন্যে | তাই নাকি? হ্যা। কিন্ত আমি ব'লে দিয়েছি যে, তা পারব না । সব কাজই আপনাকে দিয়ে দেব -আর কাউকে দেখতে হবে না? সকলের সঙ্গেই যখন একট! ভালবাসা হয়েছে । | তাই তো। সেই তো কথ1।--বীরেশ্বর অন্ুতর করিল নাড়ীর ষেই জমি-শিকড়-আকাশ ৩৩ যোগস্থত্রটা ক্রমশ ছিন্ন হইয়া আসিতেছে । বাকৃশক্তি একেবারে রুদ্ধ হইয়। যাওয়ার ভয়ে তাড়াতাড়ি আবার বলিল, তা ছাড়া আপনার প্রাপ্য তো আমিও-_মাঁনে, দেবই । আচ্ছা, উঠি এখন। কাল আবার আসব । বাহির হইয়া বীরেশ্বরের মুখ দিয় প্রথম চাপা শব্দ নির্গত হুইল, বদমাস ! পথিক একজন থমকিয়! দ্াড়াইল | আপনাকে নয় |-__বলিয়! বীরেশ্বর অগ্রসর হইল । পথিক পিছন হইতে ক্ষণকাল তাকাইয়! থাকিয়৷ মুটকি হাসিয়া চলিয়! গেল। চোর !-কয়েক পা অগ্রসর হইয়! আবার বলিল বীরেশ্বর | বলিয়াই চারিদিকে তাকাইয়! দেখিল এবার । কেহ শুনে নাই! মিনিট পাঁঠেক চলিবার পর আবার দ্ীড়াইতে হইল বীরেশ্বরকে | এট৷ খেলার মাঠের রাস্ত! | যে রাস্তায় দীপিকা গিয়াছে । সবেগে ঘুরিয়া বিপরীত দিকে ধাবিত হইল । কিন্ত এ পথে আসিয়াও মারাত্বক ভুল করা হইয়াছে, বীরেশ্বর বড় বিলম্বে বুঝিতে পারিল । রাস্তার পাশের এক দোকান-ঘর হইতে কে একজন ডাকিয়া! উঠিল, ও মশায়! শুনে যাঁন। ঘরে ঢুকিতে বীরেশ্বরের দেহটা যেন লজ্জায় ছোট হইয়৷ গেল। কিন্ত নির্লজ্জের তগীতে বলিল, আমি বড় লজ্জিত কুঞ্জবাবু। কিন্ত আমি আর কদিন লজ্জ! করব বলুন ? ূ কঠিন কথায় বীরেশ্বরের সহজ হইয়৷ আসিল অবস্থাটা । বলিল, কি করব বলুন? পুরো টাকা আযাড.ভাব্স করেছি । আঁজ কাল ক'রে ৩ ৩৪ জমি-শিকড়-আকাঁশ করে শেরারগুলো দিচ্ছে না । নাঠকলে তো লোক চেন! বায় না। বাই হোক, আর ছুটো দিন সময় দিন কুঞ্জবাবু। যা হয় একটা ব্যবস্থা করবই। না হয় তো আপনার টাকাই আমি ফেরত দিয়ে যাব। এটা! কি কোন কথা হ'ল বীরেশবাবু? আপনি বলুন, টাক! দিয়েছি টাকা ফেরত নিতে ? নানা । তা তো নয়ই, ত1 তো! নয়ই । আচ্ছা, তিন-চার দিনের মধ্যেই আমি ব্যবস্থা করছি । আপনি ভাববেন না । আবার তিন-চার দিন হয়ে গেল ?--তীক্ষধী কুঞ্জবিহারী প্রশ্ন করিলেন এ দু-তিন দ্রিন আর কি। আচ্ছা বীরেশ্বর তাড়াতাড়ি বাহির হইয়া! আসিল। অত্যন্ত ক্রোধে এবার নিঃশব্দে চলিতে লাগিল । একটা বোঝাপড়ার দৃঢপ্রতিজ্ঞার ছাপ মুখের উপর ফুটিয়। উঠিতেছিল। এই যে, বীরেশবাবৃ। চলুন, একসঙ্গে যাওয়া যাক। কোথায় ?-_-আগে চকিত প্রশ্ন করিয়া পরে চাহিয়৷ দেখিল বীরেশ্বর। -_কে, মাস্টার মশায় নাকি ? হ্যা। ছটা বাজে, মিত্তির-বাডি যাচ্ছেন নিশ্চয়ই ?--এক মুখ হাসিলেন মাস্টার মশাই । ৰ বীরেশ্বরের মুখ লাল হইয়া! উঠিল । কিন্ত হাসিতেও হইল । বলিল, হ্য। আপনার সঙ্গে যখন দেখা হয় ওখানে রোজই, 'না” বলি কি ক'রে বলুন ? দেখা হবেই! আমারও যে এ বছর অন্তত পঁচিশটে টাকা না বাড়ালেই চলছে না। আর বাড়াতে পারে হিরণ মিত্তির | জমি-শিকড় আকাশ ৩৫ রোজ ঘণ্টাখানেক দিতে পারলে হয়ে যাবে আঁপনার । আমি যে আধ ঘণ্টার বেশি পারছি নে। তাঁও তো রেগুলার নয়। রেগুলার হওয়া চাই। ইতিহাস দেখুন না। চোখের সামনে কজন হড়হুড় ক'রে উঠে গেল। কিন্তু রেগুলার অন্তত ঘণ্ট। খানেক চাই । বীরেশ্বর এবার সহজভাবে প্রাণ খুলিয়া হাসিল ! হিরণ মিত্রের বাড়ির গেটের সামনে আসিয়। বীরেশ্বর হঠাৎ বিদ্োহ করিল। বলিল, আপনি যান মাস্টার মশাই । আমি আজ পারব না। শরীরটা! ভাল নেই। গা ঘিনঘিন করছে? ভাল কথা নয়। আস্ন না, কথাবার্তা বিশেষ না! বলতে পারেন, শুধু হেঁ-হে' ক'রে যাবেন । বীরেশ্বর হাসিল ।--তাও পারব ন।। অবশ্ঠ ন! যাওয়। পর্যস্ত আমার পেমেন্টের অর্ডার পাব না তাঁও জানি । কিন্ত-__। আচ্ছা, নমস্কার । বীরেশ্বর আর দাঁড়াইল না । ক্লান্ত দেহটা আর টানিতে অক্ষম হইয়া বীরেশ্বর একট! চায়ের দোকানে প্রবেশ করিল বিশ্রামের আশায় । অন্তত মনের বিশাম। কোন্টা যে বেশি ক্লান্ত বিচার করিতেও আলম্ত বোধ হইল যেন। শৃম্তমনে চায়ের বাটিতে আরামে চুমুক দিতে দিতে নিঃশেষ করিয়া খালি বাটিটার দিকে ক্ষণকাল তাকাইয়! রহিল। চমক ভাঙিল বলেন্দুর নামোচ্চারণে । কে একজন বলিতে বলিতে আসিল, বলেন্দু একাই তিনটে দিয়েছে । ৬ তিনটে ?--আর একজন | এখনও মিনিট পনরো। আছে তো! শুধতে পারে |-_-তৃতীয় | দূর! গুধবে কি? কটা খায় আরও, দেখ না। কিচ্ছু না, বাজে টিম। ৩৬ জমি-শিকড়-আকাঁশ ন! হ'লে হাফ টাইমে তিনটে গোল খায় ? তিনটে কোথায় ? চারটে খেয়েছে তো । বলেন্দু তিনটে আর বিন্ধৃ একটা । পচা টীম । টীম খুব পচা নয়। কিন্তু হাফ-ব্যাক নেই যে। হাফ-ব্যাক নেই কেন? আছে। কিন্তু না থাকাই ভাল ছিল । বীরেশ্বর হঠাৎ উঠিয়া চায়ের পয়সা দিয়া দ্রতপদে বাহির হইয়া প্রড়িল রাস্তায়। ছুটিতে ছুটিতে তৎক্ষণাৎ করণীয় নানা কাজের তালিকায় মনটাকে পধুদস্ত করিয়া ফেলিতে লাগিল ।-_সাগরমল ! এখুনি একবার যাওয়া দরকার । ভাববে কি? নিশিকান্ত! নিশিকাস্তের সঙে বোঝাপড। করতে হবে । আজকেই । শেয়ার সে দেবে কি না' আর তারিখ নয়। আজকেই চাই। হিরণ মিত্রের সঙ্গেও একবার দেখ! করা খুব উচিত ছিল। টাঁকা পেতে দেরি হলে সাগরমল ফ্যাসাদ করবে। সশব্দে চিন্তা করার অপূর্ব কার্ধকারিতায় বীরেশ্বর খুশি হইল। স্বর করিয়! শাস্্রপাঠের উপকারিতা আছে বোধ হয়, হঠাৎ মনে হইল। সামান্য বিড়বিড় শব্দেও মন অনেকখানি কাবু থাকে । কিন্ত নীরব হইলে চলিবে না। ফাক পাইলেই বলেন্দু, ফুটবল আর-- সত্রাসে আবার বিড়বিড় করিতে আরম্ভ করিল বীরেশ্বর। কোন- ক্রমে রাস্তাটুকু শেষ করিয়! তাপিকামত কাজ আরম্ভ করিয়া দিল। সাগরমল-_ নিশিকান্ত-_ জমি-শিকড়-আকাশ ৩৭ নিশিকান্তের সঙ্গে প্রায় ঝগড়া! হইয়। গেল। চব্বিশ ঘণ্ট! সময় দিয়! বারেশ্বর চলিয়া! আসিল । হিরণ মিত্তির-_ রা দশটায় বীরেশ্বর বাড়ি ফিরিল। খাওয়ার পরে ঘরে আসিয়া দ্রজ! বন্ধ করিয়। যখন দড়াইল, তখন বিয়ে।গান্ত নাটকের শেন দৃশ্তের নায়কের মত দেখাইতেছিল তাহাকে | ঘরের মধ্যে যেন একট! বিষণ্ন শোকের ছায়া পড়িয়! গিযাছে। বন্থচাপিতের মত বীরেশ্বর বইখাঁন! খুশিয়৷ পড়িতে আরম্ভ করিল। কখন বই নন্ধ করিয়! উঠিরাছে বীরেশ্বরের খেয়াল নাই। অস্থির পারচারির সঙ্গে রুদ্ধ বাষ্প যেন ক্ষণে ক্ষণে এক-একট। চাপ! শব্দের সাহায্যে বাহির হইতেছে ।__ত্যাব্সার্ড !_ কিছুকাল বিরাঁম ।-নে!। - আবার বিরাম ।-- টাকা! চাই নেআমার।-_বিরাম ।-অসম্ভব। ম'রে যাব ।- এবার কিছু বেশি সময় বিরাম। তীক্ষ ব্যঙ্গাত্বক এক টুকরা হাসি ফুটিয়া উঠিল মুখের কোণে । আশ্চর্য [হা । ধর্মের ষাড !__ তাই চায় ওরা !__আরও কঠিন হইয়া! উঠিল।--আর আমি? ত-- তাঁরু-মৃখ !-বাস্‌।-আর নয়।-_শেষ !_ ক্লোজড. ! ছিঃ ছিঃ ছিঃ! আমার কি? আমি- আমি বৈজ্ঞানিক--আমি দার্শনিক-_দর্শক | আমি গ্রেট !__ গ্রেট ! তুচ্ছ একট1_-তি তুচ্ছ। অবশেষে পরম শাস্তিতে বীরেশ্বর নিজ গেল। তি সকালবেলায় গৌডানন্দ তখন প্রাতঃকৃতা সমাপ্ত করিয়া প্রাতরাশ গ্রহণ করিতেছিলেন। বীরেশ্বরকে সমাদরে বসিতে বলির! তাড়াতাড়ি শেষ করিয়া উঠিয়া আসিলেন। কি তাই, এত সকালে? ই্যা।_বলিয়া বীরেশ্বর একটু ইতস্তত করিতে লাগিল। গৌড়ানন্দের জিজ্ঞান্ দৃষ্টি যেন অপ্রত্যাশিতভাবে শেষের প্রস্তাব গোড়াতেই টানিয়া বাহির করিল।__আমাকে আপনার আশ্রমে একটু স্থান দেবেন? গৌড়ানন্ প্রস্তুত ছিলেন না। কিছুক্ষণ টুপ করিয়া থাকিয়া বলিলেন, কেন? কি হয়েছে খুলে বল তো! সব। কিছু হয়নি। এমনিই | এমনি? না, এমনিই নয়। মানে-সংসারে আমি আর খাপ খাওয়াতে পারছি নে। কোন্‌ সংসারে? মবেশ্বরবাবুর সঙ্গে ঝগড়' হয়েছে? বীরেশ্বর এবার হাসিল।-_না না। দাঁদার সঙ্গে কোন কথাই হয় নি। আমি চেষ্টা! করলাম অনেক | পারলাম না। একটা দীর্ঘশ্বাসের দরুন একটু বিলম্ব হইল | বলিল, একমাত্র আপনি আমাকে রক্ষা করতে পারেন। _ গৌড়ানন্দ খুশি হইলেন । তাড়াতাড়ি জবাঁব দিতে পারিলেন এবার । --এ কথা ভুল বীরেশ্বর । নির্জেকে নিজে ছাড়! আর কেউ রক্ষা করতে পারে না। ঈশ্বরও না। তিনি পারেন, কিন্ত করেন না। জমি-শিকড়-আকাশ ৩৯ বারেশ্বর হঠাৎ যেন ভয় পাইয়া গেল। ঈশ্বর? অনেকখানি সংকুচ্তি হইয়! গেল মনট! ঈশ্বর সংক্রান্ত যাবতীয় বাধ্যতামূলক দায়িত্বের ছবি ভাসিয়া উঠিল । গোঁড়ানন্দ বলিতেছিলেন, কিন্ত আলে! জেলে দেন পথে । নইলে সম্পূর্ণ একা তিরিশ বছর বয়সে এই আশ্রম করতে পারতাম না। মাত্র পনরো! বছরের আশ্রম আমার-_আজ যা দেখছ তোমরা । লোকে আজ ভালবেসে স্বামীজী বলে আমায় ।__-বলিয়! সগর্ব বিনয়ে বীরেশ্বরের দিকে তাকাইয়া প্রাপ্য শ্রদ্ধা এবং বিম্ময় ফুটিয়া উঠিবার সময় দিলেন । বাঁরেশ্বর বাধ্য হইয়া আশান্বরূপ ভঙ্গীতে চাহিয়৷ রহিল । গোৌঁড়ানন্দ সন্তষ্ট হইয়া বলিতে লাগিলেন, আলে! দেখান তিনি, যে বেখতে চায় তাকে । কিন্ত চলতে হবে নিজেকেই । জানি না, কিসের থেকে রক্ষা পেতে চাও তুমি কাদ। থেকে 1- তাড়াতাড়ি বলিল বীরেশ্বর, ভেবেছিলাম, পড়াশুন! নিয়ে থাকব আমি । টাকার জন্তে শরীরটা একটুখানি কাদায় নামালে ক্ষতি হবে না কিছু । কিন্ত হ'লনা। মনটাও তপিয়ে যাচ্ছে। গৌড়ানন্দ একটু হাসিলেন। বলিলেন, কাদাই বটে। কিন্তু টাকার এত কি দরকার তোমার ? একট! ব্যথিত নিশ্বাস ফেলিল বীরেশ্বর ।--টাকার কত কাঁজ! বই কিনতে টাকা লাগে। নিশ্চিন্ত হয়ে একটু বেড়াতে টাকা লাগে। তা ছাড় দাদাকে সাহায্য না করলেও চলে না । এসব সমস্ত! তো তোমার র'য়েই গেল ? না। দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়ানো, লেখাপড়!--এসব যার জন্তে প্রয়োজন তাকেই যদি আগে হারিয়ে ফেলি, টাকা আমার কোনও কাক্তেই লাগবে না। আশ্রম-জীবনে যতটুকু সম্ভব, তাই নিয়েই সন্ত ৪০ জমি-শিকড়-আকাশ থাকতে পারব । থাকতে হবে। হ্যা, দাদার সমস্যাটা থেকেই গেল। কিকরব? আমি নিক্ুপায়। কিন্ত সবেশ্বরবাবুর সঙ্গে একটু পরামর্শ করা উচিত । করব। আপনি আশ্বাস দিলে করব | তিনি বৃঝতে পারবেন আমার মনের অবস্থা | গৌড়ানন্দ কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া বলিলেন, কিন্তু আসল কাটাই যে ভুল হচ্ছে বীরেশ্বর । জীবন থেকে পালাবার একট! আশ্রয় হিসাবে গ্রহণ করছ আশ্রমটাকে | তাই তে! সকলেই করে ।- বীরেশ্বর বলিয়া ফেলিল। ন1। ত! করে না । গৌভডানন্দম লাল হইয়! উঠিলেন।-__যাঁরা করে-__ কুদ্ধ গোঁডানন্দ শেষ করিতে পারিলেন না। বীরেশ্বর অন্থশোচনায় কথাট ফিরাইয়! লইবার সুযোগের অপেক্ষার রহিল । গৌঁড়ানন্দ পাণ্টা আক্রমণের কঠিন শব্দ খুঁজিতেছিলেন। নিক্ষল প্রয়াসে বলিলেন, এই যদি তুমি বুঝে থাক আশ্রমকে, ভয়ানক ভুল করেছ বীরেশ্বর বীরেশ্বর মনে মনে একটু না হাসিয়া পারিল না। দুঃখের সুরে কহিল, আমাকে ভুল বুঝবেন ন! স্বামীজী | “সকলেই' মাঁনে--অনেকেই আর কি। আপনার মত আশ্রমকে জীবন করে গ্রহণ করে কজন ? সাধারণ ধারা, সংসার থেকে পালিয়েই আসেন বেশির ভাগ। কিন্ত আমার বলবার কথ! এই যে, তাঁতেই বা দোষ কি? যে ক'রেই হোক, আশ্রমের ভেতর দিয়ে মানবের সেবায়, সমাজের সেবায় আত্মোৎসর্গ তো তাদের মিথ্যে হয়ে যাচ্ছে না! গৌড়ানন্দ মহাদেবের মত তুষ্ট হইলেন। কহিলেন, সতা, সকলের উপরে ধর্মের সেবা । এর কোনটাই মিথ্যে হয়ে যায় না। জমি-শিকড়-আঁকাশ ৪১ আবার সংকুচিত হইল বীরেশ্বর। গোড়ানন্দ লক্ষ্য করিলেন। পুনবণর কহিলেন, ধর্মের সেব1! | একটু থামিয়৷ হঠাৎ প্রশ্ন করিলেন, এসব ভাল লাগবে তোমার ? জবাব দিতে কিছু বিলম্ব হইল বীরেশ্বরের । গৌডানন কহিলেন, সব কথা তাল ক'রে ভেবে দেখ । তাড়াতাডি কিছু নেই৷ শুধু বিভৃষ্ণা সম্বল ক'রে এ পথে চল! যায় ন৷ বীরেশ্বর, তৃমি যাই বল। অন্নদিনেই হাপিয়ে উঠবে তুমি । জীবনের সঙ্গে ফাকি বেশি দিন চলতে পারে না। বীরেশ্বর চিন্তাই করিতেছিল। শেষের কথাটায় শশব্যস্তে বলিল, না, ফাকি আমি দিতে চাই নে। কিন্ত জীবন আমাকে ফাকি দিচ্ছে। ঘেইটে বন্ধ করতে চাই। আমি পারব স্বামীজী। আশ্রমের সমস্ত দাখিত্ব আশি খুশি নেই পালন করতে প্রস্তত। তার বদলে আমি মুক্তি পাচ্ছ । গৌড়ানন্দ্ সন্দিগ্ধ কণ্ঠে বলিলেন, কোন্‌ মুক্তির কথ| বলছ তুমি? মনের, দেহের | বীরেশ্বরের উচ্ছ্বাসের চাপে গৌডানন্দ কিছুক্ষণ "ামিয়! রহিলেন । বীরেশ্বর বলিয়৷ চলিল, আশ্রমের কাজ করব। বাকি সময় লিখব, পড়ব। সাগরমল নাই, হিরণ যিত্তির নাই, স্থবোধ লাহিড়ী নাই, নিশিকান্ত নাই, আর-_আর--কেউ নাই। কে-উনাই। সবেখ্বরবাধু তে! রইলেন ?-_-গোঁড়ানন্দ অগত্যা প্রশ্ন করিলেন । হ্য||-_আচমকা মাটিতে ন/মিয়। আসিল বীরেশ্বর ।--দাঁদা রইলেন। আমি বুঝিয়ে বলব দানাকে। তিনি কোনদিন আমার বাঁধা হবেন না । আশ্রম-কর্মী নিত্যানন্দ আসিয়া ঈড়াইভেই গৌড়ানন্দ আগ্রহতরে জিজ্ঞাসা করিলেন কি হ'ল? দিলেন না।-_নিত্যানন্দ শু কণ্ঠে বলিয়! দলাড়াইয়! রহিলেন। ৪২ জমি-শিকড়-আকাশ কি বললেন? আজ দেবার কথা বলেছিলেন যে হাতে নেই। সামনের সপ্তাহে যেতে বললেন । আবার সামনের সপ্তাহে ? হ্যা । গৌডানন্দ চুপ করিয়। রহিলেন। আর একট! প্রস্তাব দ্িলেন।__নিত্যানন্দ নিস্পৃহ কণ্ঠে বলিলেন । কি? বললেন, তিন হাজার টাকার ভোনেশন দিতে পারেন । বেশ তো] । কিন্ত একট! পাক গেট ক'রে তার স্ত্রীর নাম খোদাই ক'রে দিতে হবে। কোথায়? গেটের মাথায় । ললিতাসুন্দরী গেট । ললিতাঙ্গুন্দরী গেট !-_গৌড়ানন্দ যেন ভেঙাইয়া উঠিলেন। এক গেটে কজনের নাম দেব? আমার মনে হয়-_। নিত্যানন্দ বৈষয়িক বুদ্ধির পরামর্শ দিলেন, যার অফার বেশি, তার স্ত্রীর নামই বিবেচনা-যোগ্য | বীরেশ্বর হাসিয়া! উঠিল । সে তো বুঝলাম ।-_গোঁড়ানন্দ চিন্তাকুল হইয়া! উঠিলেন। একটা ডোনেশনে তো! চলবে না আমার ।- হঠাৎ এতক্ষণে বীরেশ্বরকে খেয়াল করিলেন ।-_ আচ্ছা, দেখা যাক । একটা ব্যবস্থা করতেই হবে । বীরেশ্বরকে বলিলেন, কোন ভাল কাজের স্থান এ দেশ নয়, বুঝলে বীরেশ ? বীরেশ্বর ঘাড় নাড়িয়া সায় দিল । জমি-শিকড়-আকা* ৪৩ আচ্ছ!, তোমার কাজে যাও। নিত্যানন্দকে বিদায় দিলেন গোঁড়ানন্দ। নতমুখে চিন্তা করিতে লাগিলেন। কিছুকাল পরে মুখ তুলিয়৷ কহিলেন, আশ্রমেও টাকা লাগে বীরেশ্বর | টাকা তো লাগবেই ।__একটা নিশ্বাস ফেলিয়৷ বীরেশ্বর জবাব দিল । গৌড়াননদের চক্ষু দুইটি সহসা যেন তেজোময় হইয়া উঠ্িল। বলিলেন, এটুকুও সাধারণ লোক করবে না? কেন করবে না? ভারতের জ্ঞানের আলো! সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেবার ব্রত নিয়েছি আমি। অবশ্ত আমার যতটুকু সাধ্য আমার আশ্রমকে বাচিয়ে রাখবার দায়িত্ব দেশকে নিতে হবে । নইলে ভারতের এঁতিহা, তার জ্ঞান, যে কারণে ম'রে যেতে বসেছিল, তারই পুনরাবৃত্তি হবে আবার । বীরেশ্বরের বিদ্রোহী অংশ প্রবল হইয়া উঠিতেছিল। গোৌঁড়ানন্দ বলিলেন, আমি সমগ্রভাবে বলেছি কিন্ত । শুধু আমার কথা নয়। আমিও একটা কষ অংশ, এইমাত্র । যত ক্ষুদ্ুই হোক । আমি বৃঝেছি। গোৌড়ানন্দ বীরেশ্বরের দিকে তাকাইয়! থামিয়৷ রহিলেন। বারেশবর সম্পূর্ণ চাপিয়! গিয়! বলিল, কিন্ত লোকে মোটামুটি চালিরে যাচ্ছে তো! তা যাচ্ছে।-_গোঁড়ানন্দ একটু হাসিয়া! পরিবর্তিত কণ্ঠে বলিলেন, একটু আধটু মতলব-গোছের যাই করুক, হ্যা, চালিয়ে যাচ্ছে। আমার কি তবে-_? বীরেশ্বর মনে মনে তর্ক করিতেছিল, আমাকে নামতে হচ্ছে না তো? কিস্ত-_- | মনে মনে হাসি পাইল আবার । ললিতান্ুন্দরী গেট ! গৌড়ানন্দ মোড় ফিরাইয়া হঠাৎ বপিলেন, তুমি লিখছ শুনলাম ? স্ব প্রসঙ্গে বীরেশ্বর অপ্রতিত হইয়া পড়ে। যুছু জড়িত কণ্ঠে 88 জমি-শিকড়-আকাশ বলিল, ঠিক লিখছি বললে ভুল হবে। লিখতে চাই বরং। সময় পাই নে। যেটুকু পাই-_ইয, লিখি মাঝে নাঝে । কিলিখছ? গল্প-উপন্যাস ? বারেশ্বর অবজ্ঞার ভর্গাতে বলিল, নাঃ, গল্প উপন্যাস আমি লিখি নে। এই ভঙ্গীতে বারেশ্বর আত্ম-প্রতিষ্ঠিত। একটু হাসিয়৷ বলিল, ওই থে বললেন আপনি, জ্ঞানের আলো-_বিষয়বস্ত আমারও তাই । ওঃ, বেশ বেশ । তোমাদের বয়সে--, বেশ, শুনে বড় স্থখী হলাম । তবে, আমি কিন্ত বাংলায় লিখছি । বেশ তো। বদি আলে! জলে ।-হাসিয়! উঠিল বারেশ্বর ।--পাবে সবই । কিন্ত আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন স্বামাজা, প্রচণ্ড শ্বশানের আলোতে চোখ ধেধে আছে। আর কোন আলোই আর শৌছুবে না। প্রাচীন এতিস্থ, জ্ঞান শুধু আনাপণ্রেই একচেটিয়া নয় । আরও অনেকের ছিল। শ্উজিয়মের কঙ্কাল সংগ্রহ হয়ে আছে সব। আমার মতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সব পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যেতে দেওয়াই মঙ্জল। একেবারে নতুন ক'রে আরম্ভ করা সম্ভব হবে। নক্ষল আলো নিয়ে অথ! ঠোকাঠুকি কর! বিডম্বনাই হবে । কি বলছ, বারেশ ? ঠিকই বলছি, স্বামীজী। এ বলবে আমারটা ভাল, ও বলবে আমার ভাল! হাজার কয়েক বছর পেছন থেকে আবার শুরু করা। ফল তে। একবার দেখাই গেছে । আমি তাই শ্বাশানের কাঁজেই সাহায্য করৰ স্থির করেছি। তার থেকেই নতুন জ্ঞানের আলো! দেখা দিতে পারে। সব পুড়িয়ে দেওয়াই তোমার মত? জমি-শিকড়-আকাশ ৪৫ পুড়ে তো যাবেই সব। তাড়াতাড়ি করতে চাই । তাই বল। ধর্ম তুমি বিশ্বাস কর না ?--ব্যথিত কণ্ঠে বলিলেন গৌড়ানন্দ | করি হয়তো! | কিন্তু এতটুকু তার মূল্য আছে ব'লে বিশ্বাস করিনে। _বীরেশ্বর একটু ক্ষুব্ধ হাঁসির সঙ্গে আবার বলিল, মানবদেহটা এখনও তেরি হয় নি স্বামীজী। এর পরের স্তরে কাঠামোটা সম্পূর্ণ বদলে না উঠলে কোন আশাই নেই | তার মানে? তুমি বলতে চাও, দেহটা এখনও ধর্মের যোগ্য হয়ে ওঠে নি? না। গৌডানন্দ ক্ষণকাল হতবাক, হইয়! তাকাইয়া রহিলেন। তীক্ষু শ্রেষের সুরে বলিলেন, ও, তোমার নিজের কথা বলছ? বীরেশ্বর অস্থৃতপ্ত হইয়া উঠিতেছিল। কিন্ত এই প্রশ্নে সঙ্গে সঙ্গে আবার তাতিয়! উঠিল। বলিল, সকলের কথাই বলছি । সারাজীবন তপন্ত। ক'রে বিশ্বাশিত্রের অবস্থাট! একটু ভেবে দেখুন না । মেনকাকে খুব বেশিক্ষণ নাচতে হয় নি। ছুর্বাসাঁর লাইনেও অনেক আছে । অনেক আছে। আপনি হয়ত! বলবেন-- আমি কিছুই বলব না। তোমার পছন্দমত উপাখ্যানের বাইরে যদি আর কিছুই না পেয়ে থাক-_ সেই কথাই বলছিলাম ।-_বীরেশ্বর শেষ করিতে দিল না ।--সার। পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত যে কজনের কথা আপনি বলতে পারেন, ঈশ্বরপ্ষ্টা, জ্ঞানী, অবতার, তাঁরা একই জ্ঞানকে ভিন্ন ভিন্ন দেখলেন, কেন? এ, শরীর । গৌড়ানন্দ এবার উত্তেজিত না হইয়া উন্নত হান্তের সঙ্গে বলিলেন, ৪৬ ভমি-শিকড়-আকাশ ভিন্ন নয়। তবু তোমার কথাই ধরে নিলাম । কিন্ত শরীর তে! একই ধাতুতে গঠিত ? তা! হ'লে ভিন্ন দেখ! সম্ভব হবে কেন? চেহাঁর| ভিন্ন যে! চেহীরার মতই মনেরও স্বাধীনতা আছে । কিন্ত ওইটুকুই। কাঠামোর সীমার মধ্যে । গৌড়ানন্দ শাস্তকে বলিলেন, তোমার মতেরও স্বাধীনতা আছে আমি স্বীকার করি। কিন্ত তবু তাদের আমি মহামানব মনে করি ।--হঠাঁৎ গভীর শ্রদ্ধার স্থরে বীরেশ্বর নিজের কথার জের টাঁনিল।-__কাঠামোটাকে অনেকখানি ভেঙে অনেকখানি বেরিয়ে আসতে পেরেছিলেন তারা । তাদের আমি কম শ্রদ্ধা করি নে ম্বামীজী। বড় এলোমেলে! হয়ে যাচ্ছে তোমার কথা । কেন? কোথায় ?__বীরেশ্বর একটু যেন দমিয়া গেল। গৌঁড়ানন্দ হাসিলেন।- শ্রদ্ধাও করছ, বিভ্রপও করছ ! বীরেশ্বর আহতের মত বলিয়। উঠিল, না নান! । বিদ্রপ করি নি আমি। হয়তো! ঠিকমত বলতে পারি নি। তারা জয়ী হয়েছিলেন, তার! নমস্ত। কিন্ত--তীরাই শুধু । বাকি মানুষকে তারা এতটুকু এদিক ওদিক নিতে পারেন নি। শোন বীরেশ্বর ।-_গৌড়ানন্দ কিছুক্ষণ থমকিয়া থাকিয়া গা-ঝাড়! দিয়া শক্ত হইয়া বসিলেন এবার ।--অদ্ভূত তোমার মত । মত নয়, কি বলব? উক্তি। দায়িত্বহীন অসংলগ্ন অসত্য উক্তি । অসত্য? হ্যা, কিন্তু তর্ক করতে প্রস্তুত নই আমি । মাহৃষকে তাঁরা কতখানি টেনে তুলেছেন, সেট। এঁতিহাসিক সত্য । বীরেশ্বর তীক্ষ প্রতিবাদ করিতে উদ্ভত হুইয়াই থামিয়া গেল। জমি-শিকড়-আকাশ ৪৭ শ্বশানের আলোর কথা যা বললে তুমি, তাদের ভুলে যাবার ফল। সে কথা থাকৃ। এ প্রসঙ্গে তর্ক করা আমার ইচ্ছা নর বীরেশ্বর | বীরেশ্বর অত্যন্ত লজ্জিত হইল 1-ঠিক তর্ক হিসেবে আমি বলি নি। 'আচ্ছ।, নমস্কার 1-_উঠিয়া দীভডাইল বীরেশ্বর । নত মস্তকে হীরে ধীরে চলিতে শুরু করিল। গৌডানন্দ অবাক হইয়া পিছন হইতে নীরবে তাকাইয়। রহিলেন। বেশ কিছুদূর অগ্রসর হইয়া আসল কথাটা বীরেশ্বরের মনে পড়িয়া গেল । হঠাৎ থমকিয়। দাড়াইল ।-_-আশ্রমের কথাটা ? আশ্চর্য ! এখন ফিরে যাওয়া সম্ভব ? দূর, হাসবেন স্বামীজী। আর কোন লাভ হবে না। বীরেশ্বরও হাসিল।-_-কি সব বললাম ! এতটা কোনদিন ভাবিও নি বোধ করি । গড়গড় ক'নে বেরিয়ে গেল, কি করব? কিন্ত মিথ্যে বলি নি। আর একদিন আস যাবে । চপিতে আরম্ভ করিল বীরেশ্বর | স্বামীজী ভুল বুঝেছেন । ললিতাস্ুন্দরী গেট! ভাবিতে ভাবিতে হঠাৎ মনে পড়িল বীরেশ্বরের | দুই-তিন দিনের মধ্যেই বীরেশ্বর আর একবার মন স্থির করিয়! ফেলিল। একদিন ছুপুরবেলায় সনয়নার ঘুম তাঙাইয়! ডাকিয়া তুলিল। এ রকম ঘটন! খুব ঘটে না। সুনয়না অবাক হইয়া বলিলেন, কি ব্যাপার ঠাকুরপো ? ৪৮ জমি-শিকড়-আকাশ ভারি গুরুতর কথ! বউদ্ি।-_বীরেশ্বর বলিল, তোমার ঘুমই ছাড়ল না ভাল ক'রে । কি বলব? বল না, শুনছি আমি। কথাট! হচ্ছে-_ হ্যা। শোন, দাদাকে ব'লে না কিন্ত । নানা। তা বলব কেন? তোমরা দেখে-শুনে একট! মেয়ে ঠিক ক'রে দাও | আমি বিয়েই করব । নুনয়ন! হাসিতে হাসিতে যেন লুটাইয়। পড়িলেন |_:এই কথা? তারই জন্তে ঘুম থেকে ডেকে তুলেছ ? এই মাত্র ঠিক করলাম। ভাবলাম, এক্ষুনি ব'লে রাখি । বেশ করেছ। তা মেয়ে খুঁজতে হবে কেন ? মেয়ে তো! ঠিকই আছে। কে? ও, চেন না বুঝি? কার কথা বলছ 1 নামটা মুখে আনিতে একটু সময় পাওয়ার আশায় অহেতুক প্রশ্ন করিল বীরেশ্বর।_-ও, দীপিকার কথা বলছ? সে হবে না। ্গনয়ন! হালকা সুর পরিহার করিলেন। বলিলেন, কেন, কি হয়েছে ঠাকুরপো ? না, হয় নি কিছু ।-_বীরেশ্বর উঠ্িয়। দীডাইল।-- আমার মত নেই। গুনয়না বিশ্বাস করিলেন না। বীরেশ্বর ভুনয়নার মুখের দিকে তাকাইয়! সঙ্গে সঙ্গে আবার বলিল, দীপিকারও মত নেই। জমি-শিকড়-আকাশ ৪৯ ক্ুনয়ন! অবিশ্বাসে বলিলেন, ইস ! মিথ্যে কথ । তোমার মত না থাকতে পারে । দীপিকার মত আছে। প্রসঙগট! বীরেশ্বরের অসহা বোধ হইল। তাড়াতাড়ি বলিল, বেশ তাই। যাই হোক, দীপিকার হিসেব আর ক'রো না। বীরেশ্বর চলিয়া গেল। স্ুয়ন! উঠ্ঠিরা বীরেশ্বরের ঘরে ঢুকিলেন পিছনে পিছনে । বলিলেন, তোমার কথ! কিছু বুঝি নে ঠাকুরপো । আজ যদি প্রস্তাব ক'রে পাঠাই, ফিন থাকলে ওরা আজকেই রাজি হয়ে যাবে । ওরা, কারা ? দীপিকার মা । আর দীপিক1 তো এক্ষুনি চলে আসতে পারে। বীরেশ্বর দৃঢ় উত্তপ্ত কণ্ঠে বলিল, দীপিকা! দীপিকা ক'রে কেন অস্থির হচ্ছ বউদি? আর কি মেয়ে নেই সংসারে ? থাকবে না কেন? অনেক আছে 1-_স্ুনরন। হাঁসিয়! বলিলেন, বেশ, দেখ! যাবে | হ্যা, দেখে! ।-_বীরেশ্বর দৃঢ় হাস্তে বলিল, আমি ভেবে দেখেছি । ও-সব মেয়েই সমান | সব পুরুষের মত ? বীরেশ্বর উচ্চ হাস্য করিয়া উঠিল।--ঠিক তাই। বড় খাটি কথ! বলেছ বউদি | স্থুনয়না থুশি হইলেন বীরেশ্বরের হাসিতে । কিন্ত নিজে হাসিতে পারিলেন না । বলিলেন, কি জানি, কি তোমার মতলব ! বেশ, আমরা! মেয়ে ঠিক করছি। শেষে কিন্ত পেছুতে পারবে না, হ্যা । না, কিছুতেই ন1। যাক, বিয়ে তে! কর 1-__সুনয়না অবশেষে খুশির আমেজে বলিলেন, বাঃ বাঃ। শেষ পর্স্ত স্ুবুদ্ধি যে হয়েছে, এই ঢের। ৪ ৬ ৫০ জমি-শিকড়-আকাশ স্বনয়ন! চলিয়! গেলে বীরেশ্বর একটা নিশ্বাস ফেলিয় অত্যন্ত হালকা! বোধ করিল নিজেকে ৷ অসহ্‌ চাপটা সরিয়! গিয়াছে । একটা অনৈতিক অসৎ কাজের অনুভূতি আসিয়৷ গোপন মাধুর্যে মনটাকে ভরিয়া দিল যেন। অসৎ? অসৎ মনে হইল কেন? অবাক হইয়া কারণ খুজিতে লাগিল বীরেশ্বর। নিজের সম্পর্কে? একটা! ভ্রকুটি করিয়া আত্ম-দর্শন হইতে বিরত হইল । অতি সৎ কাজ সিদ্ধান্ত করিয়া শান্ত হইল আবার । কিছুট! পারিপাট্যের সঙ্গে পোশাক ও প্রসাধন শেষ করিয়া বীরেশ্বর লঘুপদে বাহির হইয়া পড়িল। রাস্তায় নামিয়া হালক1 রসের গানের সুর উঠিতে.লাগিল বীরেশ্বরের মনে । নিঃশব্দ কণ্ম্বরে সেই সুর ভণজিতে ভাঁজিতে হাটিতে লাগিল । বাঃ! বিপরীত দিক হইতে একজন তরুণী এক! এক! আসিতেছিল । গানের সুর বন্ধ হইয়। গেল বীরেশ্বরের ৷ মনের'কোন্‌ তারে যেন বাভিয়া উঠিল, বাঃ! তরুণীর দেহটা আগাগোড়া দৃষ্টির হাত বুলাইয়া দেখিতে দেখিতে চক্ষুর উপর আসিয়া মুহূর্তের জন্ত স্থির হইল। বীরেশ্বরের অনভ্যন্ত ভদ্র চক্ষু লজ্জায় পরক্ষণেই ছিটকাইয়। সরিয়া গেল । মেয়েটি যেন পরম অবজ্ঞাভরে সম্বুখের দিকে দৃষ্টি মেলিয়া পার হইয়া চলিয়! গেল । বীরেশ্বর পিছন ফিরিয়া! আর একবার দেখিবার আশা প্রাণপণে দমন করিতে করিতে ঘাড় শক্ত করিয়া হাঁটিতে লাগিল । আশ্চর্য! তরুণীও ফিরিয়। তাকাইয়াছে ! বীরেশ্বর দেখিতে পাইয়া পুলকিত হইল। তৃপ্ত পৌরুষ সতেজ হইয়া! উঠিল। দীপিকা! দীপিকার চেয়ে হাজার গুণে ভাল দেখিতে ! পিছন হইতে যেন আরও চমৎকার ! মনে মনে হিসাব করিতে করিতে প্রফুল্ল মনে অগ্রসর হইল । আজ আর কোন কাজ নয়। জনি-শিকড়-আকাশ ৫১ মেয়ে-ইস্কুলের সম্মুখের রাস্ত! ধরিয়া নদীর পাড় দিয়! ইাটিতে হাটিতে শহরের একমাত্র বেড়াইবার স্কানট। বেড়াইয়! ফিরিল। সিনেমার সময় আছে এখনও । তাড়াতাড়ি একখান! টিকিট করিয়! সিনেমার ঘরের সামনে টাঙানে! ছবিগুলি দেখিতে লাগিল। এত লোকের মধ্যে ইংরেজী ছবির সাতারের পোশাক পর! প্রায়-উলঙ্গ নারী- মৃতি সোজাসুজি দেখা সম্ভব নয়। বীরেশ্বর আড়চোখে দেখিতে লাগিল। বিরামের সময় আলো! জ্বলিলে বীরেশ্বর চারিদিকে তাকাইয়া দেখিতেছিল। এক কোণে নত মন্তকে রামমোহনও বসিয়া ছিলেন। বীরেশ্বর খুশি হইয়! মুচকিয়! হাসিল। বাহির হইয়। ভিড়ের সঙ্গে চপিতে চলিতে কিছু দুরে তিডট! যখন ক্রমে পাতলা হইয়! উঠিল, তখন আবার রামমোহনের সঙ্গে দেখা হইয়!1 গেল বীরেশ্বরের । কাহারও তরফে অস্বীকার করিবার উপাঁয় নৃহিল না । কেমন আছ বীরেশ ?-_রামমোহন জিজ্ঞাসা করিলেন। ভাল আছি ।--বীরেশ্বর জবাব দিল । সিনেমা ভাঙল বুঝি ? সিনেমায় গিয়েছিলে তো ! হ্য! | কি ছবি হচ্ছে? বাজে একটা ইংরেজী ছবি ।--অতি কষ্টে হাসি চাপিয়া জবাব দিল বীরেশ্বর | মিনিট খানেক আর কোন কথা! হইল না । কদিন থেকে তোমার কথা ভাবছিলাম ।--রামমোহন আরস করিলেন, তুমি গৌড়ানন্দের আশ্রমে যাবার প্রস্তীব করেছিলে ? *$ঃ, হ্যা, করেছিলাম ।-নিতাস্ত বোকার মত জবাব দিল বীবেশ্বর | তিনি অস্বীকার করেছেন ? ৫২ জমি-শিকড়-আকাশ ঠিক অস্বীক'র নয়। তার আর দরকার হয় নি আর কি। অসম্ভব বুঝে আমি আগেই চ'লে এসেছিলাম । ও, কিন্তু স্বামীজী বলছিলেন-_ তিনি মিথ্যে বলেন নি। অস্বীকারই করতেন । যাক, ভাল হয়েছে । ও-রকম খেয়াল হ'ল কেন তোমার হঠাৎ? জবাব দিতে একটু সময় লইল বীরেশ্বর। অত্যন্ত অনিচ্ছা! বোধ করিতে লাগিল। শেব পর্যন্ত সংক্ষেপে বলিল, ভাল লাগছিল না। ভাবলাম, আশ্রমে নিঝপঞ্কাটে লেখাপড়! নিয়ে থাকতে পারব । থুব ভুল ভেবেছিলে ।_ রামমোহন জোরের সঙ্গে বলিলেন, অত্যন্ত ংকীর্ণ পরিধির মধ্যে পণড়ে ছটফট ক'রে বেড়াতে হ'ত তোমাকে। ই্যা। বীরেশ্বর হাসিয়। বলিল, তাই মনে হ'ল। আমার সঙ্গে তর্ক হয় স্বামীজীর ।-_রামমোহন উত্তেজিত হইয়া উঠিলেন।-_পুরনো! পুঁখি খেটে কিচ্ছু ফল হবে না ছুনিয়ার। এখিকৃস্‌ হঠাৎ ধমক দিয়া উঠিলেন।--ব্রড ইউনিভাসল এখিকাল প্রিম্িপ লের উপরে মাহৃষকে দাড়াতে হবে । যদি বাচতে চায় মানুষ | কিন্ত, সে রাস্তাও খুব পরিষ্কার নয়। রিলেটিভিটির আইন আছে । ইউনিভাসর্বল কিছু হবে কি করে? রামমোহন দুঢম্বরে বলিলেন, হবে। যা মিথ্যা, যা অসত্য, যা অন্তায়-এই সব বাদ দিলে যা থাকবে, তাই ইউনিভাসর্ল সত্য । বীরেশ্বরের হঠাৎ হাসি পাইল । "যা মিথ্যা” কথাটা ঘুরিয়। ঘুরিয়। মনে হইতে লাগিল। কিছুই হইবে না । কোন আশ! নাই। একটা অহেতুক নৈরাস্তে ভরিয়। উঠিল বীরেশ্বরের মন। মোড়ে আসিয়া বীরেশ্বর বিদায় লইল | রামমোহন বলিয়। দিলেন, যেও, যদি সময় পাও । জমি-শিকড়-আকাশ ৫৩ আচ্ছা |--বলিয়। বীরেশ্বর নিজের পথে রওনা হইল । কিছুক্ষণ শৃন্যমনে চলিতে চলিতে টের পাইল, মনের সেই মনোহারী হুরটা কাটিয়া গিয়াছে । রাগ হইল রামমোহনের উপর | সিনেমায় দেখা! নারীমৃতিগুলি স্মরণ করিতে চেষ্টা করিতে লাগিল । বাড়ি ফিরিয়। তাড়াতাড়ি শুইয়| পড়িবার ব্যবস্থা করিল । অনেক কথ চিন্তা করিবার আছে। কল্পনার বিলাসে ডুবিয়৷ অজ্ঞাতসারে ঘুমাইয়া পড়ার আনন্দ আজ চাই।.." বীরেশদা, শীগগির চলুন । কে, প্রদীপ? কিব্যাপার? সর্বনাশ হয়ে গেছে, চলুন, সময় নেই ।-_ প্রদীপ ছুটিয়া রওনা হইল । বীরেশ্বরও সঙ্গে সঙ্গে ছুটিল। প্রদীপ হাপাইতে হাপাইতে বলিল, দ্রীপিকা__ হ্যা। আপনার সঙ্গে বিয়ের জন্য সেজেগুজে ১তরি হয়ে বসেছিল । তারপরে ? বলেনদার সঙ্গে কোথায় চলে গেছে, আর পাওয়া বাচ্ছে না। বীরেশখবরের দম বন্ধ হইয়া গেল। পাও আর চলিতেছে না, পিছাইয়া আসিতেছে । দীপিকাকে দেখা গেল। টলিতে টলিতে সে বীরেশ্বরদের বাড়ির দিকেই আসিতেছে । দলিয়া মুচড়াইয়া দেহটাকে ক্ষতবিক্ষত করিয়। দিয়াছে কে যেন। একটু পিছনে বলেন্দু দড়াইয়া পিশাচের মত হাসিতেছিল। হাসিতে হাসিতে চপিয়া গেল সে। বীরেশ্বর দম বন্ধ করিয়! দেখিতেছে-_ দীপিক! বীরেশ্বরের পায়ের উপর উপুড় হইয়! পড়িল। ৫৪ জমি-শিকড়-আকাশ বীরেশ্বর বজ্মুষ্টিতে ধরিয়! টানিয়া তুলিল। হঠাৎ লক্ষ্য করিল,, দীপিকার অস্পষ্ট অনাবৃত দেহ । কয়েকটা ঝাঁকানি দিয়! বলিল, বল, কি হয়েছে বল? অস্ফুট জবাব দিল দীপিক1, বলেনবাবু-_ তবে আমিও-_1 বিছ্যতের মত জ্লিয়! উঠিল মনে ।-_-এস শীগগির | উন্মস্তের মত টানিতে লাগিল । ***ঘুমটা অকন্মাৎ ভাঙিয়া গেল এই সময় । চমকিয়া উঠিয়া! সঙ্গে সঙ্গে ছুই দিকে হাতড়াইয়! দেখিল বীরেশ্বর। কেহ নাই। বুকের' উপর হাত রাখিয়৷ বুকের মধ্যে ধড়াস ধড়াস শব্দটাকে চাঁপিয়া ধরিল। সর্বাঙ ঘামিয়! গিয়াছে । ৮ সারাদিন অদ্লীর প্রতীক্ষার পর সন্ধ্যাবেল! বীরেশ্বর দীপিকার সঙ্গে দেখা করিতি গেল। দিনের আলো! তাঁহার বলিবার বিষয়বস্তুর পক্ষে প্রশস্ত নয় ভাবিয়াই কোন রকমে ধৈর্য ধরিয়া দিনটা অপেক্ষ। করিয়াছে । অহেতুক কিছুকাল দীপিকাকে তন্ন তন্ন করিয়! দেখিয়া লইল। দীপিকার মুখের উপর একটু বেশি রক্ত আসিয়া পড়িল মাত্র। কিন্ত সঙ্কুচিত হইল ন1। নতচক্ষু হইয়! চুপ করিয়া! একটু যেন বিকশিত হুইয়। রহিল । দীপিক1 !-কাপিয়া উঠিল বীরেশ্বর ।--অনেকগুলে৷ কথ! আছে আমার তোমার সঙ্গে। দীপিকা নীরবে মুখ তুলিয়া! চাহিল । বীরেশ্বরও আবার একটু সময় লইল। বাম্প ঘন হইয়! উদ্ভিলে আপন জোরে বাহির হইয়া পড়িবে বীরেশ্বর জানে । দীপিক! !-বাম্প ছাড়িতে আরম্ভ করিল।-- তোমাকে আমার. জমি-শিকড়-আকাশ ৫€ কথাগুলে! বল! চাই । হয়তো!--। যাকগে, জবাব তোমার যাই হোক, আমি ব'লে যেতে চাই। দীপিকার সমস্ত দেহ শুনিবার জন্ত উন্মুখ হইয়া! স্থির হইয়। রছিল। বীরেশ্বর সেটাকে কাঠিন্ত মনে করিয়! ক্ষেপিয়! গেল। বলিল, তয় নেই তোমার । কোন অন্ুরোধ-্-্দয়াতিক্ষা করিতে আসি নি আমি । ছোট একটা নিশ্বাসের সঙ্গে অধীরতা৷ দমন করিল দীপিকা । মৃছু কে বলিল, আমি কি তাই বলেছি? কিন্ত সুর কাটিয়া! বারেশ্বরের বাষ্প সেই পথে অনেকখানি বাহির ছইয়! গিয়াছে । ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে অন্য দিকে চাহিয়া! রহিল । দীপিকা! জ্যা-যুক্ত ধনুকের মত অসহায়ভাবে টঙ্কারের অপেক্ষা করিতে থকিল। বীরেশ্বর বলিল। কিন্ত কণ্ম্বরে প্রত্যাশিত উচ্ছ্বাস নাই, উত্তাপ নাই। বলিল, কালকে মনে হয়েছিল, তুমি-__-তুমি আমার জন্যেই নির্দিষ্ট । আর, আমি-_-তোমার জন্তে। এর আর অন্যথা হওয়া সম্ভব নয়। আগেও মনে হয়েছে, কিন্ত কাল রাত্রেই যেন প্রথম সেটা! প্রত্যক্ষ সত্যের মত দেখতে পেলাম | একটু থামিয় কান্নার মত এক টুকরা হাসিয়া আবার বলিল, মাহৃষ তগন্য। করে আত্মাকে জানবার জন্তে । একটা স্বপ্নের মধ্যে আমি আমার আত্মাকে যেন মুখোমুখি দেখলাম । বলিয়। দৃষ্টি আনিয়া দীপিকার উপর মুহুর্তের জন্য স্থাপন করিয়! চৎক্ষণাৎ জরাইয়া লইল। গভীর, সুতরাং অত্যন্ত প্রচ্ছন্ন বিজ্রপ মশাইয়া৷ বলিল, সব অন্ধকার কেটে গেল যেন। জ্ঞানচক্ষু খুলে গেল (মার, সমস্ত স্বচ্ছ হয়ে গেল। দীপিকার একাগ্র একমাত্র প্রশ্ন আপন! হইতেই জড়িতকণে বাহির ৫৬ জমি-শিকড়-আকাশ হইয়! গেল, কি স্বপ্ন? তুমি--তোমাকে দেখলাম স্বপ্নে । প্রত্যাশিত টঙ্কারে দীপিকা আগাগোড়া বাজিয়া উদ্তিল। গভীর তৃপ্তির রাঙাহান্তে মুখখানি উদ্ভাসিত করিয়া নত হইয়া! রহিল। বীরেশ্বরেরও মনে হইল, সমস্ত বল! এবং শুনার প্রয়োজন ফুরাইয়া গিয়াছে। চুপ করিয়। কাছাকাছি বসিয়া থাকা ছাডা আর কিছু করিবার নাই। হঠাৎ এক সময় উঠিয়া দাঁড়াইয়া বণিল, এই-- এইটুকুই আমার বলার ছিল। ব-স্ু-ন-_ না, যাই ।--বলিয়! বীরেশ্বর বসিল আবার |--প্রদীপ এখনও ফেরে নি বুঝি ? না, আসবে এখুনি হয়তো । আর কিছু জিজ্ঞান্ত ন! পাইয়া বীরেশ্বর নীরবে বসিয়া রহিল। খানিক বাদে আবার বলিল, প্রদীপ বিকেলে বেরিয়েছে ? ্্যা। এই সময় একবার আসে । এসে আবার বেরিয়ে যায় । ও । আর টানিতে পারিল ন। বীরেশ্বর । দীপিকার দিকে আর একবার তাকাইয়! হঠাৎ অকারণে অসহিষু হইয়! উঠিল ।-_ আচ্ছা, চলি। বলিয়া এবার সোজামুজি উঠিয়া! বাহির হইয়া! গেল। দীপিকা সঙ্গে সঙ্গে দাড়াইল। কিন্তু কিছু বলিতে পারিল ন|। কিছুক্ষণ বাহিরের দিকে তাকাইয়া থাকিয় মুখ টিপিয়৷ হাসিল একটা ূ থুশিমনে মায়ের কাছে গিয়! টুপ করিয়া বসিল । শীস্তিলতা৷ জিজ্ঞাসা করিলেন, বীরেশ কি বললে রে? না, এই গল্পসল্প করলেন। দাদার জন্যে অপেক্ষা করলেন। 'জমি-শিকড়-মাকাশ ৫৭ শাস্তিলতা বিশ্বীস করিলে না । কিন্ত আর কিছু জিজ্ঞাসা না করিয়া! শুধু বলিলেন, বীরেশ ছেলেটা ভাল | বেশ ছেলে । হবেই তো, এম.এ. পাশ করেছে । দোষের যধ্যে-- কি দোষ ?--দীপিক!1 বাঁধ! দিয়। জিজ্ঞাসা করিল । তাল চাকরি-বাকরি কিছু করেনা, এই । অতগুলে! পাশ ক'রে করছে কিন। দালালি । চাঁকরির চেয়ে দালাপিতে যদি টাকা! বেশি পাওয়! ঘাষ, তবে তাই তো! ভাল ।--দীপিক! নিজেকে বলিল যেন । শান্তিলতা প্রতিবাদ করিলেন না। স্বাভাবিক তীক্ষুবৃদ্ধিতে তাবিলেন, ধারণ। ভাল থাকাই তাল। ভাবনার এই ধার! অনুসরণ করিতে করিতে মগ্ন হইয়া গেলেন । দীপিক1 হঠাৎ উঠিয়া গেল । একটু পরে প্রদীপ আসিলে শান্তিলত! তাহাকে ডাকিয়া কাছে ৰসাইলেন | হ্যা রে, বীরেশের বিয়ের (কান চেষ্টাচরিত্র করছে না ওর! ? কি জানি, তা তো জানি নে আমি ।-_ প্রদীপ গভীর হইয়া! জবার দিল। দীপিকার সঙ্গে উল্লেখ ক'রে দেখ না? ওকে তো! বেশ পছন্দই করে বারেশ। বিয়েই বুঝি করবে না বীরেশদ1 | পছন্দ করলে কি হবে কি করবে তবে? প্রদীপ হাসিয়া বপিল, তা তো জানি নে? বিয়ে করবে না তাই ক্ঠনেছি। তুই তাল ক'রে খবর নে। বিয়ে না করলে পছন্দ করবে কেন? তা ছাড়া দীপির মত আছে কি না-- ৫৮ জমি-শিকড়-আকাশ দীপির মত লাগবে না।--শাস্তিলতা ধমক দিয়! উঠিলেন।-_-এম. এ, পাস ছেলে তার আবার মত! দীপির ভাগ্য । তুমি না এত দিন বলেনদার কথাই বলেছ ? শাস্তিলত1 একটা নিশ্বাস ত্যাগ করিলেন। বলিলেন, না । য1 হবে না, তাই। অত টাকার জোর থাকলে তো আমার? ওরা যদি-_। ভেবেছিলাম, বলেন্দু নিজে যদি খুব গরজ-টরজ করত | কোথায় ? একটু থামিয়া গোপনে বলিলেন, তা ছাড়া ছেলে হিসেবে বলেন্দুর চেয়ে বীরেশই ভাল । ওর তো ওই এক টাকা শুধু। কিন্ত গভীর গুণের কথা সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়িয়া গেল। এবারে ক্পষ্টতই অনেকখানি ঝু'ঁকিয়! পড়িলেন বলেম্দুর দিকে । স্সিগ্ধ সরস কণ্ঠে বলিলেন, আর চেহারাটা! হুন্দর | বলিষ্ঠ পুরুষের মত পুরুষ ছেলে । বলেনদার গায়ে জোর কত 1-_প্রদীপও উৎসাহিত হইয়া! উঠিল ।-- সেদিন আমার সামনে, একা তিনটে রিকৃশওয়ালাকে ঘুষিয়ে নাকের রক্ত বার ক'রে দিলে। তিন জন? হ্যা । শাস্তিলতা খুশি হইয়। বপিলেন, তা পারে ও | লম্বা চওড়া__বেশ শরীরট। | দীপিকা পাশে আসিয়। নিঃশব্ে দাড়াইয়। ছিল। এতক্ষণে লক্ষ্য করিয়া শাস্তিলতা থামিয়া গেলেন। নিঃশব্দেই আবার সরিয়া গেল দীপিকা । প্রদীপও কিছুক্ষণ চুপচাপ কাটাইয়! উঠিয়া! গেল। দীপিক' প্রদীপকে একল! পাইয়! চাপা ব্যঙ্গের স্থরে বলিল, তিনটে রিকৃশওয়ালার নাক তেঙে দিয়েছে একা ! এমন পাত্র আর হয় নাকি? কি বৃদ্ধি! জমি-শিকড়-আকাশ ৫৯. প্রদীপ তাড়াতাড়ি সংশোধন করিয়া হাসিয়া বলিল, তাই আমি বললাম নাকি ? আমি এমনই বললাম যে, বলেনদার শক্তি আছে গায়ে । কিন্ত দীপিকার ঝাঁজ কেন যেন লাগিয়াই রহিল ।--তা হ'লে হনুমান সিংয়ের আখড়া থেকে একটা পালোয়ান নিয়ে এসে বোনের বিয়ে দে। প্রদীপ হাসিয়া! উদ্ভিল। বলিল, তুই এত ভাবছিস কেন? যে ভাল পাত্র তার সঙ্গেই আমর! তোর বিয়ে দেব। কিন্ত সে আবার রাজী, হ'লেতো? কে ?-দীপিক। হাসি গোপন করিয়! প্রশ্ন করিল। বীরেশদা, বীরেশদা । হ'ল? হাসির সুযোগ পাইয়া খিলখিল করিয়! হাসিয়া উঠিল দীপিকা |--. তিনি তো বিয়েই করবেন না। বলিয়া আর এক দফ! হাসিয়া! লইল। যে অর্থটা দীপিকা! ফুটাইয়! তুলিতে চাহিতেছিল, ধরিতে না পারিয়া প্রদীপ বোকার মত তাকাইয়। রহিল। মুখে বলিতে না পারিয়! দীপিক! ছটফট কৃরিতে লাগিল শুধু এসেছিলেন আমার কাছে ।-দীপিকা অবশেষে গভীর হহয়! মুছুকঠে বলিল । পরক্ষণে “আমার কাছে" কথাট যেন কাটিয়৷ দিল ।-_ আমাদের কাছে । বলিয়া অযথ| লাল হইর! উঠিল । কে? ও! বীরেশদ। ? দীপিকা হা-বোধক কয়েকটা দোল! দিল মাথার । বীরেশ্বর কি বলিয়াছে শুনিবার আগ্রহে প্রদীপ চঞ্চল হইয়! উঠিল। পরিষ্কার জিজ্ঞাসা! কর! চলে কি না, এই ভাবনায় ফাঁপরে পড়িয়া! গেল। শেষে অতি সংকোচের সঙ্গে কোমল সুরে বলিল, বীরেশদা কি বললে রে? তাই বলব নাকি তোর কাছে ?_দীপিকার চোখে মুখে একটা, সকৌতুক দীপ্তি খেলিয়! গেল ।-_দাঁদা একটা! বুদ্ধ, একেবারে । ৬০ জমি-শিকড়-আকাশ বয়সে মোটে এক বৎসরের ছোট, লেখাপড়া কিছু বেশি শেখা ছোট বোনের গালাগালে প্রদীপ খুশিই হয়। বলিল, তা পারবি কেন? গাল দিতে পারবি । আমি তোর গার্জন। আমাকে বুঝে-শুঝে দেখতে হবে না? দীপিকা মুহূর্তের মধ্যে একটু আনমনা হইয়! গভীর হইয়া পড়িয়াছে। হঠাৎ মৃদ্ৃস্বরে বলিল, দাদ, কালকে একবার বেড়াতে নিয়ে আয় | কাকে রে?--প্রদীপও তেঘনই জিজ্ঞাস! করিয়া বসিল। বীরেশদাকে ।-দীপিক! স্পষ্ট উচ্চারণ করিয়া বিরক্তির সুরে বলিল। ওঃ, বুঝেছি । কি? বুঝেছি ।-হাসিয়। আর একবার বলিল গুদীপ | দীপিক। প্রতিবাদ করিল না। নিঃশব্দে পাশ কাটাইয়া মনের মধ্যে ডুবিয়া গেল। প্রদীপ কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকিয়া! এক সময়ে বলিয়। উদ্ঠিল, বীরেশদ! বড় বইয়ের পোকা । কোন রকমের ফুতি-টুতি কিছুই নেই ।-_বলিয়াই মনে মনে জিহ্বায় কামড় দিল। কি ফুতি করবে ? না। আমি বলছি যে শুধু লেখাপড নিয়েই থাকেন । আর কোন দিকে বড়-_বিশেষ কোন--সখ-টখ নেই । বড় হবার জন্যে ধাদের ঝৌক চাপে, তোমাদের মত ফুতি-টুতি নিয়ে “থাকলে তাদের চলে ন1। প্রদীপ অত্যন্ত তক্তির সঙ্গে ঘাড় নাড়িয়! স্বীকার করিল, এ অবস্ত সত্যি কথ! । জমি-শিকড়-আকাশ ৬১, বীরেশ্বর মনের সঙ্গে তাল রাখিয়] ছুটিতেহিল । _ হাসছে কোধ হয়। খুশি হয়েছে খুব। হান্থুক। ক্রমে গতি কমিয়া আসিতেছে । মনেরও । একট1 আরামের নিশ্বাস ফেলিল বীরেশ্বর | _বলা হয়েছে সব কথা । স--ব কথাই, স্বপ্নের কথাও । মনে হহয়! তৃপ্তির হাসি ফুটিয়৷ উঠিল মুখে । অকারণে এই তৃপ্তিটুকুই বীরেশ্বরের মনটাকে অনেকক্ষণ পর্যন্ত দখল করিয়। রহিল । জ্বাল! সেই প্রলেপে ঢাকা পড়িয়। গেল যেন। একটা অনির্দিষ্ট মাধুর্য অস্পষ্ট ছায়ার মত মনটাকে ঢাকিয়। শান্ত কির রাখিল। ঘরে টুর্কিয়া আজ দরজা বন্ধ করিতে ভুলিয়! গেল। ঘণ্টাখানেক পরে ন্ণ্যন। ঘখন প্রবেশ করিলেন, বাঁরেশ্বর তখন বইয়ের মধ্যে ডুবিয়! গিয়াছে | ঠাকুরপে| 1--আস্তে আস্তে ডাকিলেন সুনয়ন| । বীরেশ্বর মুখ তুলিয়! চাহিল। কিন্তু চোখের মধ্যে তখ*ও মন আসে নাই। কি খবর বউর্দি? সুনয়ন! হাসিয়া! বলিলেন, কই, খবর এখনও হয় নি কিছু । এক- দিনেই বিয়ে হয়ে যাবে ভেবেছ বুঝি ? ও, নানা। ও তে! আমার মনেই নেই ।--মনে পড়িয়া গেল বীরেশখবরের | স্থনয়ন! বিশ্বাস করিয়াও বলিলেন, না, মনে নেই ! আচ্ছা, কোন্‌, দুঃখে তুমি আশ্রমে যেতে চেয়েছিলে বল তো? হো-হে। করিয়া হাসিয়! উঠিল বীরেশ্বর।--কার কাছে শুনলে ? পধাদা বলেছেন ? ৬২ জমি-শিকড়-আকাশ ঠ্যা। কি বললেন 1 বললেন সবই |-_সুনয়ন! গভীর হইলেন ।-_কি মানুষ তুমি বল তো? আমাদের কাছে বলা নেই কওয়া নেই, সরাসরি আশ্রমে একেবারে? আরে, না না। ক্ষেপ্ছে! একটু ইয়ারকি করলাম, বুঝলে না? বুঝেছি। জানি নে কোন্টা তোমার ইয়ারকি। যাকৃগে, শেষ পর্যস্ত রক্ষা করেছ এই ভাল। শেষ পর্যন্ত আমি রক্ষ! ক'রেই চলি, লক্ষ্য ক'রো। তবে আশ্রমে নাকি খাওয়।-দাওয়ার সুখ আছে। তোমার দাদা বলছিলেন ।-_হাসিয়। বলিলেন নুনয়ন! | সেই জন্তেই তো ।-__বলিয়! বীরেশ্বর আবার বইয়ের দিকে মন দিল। সে জন্তে, না, কিসের জন্যে, আমি জানি ।-_স্থুনয়না বলিলেন, তোমার দাদার কথ! ? অমন খাওয়ার দ্থখ মাথায় থাক। বীরেশ্বর 'পড়িতেছে দেখিলেন।-আর পড়তে হবে না এখন। খাবে চল। সুনয়না উঠিলেন। বীরেশ্বর বই বন্ধ করিয়! হঠাৎ বলিল, একটা! কথ| বউদি । আমাকে ন| জিজ্ঞেস ক'রে কাউকে কোন কথা দিও ন! কিন্তু। সুনয়ন! বীরেশ্বরের দিকে তাকাইয়! কি যেন বুঝিতে চেষ্ট! করিলেন। বলিলেন, না, তা দেব না। পি পরের দিন সকালবেলাতেই প্রাণ-মাতানো শব্দ তুলিয়| বলেন্দুর গাড়ি আসিয়া প্রদীপের বাড়ির সম্মুখে দীড়াইয়া গেল &ঁ যে বলেনদার গাড়ি !- প্রদীপ বলিয়! উঠিল। দীপিক! একবার কীপিয়! উঠিয়! শক্ত হইয়া গেল। মচমচ.শব্ধ-- দুরস্ত বৈশাখের মত প্রবেশ করিল বলেন্দু। প্রচ একটা উত্তাপ দীপিকার কাঠিন্ের আবরণ তেদ করিয়া আসিতেছে--দীপিকা বোধ করিল। এই থে প্রদীপ! চল, বেড়িয়ে আসবে | কোথায় ?- প্রদীপ তৎক্ষণ।ৎ রাজী হইয়া গেল যেন। ঘুমে। আমরা যাচ্ছি কেকে? আমার মাসতৃতে! বোনের বেড়াতে এমেছে। ওদের নিয়ে যেতে হবে। অনীতা-_-অনীতাকে তুমি দেখেছ তো ? হ্যা" বলিতে প্রদীপের মুখখানা পুলকিত হইয়া উঠিল । অনীতাঁ এসেছে । আবার বলিল বলেন্দু, সেযাবে। তোমাদের কথ! বললে ওর! | দীপিকাকে শিয়ে চল না? আমাদের বাড়িটা খালিই প'ড়ে আছে। কোন অসুবিধে নেই। প্রদীপ দমিয় গেল অনেকখানি | দীপি? ওযাবে? ও তো--। কি রে, তুই যেতে পারবি ? মুহূর্তের জন্ত একট নির্বাক শৃন্তত] বিরাজ করিতে লাগিল । ৬৪ জমি-খিকড়-আকাশ বলেন্দু তাড়াতাড়ি বলিল, কোন অন্থবিধে হবে না। অনীতা রয়েছে। প্রদীপও যাচ্ছে--কি বল প্রদীপ ? প্রদীপের উপর অস্ত্রটা অব্যর্থ লাগিয়াছে--বলেন্দুর সন্দেহ ছিল না। কিন্তু প্রদীপ দীপিকার সম্বন্ধে ততটা ভরস! পাইতেছিল না। বলিল, হ্যা। কিহবে? আমি থাকব, অশী--অনীতারা আছেন-- দ্রীপিক। বলিল । কিছু না ৰলিলে প্রদীপ কথাটাকে একান্ত করিয়া যে প্রশ্নের দিকে ঠেলিয়! লইয়া যাইতেছে সেটা! আরও স্পষ্ট হইয়! বিশ্রী হইয়া উঠিৰে--এই ভয়ে সন্ত্ত হইল দীপিক]। বলিল, মা মত দেবেন না যে। সে ভার আমার ।--বলেন্দু একট! অবলম্বন পাইয়। ধরিয়। ফেলিল । --তিনি আপত্তি করবেন না। কি বল প্রদীপ? প্রদীপ কিছু বলিতে পারিল না । কবে ?-_ দীপিকা এবার মৃদু প্রশ্ন করিল । আজই । আজই ?--প্রদ্দীপ এবার সভয়ে দীপিকার দিকে তাকাইল।-_ কিন্ত-_ অনীত। বলছে, ওদের বেশি সময় নেই যে। নইলে তো আজ না গেলেও চলত । প্রদীপ থামিয়া গেল। না না। ম! যেতে দেবেন না ।--দীপিকা শিহরিয়া উঠিল মনে মনে। সে ভার তো৷ আমার 1--বলেন্দু আরও শক্ত করিয়! বাধিয়া ফেলিল যেন ।--মা যদি মত দেন তা হ'লে তোমার আপত্তি নেই তো? দীপিক] চুপ করিয়। রহিল। বলেন্দু শরবিদ্ধ পাখিটিকে ধরিয়। তুলিবার জন্ত যেন উঠিয়া দীপিকার জমি-শিকড়-আকাশ ৬৫ কাছাকাছি গিয়া ধাডাইল। হঠাৎ একবার বিদ্রোহ করিয়া উঠিল দীপিকা ।--না না। আজ তে! হ'তেই পারে না। অজ কি করে যাব 1_-বলিয়। করুণ দৃিতে প্রনীপের পানে তাকাইল। কিন্তু কণ্ম্বরে বলেন্দু আশ্বস্ত হইল । প্রদীপও ৷ সে বলিল, কদিনেই ঘুরে আসব তো । না! কি বলেনদ1? কদিন থাকবেন ? দিন সাতেক, আবার কি ।--বলেন্দু বলিল। তৰে ? আর না হয় তো আমর! আগেও চ'লে আসতে পারি । এত ক'রে বলছেন গুরা ।-- প্রদীপ বলিল । দীপিকার মনের মধ্যেও এই ধরনের যুক্তি কে যেন ঠেলিয়া তুলিতেছিল | 'মন নয়। মন জানে দীপিকা! । মনের শিকড় যেখানে? মনের শিকড়-_বীরেশ্বর একদিন বলিয়াছিল দীপিকার মনে পড়ে । এই তো! কয়টা! দিন, শেষ বারের মত 1-ধুক্তি আসিতেছিল ।-- এদিককার শেষ দৃশ্বা। বাইরের | কিরে এসে য! বলব তার চেয়ে সত্যি আর কিআছে? তিনি বুঝবেন। নিশ্চয় বুঝবেন । আগুনে-পোড়া নির্মল জবাব পাবেন তখন-_ তা হ'লে এই কথা রইল ।--বলেন্টু তাগিদ দিল ।--ঠিক আড়াইটের সময় তোমাদের তুলে নিয়ে যাব । চল প্রনীপ, মায়ের মতটা নিই। না, না। দীপিকা তাড়াতাড়ি বাধ! দিয়া বলিল, আমরাই বলছি মাকে । যদি যাওয়া ন হয় তবে খবর দেব । হ্যা, তাই ভাল ।--প্রনীপ উঠিয়া বলিল, আপনি চ'লে যান বলেনদ| | মাকে আমরাই ঠিক ক'রে নেব এখন । আমি বড় তাই, আমি যখন সঙ্গে যাচ্ছি-- ্‌ ৫ ৬ ভমি-শিকড়-আকাশ সেই তো ।--বলেন্দু মুচকি হাসিয়। দীপিকার দিকে তাকাইল ।-_ আমি চললাম তা হ'লে। অনেক কাজ প'ড়ে আছে এখনও । বলেন্দু গটগট করিয়! বাহির হইয়! গেল । প্রদীপ একটা লাফ দিয়া উঠিল ।--চল, মাকে বলিগে। তুই তে| অনীতার জন্যে লাফাচ্ছিস।--দীপিক! বলিল, আর যা হয় 'হোকগে। কে বললে? দুর । হ্থর বদলাইয়া-_তুই দেখিস নি তাকে? ভারি চমৎকার মেয়ে ! তা আর বুঝতে পাচ্ছি নে? বাহির হইবার পূর্বে দীপিকা বলিল গোপনে, দাদা, খোন্‌। মাকে বলতে হবে, আমি যেতে চাই নি। তুই জোর ক'রে নিয়ে যাচ্ছিস। বুঝেছি ।_ প্রদীপও মৃহুত্বরে বলিল, তাই ভাল, চল্‌ । শান্তিলতা মত দিতে বাধ্য হইলেন । বরাবর যেমন হইতেছেন। মত দেওয়ার সম্পূর্ণ আগ্রহ সত্বেও এমন অবস্থার হ্মষ্টি করেন, দায়িত্ব ভার ঘাড়ে কোনদিনই থাকে না।--কি করব? আমার কথা শোনে নাকি ওর! 1--এই স্থুবিধাটা হাতে রাখেন। সাক সাজ. রব তুলিল প্রদীপ । দীপিকা! নীরবে কাঠের মত শক্ত দেহটা লইয়! ভূতে-পাওয়া রোগীর মত কাজ করিয়া যাইতে লাগিল । একট! চাপা! ভয় ছিল দীপিকার । বীরেশ্বরকে ডাকিয়া আনার প্রস্তাবটার কথ প্রদীপ যদি উল্লেখ করিয়া! বসে! বলিতেই হইবেস্- আমিযাব না। যাব ন!। কিন্ত প্রদীপের বুদ্ধিষত্তার কথাটা অন্ল্লেখিতই থাকিয়৷ গেল। হঠাৎ ধদি আসিয়া পড়েন! মনে হইতেই কাপড়: তাঁজ করিতে রত হাত দুইটা দীপিকার তৎক্ষণাৎ অচল হইয়া! গেল। জমি-শিকড়-আকাশ ৬৭ আবার ভাঁজ করিতে লাগিল । সকালবেলার রৌল্দের সঙ্গে সঙ্গে বীরেশ্বরের স্থিতপ্রজ্ঞ ভাব নষ্ট হইয় -আসিল। সাগরমলের টাক! পরিশোধের তারিখ আজ । বিলট! পাস হইয়াছে কি ন। খবরও নেওয়া হয় নাই। হিরণ মিত্রের সঙ্গে দেখা করিয়! সাগরমলের কাছে এক-আধ দিন সময় লইতে হইবে । সুবোধ লাহিড়ীর পার্কার-ফিফটিওয়ান আর পাওয়! যায় নাই। হাসি পাইল বীরেশ্বরের ।--অর্ডারট! হ'ল কি নাকেজানে! হবে তে! না-ই 'জানা কথা । তাগ্যক্রমে নিশিকাস্তর শেয়ারগুলি আদায় কর! গেছে। কুঞ্জবিহারীকে এখন আবার ধর! যায়, আগাম কিছু টাক! এখন পাওয়া যেতে পারে 1 সারাদিন কাদায় আকণ্ঠ ডুবিয়া থাকিবার শুফ্ুরস্ত সুযোগ । এ দিক দিয়। নিশ্চিন্ত হইয়া একপ্রকার নিষ্,র আনন্দ বোধ করিল বীরেশ্বর | কিন্ত কাছাকাছি যাইয়া! নোংরা স্থান মাড়াইবার ভয়ে সন্ত্রস্ত পথিকের মত থামিয়| পিছাইয়। গেল মনে মনে । শরীরট| বিষ্বোহ করিল | অব- শেষে নাক-মুখ বন্ধ করিয়া যেন কোন মতে একদমে প্রবেশ করিল সাগরমলের গদিতে । সাগরমল গভীর, বাকা স্থরে অভ্যর্থন৷ করিল ।--আছুন, আছুন। মনে পড়েছে নাকি বীরেশবাবূ ? এসব কথাবার্তা বীরেশ্বরের রীতিমত আয়ত্ত হইয়াছে । এক গাল হাসিয়। বলিল, মনে পড়বে না মানে? শয়নে-স্বপনে জেগে-ঘুমিয়ে আপনার কথাই তো ধ্যান করি । ভোলবার কি উপায় আছে নাকি? সে তো নেবার সময় (--সাগরমলও বোঝে সব।স্দেবার সময় "আৰার ভুলতে দোষ কি? ৬৮ জমি-শিকড়-আকাশ ভূললে আর আসব কেন বলুন ?--বীরেশ্বর আগের স্থরের জের টানিতে অক্ষম হইয়! হঠাৎ গভীর হইয়! পড়িল । এখন তে] আপনার দয়11--সাগরমল ছাড়িতে চাহিল না! । বলতে পারেন আপনি সবই। আপনি পাওনাদার ।-_বীরেশ্বর শরীরের যোচড়ট1 সামলাইয়া! বলিল, কিন্তু তারিখটাও তো! পেরোয় নি এখনও ? আজকের দিনট। তো আছে ? আজ দেবেন তা হ'লে?--সাগরমল হাসিয়! বলিল, তাই বলুন। আর, তারিখের কথা বললেন ?--লোহার আলমারিট! খুলিয়া একখানা চেক বাহির করিয়! বীরেশ্বরের সম্মুখে মেলিয়৷ ধরিল। বীরেশ্বরের সই-কর! চেক। আর একবার হাসিয়! বলিল, দেখলেন ? কদিন হ'ল আজ? বীরেশ্বর লঙ্জিত হইল । বপিল, পরশু দিন দেবার কথা ছিল । আমারই ভুল হয়েছে । চেকখান! টানিয়া সরাইয়া লইল সাগরমল। রাখিয়! দিয়া হাস্থ্য করিয়া বলিল, ভুল একটু হয় বাঙ্গালী-বাবুদের । মাছ আর সিগরেট কিনতে কিনতে ভূল হয়ে যায়। বীরেশ্বর দ্বিতীয় মোড় সামলাইতে একটু সময় লইল। নিন, বার করুন দেখি। পকেটে বেশিক্ষণ রাখলে আর কি লাভ হবে? ও, নানা। আজ আনতে পারি নি। বিলটা পাই নি কিনা । আর দুদিন সময় দিন সাগরমলবাবু । আরে, দে কি আমি বৃঝি নি বাবু ?-_-সাগরমল হাসিতে হাসিতেই বলিল, কথারই যদি ঠিক থাকল, তবে আর বাবু কিসে? সাগরমলের গালে একটা চড় বসাইয়| দিল বীরেশ্বর মনে মনে 1 কিন্ত, না । চলে চলিবে না। ঠেকিলে আবার উহার কাছেই আসিতে জমি-শিকড়-আকাশ ৬৯ হইবে । আর ঠেকিতে তে! হইবেই। দুই দিনের সময় লইয়া বীরেশ্বর উঠিয়া! আসিল । বমি বমি ভাব করিতে লাগিল শরীরে । সভয়ে স্মরণ করিল, মাত্র সাগরমল শেষ হইল । আরও অনেক বাকি আছে । পার্কার-ফিফটিওয়ান পাওয়া গেল আজ | সুবোধ লাহিভী খুশি হইয়। গেল ।--আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন বীরেশবাবু। অর্ডার যদি হয় তো] আপনারই হবে । হিরণ মিত্রের কাছে যাইতে হইশ ন। | বিলট! পাস হইয়! গিয়।ছে | শুধু সই করিয়া টাক! লইতে হইবে । বারেশ্বরের মনের গ্লানি ধুইরা মুছিয়। গেল । পৃথিবীটা তত খারাপ নয় । ভালও আছে । জানন্দে চোখে যেন জল আসিয়। পড়িল বীরেশ্বরের | সাগরমল ! আঃ-- সাগরমলের টাক সুদে-আসলে শোধ করিয়াও বেশ কিছু টাকা! হাতে থাকে বীরেশ্বর হিসাব করিয়া দেখিল । কাশ্মীর যেতে হবে । আর কিছু বই। চেক ব্যাঙ্কে জম দিয়। টাক তুপরিয়। সঙ্গে সঙ্গে সাগরমলের গর্দিতে উপস্থিত হইল আবার । বলিল, নেখি আমার চেকখানা বার করুন তো । নগদ টাকাই নিয়ে এলাম। সাগরমল সন্থষ্ট হইল না । টাকাটা! কয়দিন আবার হয়তো! ঘরে বসিয়। থাকিবে । বলিল, রাগ করেছেন নাকি বীরেশ্বরবাবু ? না, রাগ করবার কি আছে! আমার দরকারের সময় আপনি তো! আমার উপকারই করেছেন । তবে, একট! কথা মনে রাখবেন । কথা ব্রক্ষ। করবার জন্তে আমি যথেষ্ট চেষ্টা করি। সবাই এক রকম নয় | তা বটেই তো, বটেই তো। ৭০ জমি-শিকড়-আকাশ বাহির হইয়াই বীরেশ্বরের অন্থতাপ হইল, অত্যন্ত বোক! উক্তি করা: হইয়াছে ভাবিয়! | এই সব হালাম! শেব করিয়। বাড়ি ফিরিতে বীরেশ্বরের প্রায় তিনটা! বাজিয়া গেল। বাজুক। বীরেশ্বরের আজ কোন ক্লান্তি নাই। সুনগ্নন। খানিকক্ষণ বকিয়। লইয়। খাইতে দিলেন । বউদি !--বীরেশ্বর খাইতে বসিয়া! বলিল, আমি মাস তিনেকের জন্তে বাইরে যাচ্ছি । দাদাকে ব'লো। কবে? কালকেই। কি হ'ল আবার ?-_হ্থুনয়ন! সন্দিপ্ধ কঠে বলিলেন। বেড়াতে যাব। তুমি তিন মাস ধ'রে বেড়াবে, আর তোমার বিয়ে কি আমি৷ করব? কার বিয়ে ?- প্রশ্ন করিয়াই বীরেশ্বর হাসিয়া উঠিল।-_বিয়ে-টিয়ে আমি করব না বউদ্দি। ঘুরে এসে যা হয় দেখা যাবে। বেশ কথা ! ওসব হবে না ঠাকুরপো। | বিয়ে ক'রে তারপর যেখানে খুশি বেড়াতে য1ও তুমি । বীরেশ্বর নীরবে হাসিল একটু । স্বনয়না রাগ করিয়! বলিলেন, তবে তুমি বললে কেন? তোমার' কথায়ই তো! উনি খোজ-খবর করছেন । মানা ক'রে দিও ।--বীরেশ্বর সভয়ে বলিল, ঝৌঁকের মাথায় ব'লে, ফেলেছিলাম বউদ্দি। এখন আমার সময়ই নেই-_ স্বনয়ন! রাগ করিতে গিয়া! হাসিয়া ফেলিলেন। তখনকার মত চুপ করিয়। গেলেন। জমি-শিকড়-মাকাশ ৭১ রাত্রিতে বীরেশ্বর বেড়াইয়া ফিরিবার পর স্ুনয়নার কাছে খবরটা' পাইল। তুমি কি দাজিলিং যাচ্ছ নাকি ঠাকুরপো ? না, ঘুমে ?-স্থনয়না প্রথমেই ঠাট্টার স্থুরে প্রশ্থ করলেন। নাতো! । হ্যা, আয !--ম্ুনয়ন! জোর দিয়া বলিলেন, আমি খবর নিয়েছি সব । বীরেশ্বর একটু চমকিয়া উঠিল ।__কি খবর? কোথায় কিসের খবর ? জানি সব।-_সুনয়না ভ্রতঙ্গী করিয়া! বলিলেন, স-ব জানি। দীপিকারা দাঞ্ছিলিং গেছে । দাঞ্জিলিং না তো-_ঘুমে । তুমি কাল যাচ্ছ । বীরেশ্বরের ক্ষণকালের জন্ত বাকৃরোধ হইয়া গেল। অজ্ঞাতে মৃছ প্রশ্ন নির্গত হইল, কার সঙ্গে গেল? ওর 'ভাই গেছে। বলেন্দু নকি! সে গেছে। তাদের বাঙ্র মেয়ের গেছে । ওদের বাড়ি আছে তো! ঘুমে? সেখানে থাকবে । অসহা জালায় বীরেশ্বর বজ্তমুষ্টিতে দীপিকার গলা চাপিয়! ধরিল। গায়ের মাংস নখে ছি'ড়িয়া ফেলিতে লাগিল যেন। অবশেষে ধাক্কা দিয়। মাটিতে ফেলিয়া! দিয়! ছুটিয়। বাহির হইয়! আসিল বীরেশ্বর-- হাপাইতেছিল। কিছুই করিতে না পারিয়। অক্ষম আক্রোশে বীরেশ্বর হাঁপাইতে হীপাইতে বেগে ম্থুময়নার সম্বুখ হইতে সরিয়৷ গেল। ন্থনয়না স্তভিত হইয়া গিয়াছিলেন ।- ঠাকুরপো, শোন, শোন ।-- পিছনে পিছনে বৃথাই ভাকিলেন বার কয়েক | ঘণ্টাখানেক পরে বীরেশ্বর ফিরিয়া আসিল। সুনয়ন! তখন সর্বেশ্বরের নিকট কি বলিতেছিলেন। বীরেশ্বর হালকা স্তরে ডাক দিল, বউদি, খেতে দাও । ৭২ জমি-শিকড়-আকাশ সুনয়ন! তৎক্ষণাৎ চলিয়া আসিলেন। বীরেশ্বরের চোখের দিকে একবার তাকাই শুধু বলিলেন, চল। বীরেখ্বর হান্তের ভঙ্গী করিয়! বলিল, তোমার কি বৃদ্ধি বল তে! বউদি? আমিযাব কতদূরে, কতদিনের জন্যে! ওরা যে গেছে তাই আমি জানি নে। ও! আমি তেবেছিলাম তুমি জান |--স্ুনয়ন! সহজ স্থুরে বলিলেন । কিছু ন|।--শীরেশ্বর বলিল, আমাকে বলে নি তো । শিরাগুলি আবার যেন বিশ্বাসঘাতকতা! করিয়া! মাথা তুলিতেছে ! সশব্ে হাসিয়া উঠিল ।--কি সব ধারণা বউদির ! তোমাকে সত্যি বলে শি, ওর! যাবে ?--ম্থনয়না ধীরে ধীরে হিজ্ঞাস। করিলেন। ন1। আমাকে কেন বলবে? ন্থনয়না৷ আর কথা বলিলেন ন|। পরের দিন বীরেশ্বর যত দূরের টিকেট পাওয়া যাঁয় একখান! কিনিয়া লইয়। ট্রেনে চাপিয়া বসিল। জানালা! দিয়] মুখ বাহির করিয়। পিছনের দিকে অপস্থয়মান শহরের আলোর দিকে কিছুকাল তাকাইয়৷ রহিল। উপরের এই মায়াজালের আবরণের নীচে কত গ্লানি, কত ক্লেদ, কত বিড়ম্বনা আছে বীরেশ্বর জানে । মুখ ফিরাইয়! সম্মুখের দিকে তাকাইল | বাতাসের ঝাপটা লাগিয়া চক্ষু বন্ধ হইয়া গেল। ছুর্দাস্ত বেগে দুরে সরিয়! যাইতেছে অন্থভব করিল শুধু । নিরুদ্দেশ যাত্রার আবেশ আসিয়া গেল বীরেশ্বরের। ৮০ পথে অনেকক্ষণ পর্যন্ত দীপিকার মনের মধ্যে কাটার মত একটা অস্বস্তি বিধিয়৷ রহিল ।--অন্তায়, অত্যন্ত অন্যায় হ'ল । সমতল ছাঁড়ির! পাহাঁডের গায়ে গায়ে যখন উপরের দিকে উঠিতে লাগিল, অস্বস্তির কাটা তখন নীচের দিকে সবুজ সমতলের সঙ্গে ক্রমে মিশিয়া গেল। পাহাড়ের বিচিত্র দৃশ্তে, আনন্দ কলরবে, হাসিতে ঠা্টায় মনের যে সমতলে ছোটখাট বিচার বিবেচনা রাজত্ব করে সেটা নীচে পড়িয়। গেল। উপরে উঠিলে ওজন কমে । দীপিক! শুনিয়াছিল। মনের মধ্যে সেটা অনুভব করিল আজ । অনীতার সঙ্গে পাল্ল! দিয়া কলহান্তে গডাইয়! পড়িতেছিল অনীতার গায়ের উপর । অনীতার মতই। পুরুষ বলেন্দুর দিকে আডচোখে দীপিক1 চাহিয়া! দেখিতেছিল মাঝে মাঝে । বলেন্দু মহাদেবের মত চটুল নারীর বোঝা বৃকের উপর ধারণ করিয়া আনন্দে বহন করিতেছিল। তার প্রশস্ত বক্ষের নিরাপদ আশ্রয় স্বতঃসিদ্ধের মত দীপিকার মনের তলায় কাছ করিয়া যাইতেছে । আর প্রদীপ অনীতার প্রতি অঙ্গ-সঝালনের চারিপাশে পায়রার মত নৃতা করিতেছে । চমৎকার স্বপ্নের মত ছোট বাড়িখাঁন! বলেন্দুর । শৌছিয়া দীপিকার! সকলে ঘুরিয়! ঘুরিয়া দেখিল। চমৎকার !-_-মনে মনে বলিল দীপিকা । পরের দিন হইতে বলেন্দু দীপিকাদের হাওয়ায় উডাইয়া লইয়া 'বেড়াইতে লাগিল । অবশ বিলাসে দেহট! যেন ছাড়ির। দিল দীপিকা | ণ৪ জমি-শিকড়-আকাশ খাঁড়া চড়াই পাইলে বলেন্দু দীপিকার দিকে হাতট! আগাইয়া। দিয়া অনীতাকে বলে, অনী, তুই প্রদীপের হাত ধর্‌। প্রদীপ সঙ্গে সঙ্গে পিছন ফিরিয়! নির্বোধের মত ছুই হাতই আগাইয়া, দেয়। অনীতা! খিলখিল করিয়া! হাসিয়া! উঠে ।_-এক হাতে পারবেন না. বুঝি? হাটবেন কি ক'রে? প্রদীপ লাল হইয়! বলে, বলে, বাঃ, পারব না! মানে? আপনি তে: হালকা একেবারে ! দাপিকা বলেন্দুর হাত চাপিয়! ধরিয়া! বলে, তুই জানলি কখন দাদা ?: এবার অনীতার লাল হইবার পাল! । বলেন্দু দীপিকার হাতের মধ্যে একট বাড়তি চাপ দিয়! হাসে । দীপিকা এইটুকুতেই বেপরোয়া অসতীত্বের আনন্দ তোগ করে যেন। মাঝে মাঝে বীরেশ্বর সমতল হইতে মাথা তুলিয়! উকি মারিয়া মিলাইয়! যায় ছায়াবাজীর মত । কিন্তু অনেক দুরে_অনেক নীচে । বলেন্টু নিশ্চিন্ত হইয়া! প্রথম দিন-তিনেক অপেক্ষা করিল । কিন্ত ক্রমে চঞ্চল এবং অসহিষ্ণু হইয়! উঠিতে লাগিল । সময় ফুরাইয়া আসিতেছে ।. দীপিক! সেদিন শরীর খারাপ বলিয়া! বাহির হইল না। থাক্‌, শরীর খারাপ বোধ করছ যখন, বেরিয়ে কাজ নেই ।--বলেন্দু শাস্ততাবে উপদেশ দিল। ইঙ্জিতের আনন্দে শরীরের তারগুলি তাহার যেন ঝনঝন করিয়া! উঠিল। হাসিল মনে মনে। আর সকলকে লইয়! বলেন্ু বাহির হইল। চলিতে চলিতে রাস্তার মাঝখানে হঠাৎ এক জায়গায় থামিয়া বলেন্টু বলিয়া উঠিল, ও১হে! | প্রদীপ, তুমি তাই অনীকে নিয়ে যাও ৯ আমার একটু কাজ আছে অস্কখানে । জমি-শিকড়-আকাশ ৭৫. প্রদীপ নাচিয়! উঠিল ।--বেশ তো । আমরা এগোই । আপনি কাজ সেরে আসুন । আমার আর যাওরা হবে না বোধ হয় ।--বলেন্দু বলিল, দেরি হবে ওখানে । আচ্ছ!, দেখ! যাবে । তোমর। যাও তো। বলেন্কু খসিয়! পিল । একটু ঘুরিয়! দ্রুতপদে বলেন্দু বাসায় ফিরিল। পা! দুইটা শরীরের' সঙ্গে সমান বেগে চলিতে পারে ন বলিয়া বলেন্দু আরও অশান্ত হইয়া পড়িল। পায়ে হাটা এই জন্যই সে পছন্দ করে না কোনদিন | দীপিকা তখন গল্পের বই পড়িতেছিল বসিয়!__ যথাসম্ভব নিঃশব্দে প্রবেশ করিল বলেন্দু। ৩িস্ত সামান্য শবেও' দীপিকা টের পাইল | মুখ তুপিতে পারিল না । অপলক চক্ষে বইয়ের পাতার উপর আবদ্ধ হইয়া! পড়িল। দেহটা যেন জমাট বাধিয়! নিশ্চল' হইয! গেল। বলেন্দু দরজার ভিতরে মুহূর্তের জন্য থামিয়া দীপিকাকে পিছন হইতে আগাগোডা একবার দেখিয়া লইল। রাশট1 একটু টানিয়া লইল ঘেন। ধীর পদে দীপিকার কাছে গিয়! দাড়াইল। এবার মুখ না তুলিয়া! উপায় নাই। ছুই জোড়া চক্ষু পরস্পরকে ভেদ করিতে লাগিল । বলেন্দু যেন দীপিকার চক্ষের একটা পলক পড়িবার অপেক্ষায় উদ্যত হইয়া রহিল। নিরিমেষে মুযূযু€ দৃষ্টিটা বলেন্দুকে ঠেকাইয়া রাখিতেছে। কখন এলেন ?--পলক ফেলিবার পূর্ব মুহ্তে” দীপিকা! জিজ্ঞাসা! করিল, ওরা আসে নি? না। জবাবের ছোট শষ্টার সজে শরীরের তাপ বলেম্ুর অনেকখানি ৭৬ জমি-শিকড়-আকাশ বাহির হুইয়া গেল। তারগুলি টিল হইল একটু । একটু নড়িয়া-চভিয়! দীপিকার বিছানার উপর বসিল। দীপিকার শরীরের উপর দিয় যেন ঝড় বহিয়া গিশাছে। অবসন্ন 'কগ্ম্বরে ধীরে ধীরে বলিল, মাথাট! ধরেছিল । অনেকট! কমেছে এখন । বলেন্দু তাকাইল। মুখের কোণে একটু হাসি ফুটাইয়া তুলিল। বুঝিতে পারিয়! এবার সহজ লজ্জায় মাথা নত করিল দীপিকা । কপালে হাতট! বুলাইয়! আবার বলিল, এখনও আছে--অনেকটা কম। বলেন্দু অপৌরুষের গ্রানিতে ক্রমশ নিজের উপর জ্ুদ্ধ হইয়! উঠিতেছিল। এমন কোনদিন হয় নাই তার। একটু সরিয়া বসিয়া সহসা দীপিকার কপালে হাত রািল।-__ জ্র-টর হয় নি তে! ?-_দীপিকার ব! হাত টানিয়। হইল হাতের মধ্যে কিছু একট! করিবার ব! ধরিবার তাড়নায় | না, জবর হর নি হাতটা! ব্ছ আকর্ষণ করিয়! একটু ধর! গলায় বলিল, তুমি শোও । আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি । দীপিক1 হাতটা টানিতে পারিল না। যেটুকু শক্তি ছিল হাত পর্যস্ত পৌছায় না। শুধু বলিল, এখন তাল আছি একট্-__ বলেন্দু স্থির দৃষ্টিতে দীপিকার চক্ষু ুইটি ধরিনা ফেলিল। হাতখানা বলেন্দুর হাতের মধ্যেই ছিল তখনও । মুঠি দুঢ হইতে হইতে জবর দেখার আবরণটুকু ছছুড়িয়া গেল। সত্য এবার নগ্ন মুতিতে মুখামুখী হইল। এই অজ্ঞান অবস্থার জন্যই যেন এতক্ষণ বিলম্ব করিতেছিল বলেন্দু। হাতখানা নামিয়া রাখিয়া উঠিয়া দীড়াইল। অস্পষ্ট কণ্ঠে বলিল, হাওয়! আসছে । দরজাটা বন্ধ ক'রে দি। দীপিক। চক্ষু যুদিয়া খোলা বইয়ের উপর মাথা রাখিয়া পড়িয়া জমি-শিকড়-আকাশ ৭৭. রহিল। বলেন্দুর পায়ের শব্দ অনিবার্য মৃত্যুর মত কাছে আসিতেছে, হৃৎপিণ্ডের তালে তালে শুনিতে লাগিল। অকম্মাৎ বলেন্দুর স্পর্শে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মত ছিটকাইয় উঠিল দীপিকা ।-_নাঁ-না_নানাঁ। ন|-- বলিতে বলিতে পিছাইয়া দেওয়ালে ঠেস দিয়া দ্রীড়াইল। চোখ বুজিয়! ক্রমাগত চাপা আর্তনাদ করিয়! চলিল, না__না-_ন1। বলেন্দু অসহ্ বিদ্ময়ে ভ্রকুটি করিয়! স্তব্ধ হইয়! রহিল । দীপিক! ক্ষণপরে চোখ মেলিল। তয় ঘুচিয়া গিয়াছে যেন। বলিল, দরজ1 খুলে দিন--দিন-- বলেন্দু নড়িল না। তীব্র জালাময় দৃষ্টিতে দীপিকাকে যেন দগ্চ করিতে চাহিল। বলিল, এই শেষ কথা ? হ্য। | বলিতে লজ্জায় ঘ্বণায় মুখ ঢাকিল দীপিকা তা হ'লে সবই মিথ্যে? সবই ভঙ্গী? সব ভূল-_-ভূল-- ভুল ?-বলেন্দু বিদ্রপের সুরে বলিয়৷ উঠিল, এ রকম তুল মাঝে মাঝেই কর তে? দীপিকা! আবার মুখ ঢাকিল। কোন্ট! ভূল 1-_বলেন্দু হঠাৎ প্রশ্ন করিল। দীপিক! নিরুত্বর রহিল। বলেন্দু পীড়াপীড়ি করিল না । হঠাৎ অতিশয় ক্লাস্তি বোধ করিল। কথা কাটাকাটিতে শরীরট। যেন শিথিল হইয়! গিয়াছে। ধীরে ধীরে দরজা খুলিয় বাহির হইয়া গেল। দীপিকা আরও কিছুকাল তেমনই ীড়াইয়৷ রহিল। ক্রমে! ৮ জমি-শিকড়-আকাশ অযৌক্তিক এক টুকর! হাসি ফুটিল মুখে। কিন্তু তৎক্ষণাৎ হাসিট! চাপিয়! মারিয়া ফেলিল। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করিয়া! পা টিপির়! টিপিয়া দরজার কাছে শিয়। দড়াইল। কান পাতিয়া! খানিকক্ষণ সেখানে অপেক্ষ। করিয়। 'মাথাট! বাহির করির! এদিক-ওদিক তাকাইয়! দেখিল। বলেন্দু নাই। অহেতুক ককণায় ভরিয়। উঠ্ঠিল মনট। রাস্তায় নামিয়! বলেন্দু অবশেষে হাসিল । ক্ষমা! করিল দীপিকাকে । অপমানের গ্লানিটা কেমন করিয়া যেন ধীরে ধীরে মুছিয়! গেল ।-_ আমারই দোষ। বোকার মত দেরি করার ফল। সেঠিকই করেছে। যা কর! উচিত । কিন্তু ভূলট! কি 1 প্রশ্বটা মাঝে মাঝে বি'ধিতেছিল। অনীত! প্রদীপের সঙ্গে অনেকক্ষণ এক! আছে। জাগ্রত কতব্য- বুদ্ধির তাড়ায় বলেন্দু বেগ বাড়াইয়া দিল। অনীতার ছোট বোনও সঙ্গে আছে । কিন্ত সে নিতান্ত ছোট । রাত্রিতে নিরিবিলিতে দীপিক1 প্রদীপকে বলিল, কাঁল আমাদের যেতে হবে । তুই বল্‌ বলেনবাবুর কাছে। প্রদীপ আকাশ হইতে পড়িল।--কেন ? হ্যা। কেন আবার কি? বাড়ি যাব না? যাবই ত1| একসঙেই যাব। ছুদিনের জন্তে আগে যাৰ কেন? ত৷ ছাড়া ওরা যেতেই দেবে না যে। দেবে । দ্বিক ন৷ দিক, আমাকে যেতেই হবে । প্রদীপ প্রমাদ গণিল। স্বেছের হ্থুরে বলিল, কেন, কি হয়েছে বল্‌ “তো? কিছুহয়নি। আমিযাব। জমি-শিকড়-আকাশ ৮৯ প্রদীপ অভিভাবকের মত ধমক দিল এবার ।--যাৰ বললেই যাওয়া হয় নাকি? বেশ, আমি একাই যাঁব তবে ।-দীপিক! শেষ কথা ভানাইয়! দিল। __তুই যাবি নে জানি আমি। দীপিকা যাইতে উদ্যত হইল । কোথা যাস্‌, শোন্‌ ?--প্রদীপ বিব্রত হইয়া পড়িল | ওর! কি মনে করনেন বল দেখি? একটা কারণ তো! বলতে হবে? কিছুই বলতে হবে না| ।--দীপিক1 বলিল । আমরা যাব, তাই বলতে হবে। অনীতা৷ আসিয়া পড়িল। প্রদীপ চোখের ইঙ্গিতে মিনতি করিয়া নিষেধ করিল দীপিকাকে । তাড়াতাড়ি মুখের একট! ভঙ্গী করিয়া জানাইল, যা বলবার আমি বলৰ। তাড়াতাড়ি খাওয়। সেরে শুয়ে পড়তে হবে দীপিকা ।--অনীত। বলিল, শেষ রাত্রে বেরুতে হবে । আবার 1-_দীপিকা অনীতার হালক! স্থরে বলিল, একদিন তে। দেখলাম ভাই। রোজ রোজ ভাল লাগে না। কালকেই শেষ । আর তো যাব না। কি বলেন প্রদীপবাবু? প্রদীপ ভয়ে ভয়ে জোর দিয়! বলিয়া উঠিল, নিশ্চয় | কি নিশ্চয় 1--হাসিয়! উঠিল অনীতা। কাল যেতে হবে টাইগার হিলে। হ্যা, ঠিক ।--অনীতা হাসিমুখে দীপিকার দিকে চাহিল।--আপনি (িস্ত 'না' বললে শুনব না। দেখা যাক । শেষরাত্রে ঠিক কর! যাবে ।--দীপিক। চাঁপা দিতে চাহিল। দেখা যাবে । না গ্রেলে ছাড়ৰও না তো। ৮০ জমি-শিকড়-আকাশ কোন জবাব দিল না দীপিকা । চলুন, বলেনদ! ডাকছেন আপনাকে ।--বলিপ্না টানিয়৷ লইয়া! চলিল দ্রীপিকাকে । পিছন ফিরিয়া প্রদীপের দিকে চাহিয়া করুণা করিয়! একটু হাসিয়া! বলিল, আপনি যাবেন না? একটা টিপ খাইয়া তালপাতার সেপাইয়ের মত লাফাইয়া' উঠিল প্রদীপ, বলিল, হ্য। যাচ্ছি। দরজার কাছে গিয়! দীপিকা শক্ত হইয়া দাড়াইল।_থাকৃ। এখন নয় । কি হ'ল?-_অনীতা বিস্মিত হইল । কিছু না, চনুন।--বলিয়া এবার নিজেই আগাইয়! গেল। বলেন্দুর ঘরে ঢুকিয়! দীপিকাই প্রথম কথা বলিল, কি, শুয়ে পড়েছেন যে? বলেন্দু জবাব ন! দিয়! নির্বাক দৃষ্টিতে মুহূর্তের জন্য তাকাইয়া রহিল । পরে বলিল, শরীরট| ভাল নেই ।--বলিয়া একটু হাসিয়া লইল। মুখ ফিরাইয়৷ লজ্জব! গোপন করিল দীপিকা ।__মাথ| ধরেছে? হ্যা। দীপিকা নিজেকে তীত্র ভথ্পনা! করিয়া উঠিল মনে মনে ।-:এ কি হচ্ছে? আবার? মুখে মুচকি হাসিয়া বলিল, মাথায় হাত বুলিয়ে দোব ? পিছনে ছুটিয়াও কথাটাকে ফিরাইয়৷ আনিতে পারিল না আর। নিজের ওপর চাবুক কবিল দীপিকা । ছিঃ ছিঃ! বলেন্দু নিশ্চিন্ত হইল । হাসিমুখে বলিল, দিলে তাল হয়। কিন্ত কে দেবে? দীপিকাকে শিয়রে বসিয়া বলেন্দুর কপালে হাত রাখিতে হইল। জমি-শিকড়-আঁকাশ ৮১ রাগে লজ্জায় কোন কথ! বলিতে পারিল ন|। অনীতা! বলিল, মাথা! ধরেছে, এতক্ষণ বলেন নি কেন? একবার স্পর্শ করিয়াই আকম্মিকভাবে উঠ্ঠিয়৷ পড়িল দীপিকা । অনীতাকে বলিল, আপনি বস্থুন ভাই। আমার একটু কাজ আছে। _ বলিরা মুহুর্ত অপেক্ষা করিল না । কারও দিকে চাহিল না। চলিয়া গেল । বলেন্দুর ভর ঈষৎ কুঞ্চিত হইল । অনীতা বসিল শিয়রে। প্রদীপ হতবৃদ্ধির মত মিনিট খানেক কাটাইয়! দীপিকার অন্থসরণ করিল । অনীতার হাত ঠেলিয়। বলেন্দু উঠিয়া বসিল ।-_থাক্‌, সেরে গেছে । অনীতা টান দিয়! আবার শোয়াইতে চেষ্টা করিয়! বলিল, সারুক | আপনি গুয়ে থাকুন না । দীপিকাকে ডেকে দোব ? না ।-_বলিয়! উঠিয়! দাড়াইল বলেন্দু। ভোরের দিকে অনীতা| জাগিয়াও চুপচাপ পড়িয়া! রহিল। কিছুক্ষণ '্-পাঁশ ও-পাঁশ করিয়া আস্তে আস্তে ভাক দিল, দীপিকার্দি ! ধরা গলায় পাশের বিছানা হইতে সঙ্গে সঙ্গে সাড়! দিল দীপিকা । জেগে আছেন 1_-অনীতা! একটু বিন্িত হইল। হ্যা, অনেকক্ষণ । যাবেন ? একটু বিলম্বে জবাব দিল দীপিকা_না ভাই । অনীতা৷ কারণ জিজ্ঞাসা করিল না। ক্ষণেক থামিয়! থাকিয়া শুধু বলিল, আপনি না গেলে বলেপদাও যাবেন না । আমার যাবার উপায় নেই ভাই। ৮২ জমি-শিকড়-আকাশ উপায় নেই? না, আমাকে আজকেই যেতে হবে। অনীতা৷ মাথা উচু করিল।--কোথায় ? বাড়ি। অনীতার কৌতুহল অদম্য হইয়া উঠিল। বলিল, কি হয়েছে, আমায় বলবেন ? বলিবার কথা দীপিকার হৃদয় ভরিয়। ছাপাইয়া উঠিয়াছিল। ভোরের আবছায়! আলোর মধ্যে মনের এক অংশ উপরে উঠিয়া সমস্ত অস্পষ্টত1 ডুবাইয়া দিয়া নিছক প্রেমের স্বপ্পে বিভোর করিয়া তুলিতেছিল। বলব ।--দীপিকা নাটকীয় উচ্ছাসে আরম্ভ করিল।- আপনার বলেনদাঁকে বলবেন, আমাকে যেন তিনি ক্ষমা করেন । অনীত। নিশ্বাস বন্ধ করিয়। লইল। দীপিকার হঠাৎ কান্না পাইল। নেকক্ষণ আর কিছু বলিতে পারিল না। বলেনদাকে বলব ?__অনীতা মনে করাইয়! দিল । ই্যা_দীপিক| সিক্ত কণ্ঠে জবাব দিল।- আমাকে ক্ষম। করেন যেন। আমি-_আমার মন--আমার অধিকারে নেই। আমি একজ'কে-_ কাকে ?--অনীতা শত চেষ্টাতেও ধৈর্য রক্ষা করিতে পারিল ন। একদিন সবই জানতে পারবেন। সব বলব। কিন্ত, আজ নয়। অনীত। নিরুপায় বোধ করিয়! আকুল হুইয়! উঠিল। আস্তে আস্তে বলিল, আপনার সঙ্গে আর শিগগির দেখা হচ্ছে না ষে। দেখা হবে। জমি-শিকড়-আকাশ ৮৩ ওখানে গিয়ে একদিনের বেশি থাকতে পারব না কিন]! দীপিকা একটুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া বলিল, সেই দিনই হবে। আজ না। আজ আমায় মাপ করবেন। দিনের আলোতে ভোরের আমেজ ক্রমে শুকাইয়া৷ গেল। কিন্ত দৃঢ়তাটুকু টিকিয়া৷ রহিল। অনীতা অনেক পীড়াপীঙি করিয়াও নিবৃত্ত করিতে ন! পারিয়া অবশেষে অতিমানে বলিল, ত হ'লে চলুন, আমরাও যাচ্ছি। একসঙ্গে এসেছি, একসঙেই যাব। অনীতাও বীধা-ছাদা করিতে আর্ত করিল। বলেন্দু রাগে গুম হইয়! বসিয়। ছিল। অনীত! আসিয়া বলিল, না, ও'রা থাকবেন ন! কিছুতেই | বেশ তো! । বলছে কে থাকতে ? অনীতা বলিল, ওদের একা যেতে দেওয়! ভাল দেখায় না। চলুন, আমরাও চ'লে যাই। তাই চল।--বলেনু তৎক্ষণাৎ সম্মত হইল | অনীতা! কিছুক্ষণ চুপ করিয়া দী'াইয়! থাকিয়া! হাতের আঙুল টিপিতে টিপিতে বলিল, দীপিকাদি রাতেই বলছিলেন আপনাকে বলবার জন্যে কি? বলেছিলেন, তাঁকে যেন ক্ষমা করেন আপনি । কেন? উনি আর একজনকে তালবাসেন | ও;ঃ| অনীতা বলেন্দুর মুখের তাৰ লক্ষ্য করিতেছিল। ধ দালাল বীরেশ্বর !-_বলেন্দু তীক্ষ তাচ্ছিল্যের স্থুরে বলিয়৷ উঠিল, শপ ] ৮৪ জমি-শিকড়-আকাশ বেশ তো! তাল তিনি বাস্থন না তাকে । মানা করছে কে? না। তাই বললেন আর কি।--অনীতা গতিক খারাপ বুঝিয়া সরিয়৷ গেল । গাড়িতে এক কোণে বসিয়া ছিল দীপিকা । প্রেম-গরিমায় গরীয়সী মনে হইতেছিল নিভেকে ।- উত্তীর্ণ! তিনি বুঝিবেন। একটা কথা তীক্ষ এক টুকর! ব্যঙ্গের মত সঙ্গে সঙ্গে পীড়। দিতেছিল।--আপনার বলেনদাকে বলবেন_তিনি যেন আমাকে ক্ষম] করেন। আর একজনকে ভালবাসি আমি, নইলে তো! রাজীই হতাম। এই? ছিঃ-_ছিঃ__ শরীরট! শিহরিয়া উঠিল । একটু হাসিও ফুটিয়৷ উঠিল মনের কোণে। ১১ রবিবারের সকালবেলায় সর্বেশ্বরের বাহিরের ঘরে স্বামীজী. 'অপেক্ষ! করিতেছিলেন। সর্বেশ্বর আসিবামাত্র বলিলেন, চলুন তো একটু সবেশ্বরবাবু। সৌম্যযৃতি সর্বেশ্বর আসন লইয়! বলিলেন, কোথায়? শ্রীমস্তবাবুর ওখানে । ভদ্রলোক বড় প্রবঞ্চন! করছেন। কিরকম? আর বলেন কেন! তিন হাজার টাকা আশ্রমকে ডোনেশন দেবেন ব'লে ওর স্ত্রীর নামে গেট! করিয়ে নিয়েছেন--ললিতা-স্ুন্দরী গেট । হ্যা, সে তো শুনেছি । এক হাজার আগাম দিয়েছিলেন। বাকি টাকা আর দিচ্ছেন না ।, "আজ কাল করতে করতে এক মাস ধ'রে অনবরত ঘোরাচ্ছেন। লোকট। অতি বজ্জাত তো! ? জমি-শিকড়-আকাঁশ ৮৫ হাঢ়-বজ্জাত। কি করতে চাঁন এখন ? আজকে শেষ কথা শুনে আসতে চাই। আপনিও একটু বলুন। তাঁরপর ঘ! হয় একটা ব্যবস্থা! করতে হবে। টাকারও খুব দরকার থে। -_ গোৌড়ানন্দ উৎকণঠার স্থুরে বলিলেন, উত্সবের আর দেরি নেই তো । কোন্‌ উৎসব ?--সর্বেশ্বর মনে করিতে পারিলেন না । আমাদের প্রতিষ্ঠা-দিবস। ও, প্রতিষ্ঠা-দিবস এসে পড়েছে ? আর এক মাসও নেই | তবে তো আর সময়ই নেই। গৌড়ানন্দ চিন্তিত হইয়া উঠিলেন।--চলুন একবার । শুর সঙ্গে একটা বোঝাপড়া আজ করতেই হবে। চলুন। কিন্ত ভাবছি--যে রকম লোক-_গালমন্দ দিয়ে ফেলব । অবশ্ত গীতা পাঠ করি, রাগ করা আমার চলে না। কিন্তু রাগ হবেই, সামলাতে পারব না। বলিয়া একটু লজ্জিত হইলেন সর্বেশ্বর। উক্তিট৷ একজন হেডমাস্টারের মত হয় নাই । আবার ঈষৎ হাঁসিয়। বলিলেন, আপনার কাছে স্বীকার করব শ্বামীজী-মনে করি বটে, রাগ আর করব না; কিন্ত-শেষ রক্ষা! করতে পারি নে। সেদিন ইস্কুলে-_-একটা ছেলে-_ভাল ছেলে, ছুষ্ট,মি করে আমার কাটুন একেছিল বোর্ডে। এমন রাগ হ'ল। নিছক রাগের বশে মারলাম ছেলেটাকে । মারের চোটে ছেলেট! যখন কাতরাতে লাগল, তখন জ্ঞান হ'ল । থামলাম। গৌড়ানন্দ ক্ষণেক ইতস্তত করিলেন, শেষে বলিলেন, রাগ শরীরের ৮৬ জমি-শিকড়-আকাশ ধর্ম। তাকে জয় করার প্রচেষ্টার মধ্যেই মানুষের মনুষ্যত্ব । আপনি যে চেষ্টা করছেন, এতেই আপনার জয়। একটু হাসিয়া আবার বলিলেন, কিন্তু আমাদের শ্রীমস্তবাবুর মত লোকের পাল্লায় পড়লে রাগ না ক'রে পারবে এমন মান্ষই নেই । তাই বলুন।-_সর্বেশ্বর সন্ধষ্ঠ হইলেন ।-__চলুন দেখ! যাক । সর্বেশ্বর উঠিয়! প্রস্তুত হইয়! আসিলেন। উভয়ে রওনা হইলেন । বীরেশের কোন খবর পেলেন? গোঁড়ানন্দ জিজ্ঞাসা করিলেন। সর্বেখর গভীর হইলেন। বলিলেন, আমার কাছে তে! চিঠিপত্র লেখে না । ওর বউদির কাছে একখান! দিয়েছে শ্রীনগর থেকে | দিল্লী আগ্র। কাশ্মীর ক'রে বেড়াচ্ছে আর কি। বেড়াক কিছুদিন ।-_গৌড়ানন্দ সহান্ভৃতিতে বলিলেন, অত্যন্ত চঞ্চল হয়ে পড়েছিল । মনের ভারমাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল ওর । সব সময়ই মনে হ'ত কি যেন খুঁজে বেড়াচ্ছে । অল্প হাসিয়৷ বলিলেন, আমার সঙ্গে যেদিন দেখ করতে গিয়েছিল, সেদিন আপনি দেখলে নিশ্চয় ভাবতেন, মাথ! ওর খারাপ হয়ে গেছে। খারাপই হয়েছে তো ।-_সর্বেশ্বর বলিলেন । সব পুড়িয়ে দেবে, শ্মশান ক'রে দেবে ।- গৌড়ানন্দ জহান্তে বলিলেন, সেই জন্তেই লিখছে বলছিল'। মিথ্যে কথা বলেছে । সর্বেশ্বর বলিলেন, ওরকম কিছু ও লেখে নিতো। আপনি পড়েছেন? কিছু কিছু পড়েছি__গোপনে ।-_সর্বেশ্বর হাসিয়া বলিলেন, ওর বউদ্দি থাতাট। এনে দিয়েছিল । ইতভলিউশনের দার্শনিক ব্যাখ্যার মত কি একটা লিখছিল। খুব যেশি লেখেও নি। জমি-শিকড়-আকাশ ৮৭ ইভলিউশন !-_গৌড়ানন্দ হাসিলেন ।-_-আজকালকার রেওয়াজ । দর্শন বলুন, ধর্ম বলুন, যাই লিখতে যান, বায়োল্ি, কসমোলজি, ফিজিকৃস-__বিজ্ঞানের সব কিছু আলোচন। ক'রে নিতে হবে । আমিও করেছি ।--আর একবার হাসিলেন।__-নইলে আজকালকার পাঠকদের মন ওঠে না যে! তাই বটে ।-_-সবেশ্বর সহাহ্ৃভৃতি প্রকাশ করিলেন ।-_বিজ্ঞানের থটমটি কিছু থাকলেই পাঠকদের ভক্তি হয় লেখকদের ওপর । শুধু তাই নয়। ডেকার্টে, কান্ট, হেগেল__ওদিকে যত আছে সব আলোচনা ক'রে নিতে হবে । তারপর আপনি বলুন, বেদান্ত বলবেন ব। যা বলবেন । এ সব করতেই তে! বইখান। বড় হয়ে গেল । তাল কথ!, আপনার বইয়ের খবর কি ?_-সর্বেশ্বর তখন জিজ্ঞাস! করিলেন । হয় নি এখনও কিছু । কেন? অনেকে বলছেন, এ বই কোন ব্রিটিশ বা আযেরিকান পাবলিশাস” পেলে লুফে নেবে । ভাবছি তাই পাঠাব । এখানে ছাপা হ'লে কজনই 1 জানবে, কজনই বা! পড়বে ! বাইরে হয়তো পৌছবে না । খুব ভাল প্রস্তাব হয়েছে ।-_সর্বেশ্বর বলিয়া উঠিলেন।-কোন বিলিতী কোম্পানিকে পাবলিশ করতে দিন| সব দিক দিয়ে ভাল হবে। তাই দেব ভাবছি । আমার এক বন্ধু লেখালেখি করছেন । দেখা যাক। খুব ভাল হবে ।--বলিয়! সর্বেশ্বর চুপ করিলেন । গৌড়ানন্দ চিস্তামগ্ন হইয়া একমনে হাঁটিতে লাগিলেন। ৮৮ জমি-শিকড়-আকাশ শ্রীমস্তবাবু বাড়িতেই ছিলেন । আদর করিয়া বসাইলেন।-_-আস্গুন শ্বামীজী, আহ্মন মাস্টার মশাই । টাক! দেব না-_-এমন কথ! তো! বলি নিআমি। আমার দিকটা তে! একটু বিবেচনা করবেন ? লিটা হয়েছে ন'এর মত। ন্দ-এর নট বোঝাই ধায় না। হয়েছে নলিতাস্ুদরী ! আমি অবশ্ঠ মাইণ করতাম না। কিন্ত আমার স্ত্রী দেখে এসে তারি অসন্তষ্ট হয়েছেন । ত। ছাড়া লেখাটা হয়েছে এমন জায়গায় আর এত ছোট যে, কারুর চোখেই পড়ে না। আমার স্ত্রী বলছেন যে, োখেই যদি না পড়ল লোকের, তা হ'লে আর লাভ কি? এটা তো সত্যি কথা হ'ল না1।--গৌড়ানন্দ কম আক্রমণাত্মক ভাষাটাই ব্যবহার করিলেন ।--একটু তাল ক'রে দেখলেই বোঝ! থায় সবই ঠিক আছে। সিমেন্টের ওপর লেখা তে! ? আমিও দেখেছি শ্রীমন্তবাবু।-_সর্বেশ্বর বলিলেন এবার ।-_পরিফার বোঝা যায় সব। তাযাই বলুন। আমরাও দেখেছি যখন-_। শ্রীমস্ত অটল রহিলেন। তা হ'লে আপনার বক্তব্যটা কি একটু স্পষ্ট বলুন 1-_গৌঁড়ানন্দ উদ্মার রেশটুকু দমন করিতে পারিলেন ন!। লেখাটা একটু ঠিক ক'রে দিন_-এই তে! আমার কথা। একগাছা বেতের জন্ত সর্বেশ্বরের হাতখানা নিসপিস করিতে লাগিল । গৌড়ানন্দ্ অবাধ্য স্ত্াযুগ্ুলি সংযত করিতে লাগিলেন। কিন্ত বলিয়া উঠিলেন, তার পরেও যদি আপনি না| দেন টাকা? তা কেন দেব না, বনুন তো! মাস্টার মশাই? কেন দেবেন না, সে কথা বলা মুশকিলই তো !_-সর্বেশ্বর একটা টিপ্ননি দিয়। অনেকটা শাস্তি পাইলেন। জমি-শিকড়-আকাশ ৮৯ গৌড়ানন্দ হাতের লাহিটা মেঝের উপর খাড়া করিয়া ধরিয়। বলিলেন, বেশ, তাই করে দিচ্ছি। এ কথাটাও যদি আগে বলতেন, এতটা! অস্থবিধে আমার হ'ত না। ওটা ক'রে দিয়ে তিন-চার পিন পরে আপব তা হ'লে। চলুন মাস্টার মশাই । অত্যন্ত হীনপ্রকৃতির লোক |-_রাস্তায নাখিয়াই সর্বেশ্বর বশিলেন । আস্ত বাদর । গৌঁড়া*ন্দ বাষ্প খানিকট। বাহির করিয়! দিলেন | এবারটা দেখি । কেসই করতে হবে ওর নামে শেষ পর্যস্ত। টাকাটার খুব দরকার হয়ে পড়ল কিনা !-_-একটু থামিয়া বলিলেন আবার । প্রসঙটাই সর্বেশ্বরের অসহা হইয়া উঠিতেছিল। তিনি শারৰ হইলেন । আরও কিছুদূর অগ্রসর হইয়! স্বেশ্বর জিজ্ঞাসা করিলেন, কোন্‌ দিকে যাবেন এখন? চলুন-আমার ওখানে বসিগে। কাগজটাও পড়। হয়নি আজকের । চলুন | কালকের কাগজে আমেরিকার এক প্রফেসরের একটা আটিকেল ছিল । বেশ লাগল । কি লিখেছে? লিখেছে এঁ। ভারতের দিকে তাকাও । ভারতের জনের আলোই পৃথিবীকে রক্ষ। করতে পারে স্বীকার করেছে। সবাই স্বীকার করবে ক্রমে .__গোৌড়ানন্্ নিকুৎগ্ুক কে বলিলেন। রামমোহনবাবুর খবর কি ?-হঠাৎ মনে পড়িয়। গেল সর্বেশ্বরের । গৌঁড়ানন্দ গম্ভীর হইলেন। বলিলেন, বলতে পারি নে। তিনি 'আশ্রমে কিছুদিন থেকে আর যান না । কেন,কি ব্যাপার ? ৯০ জমি-শিকড়-আকাশ আমি মান! ক'রে দিয়েছি । সর্বেশ্বর বিশ্মিত জিজ্ঞাস্থ দৃষ্টিতে তাকাইলেন। গৌন্ডান্দ বলিলেন, কোন বদ্ধুর জন্তেই আশ্রমের পবিত্রতা নষ্ট হতে দিতে পারি ন|| কি করেছেন ?-_সর্বেশ্বর সভয়ে জিজ্ঞাসা করিলেন । আপনি শোনেন নি কিছু ?--গৌড়ানন্দ পাণ্টা জিজ্ঞাসা করিলেন। না, কিছুই না। গৌডানন্দ হাসিয়া বলিলেন, আপনার পক্ষে না শোনাই স্বাতাবিক-_-এ সব নোংরা কথা। রামমোহনবাবুর--| শেষের দিকে একটু টানিয়া গুরুত্ব আরোপ করিয়! দিলেন, চরিত্রদোষ ঘটেছে । সর্বেশ্বর অত্যন্ত লজ্জিত হইলেন। গৌড়ানন্দের চোখের দিকে? তাকাইতে পারিলেন না লজ্জায় । মুছ্ধ কে বলিলেন, কি? কার? সে বড় বিশ্রী ব্যাপার !--গোৌড়ানন্দ ত্বণার সুরে বলিলেন, বলব চলুন। অবশ্ত আমার শোনা1 কথা । জানি না কতট! সত্যি। কিন্ত রটেছে যখন, কিছু আছেই তেরে । থামিয়! বিদ্রপের হাসি হাসিলেন একটা ।__ই-ছা। এখিকৃস্‌। এই এখিকৃস্‌ রামমোহনবাবূর ! সর্বে্বর মাথ! হেট করিয়া রহিলেন। বাড়ি পৌছিয়৷ গৌড়ানন্দকে বসিতে দিয়া নিজে বসিয়া সর্বেশ্বর সংকুচিত আগ্রহে অপেক্ষা করিভে লাগিলেন । এ সব কথ| বলতেও বাধে মুখে ।-_অবাধ সরল ভঙ্গীতে গৌঁড়ানন্দ বলিতে আরভ্ভ করিলেন।-_কিছুদিন আগে উনি যখন কাশী গিয়ে- ছিলেন, সেই সময় একজন অনাথ! মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন । রণধবে ৰাড়বে, কাজকম”করবে, মেয়েটিরও একটা আশ্রয় হবে-_এই জমি-শিকড়-আকাশ ৯৯ ভেবেই এনেছিলেন । কিন্তু এখন শুনছি, শুধু রাধাবাড়া নয়-_সবই চলছে। ক্ষুব্ধ হাস্তের সঙ্গে শেষ করিলেন গোৌড়ানন্ব । সর্বেশ্বর কিছুকাল স্তব্ধ হইয়া থাকিয়া! তাড়াতাড়ি বপিয়! উঠিলেন, ছিঃ-ছিঃ-_ এর পরেও আমি তাকে আশ্রমের সংঅবে যেতে দিতে পারি, বলুন ? না না। উচিত নয়। কিন্ত আমি যেন বিশ্বাসই করতে পারছি না। গোৌঁডানন্দ উচ্চাঙ্গের হাস্য করিলেন শুধু । খবরের কাগজখানা হাতে লইয়া! পড়িতে শুরু করিয়াই বলিলেন, অথচ এই রামমোহনবাবুর চরিত্রের দৃঢ়তা, একট! আদর্শের মত ছিল লোকের কাছে। বড় ভাইয়ের সংসারের সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিজের হাতে নিয়ে বিয়ে করলেন না, তাতে বিদ্ব হবে মনে ক'রে। ত1 জানি, সেই জন্তেই বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। কষ্ট আমারও কম হয়নি সর্বেশ্বরবাবু।--গোঁড়ানন্দ গতার আবেগের, সঙ্গে বলিলেন, কিন্ত মানুষের ছুর্বলত। যে কত তয়াবহ হতে পারে তা আমি জানি। সত্যি, মানুষ বড় ছুর্বল ।-_সর্বেশ্বর ছুর্বল মন্তব্য করিলেন । না।--গোড়ানন্দ বজ্রনির্ধোষে ঘোষণা করিলেন যেন।-_না। মানুষ ছুবল নয়। অমৃতের পুত্র মানব । ছ্ুব লতা! জয় করতে পারে ব'লেই নাহ । কই, আপনি আমি তো দুর্বল নই। সর্বেশ্বর চাপা দিবার জন্ত তাড়াতাড়ি বলিলেন, হ্যা, ছুর্বলত জয় করার মধ্যেই তো ম্তয্যত্ব | কিন্তু কজনই বা পারে? দুর্বল সবল সব রকমের মাহৃষ নিয়েই জগৎ। : সে কথা অস্বীকার করি না। কিন্ত রামমোহন বাবুর মত উচ্চ ৯২ জমি-শিকড়-আকাশ শিক্ষিত সবল মাহুষের এই অধঃপতন আমি ক্ষমার অধোগ্যই মনে করি । তা বটেই তো। গোৌড়ানন্দ খবরের কাগজে চোখ বুলাইতে লাগিলেন । বাজারের থলি হাতে লইয়! ভৃত্য লোচন দরজার সম্মথে আসিয়! দাড়াইল। সর্বে্বর দেখিতে পাইয়া ব্যত্ত হইলেন ।-হ্য!, একটু দাড়! গোৌড়ানন্দ মুখ তুলিয়। বলিলেন, ও, বাজার হয় নি বুঝি ? না, যাব এখন ।-_-সর্বেশ্বর চাঞ্চল্য গোপন করিলেন। আচ্ছা, আমি উঠি সরবেশ্বরবাবু। বসুন না। তাড়াঁতাড়ির কি আছে। বাঁজারট। আবার এখানকার এমন, একটু দেরি করলেন তো৷ ভাল জিনিস কিছুই পাবেন না। আমি জানি, ভাল জিনিস সকালে না গেলে পাওয়াই যাষ না। গৌড়ানন্দ উঠিলেন। ১২ টাক! ফুরাইয়া আসিতে বীরেশ্বর নিরুদ্দেশ যাত্রায় ছেদ টাশিয়। কলিকাতায় ফিরিয়| আসিল । কলেজ আমলের বন্ধু ভবতোষের সঙ্গে দেখা করিয়। প্রথমেই বলিল, শোন্‌, আগে কাজের কথাটা ব'লে নিই । পরে সব আলাপ করা যাবে। তাই কর্‌।-ভবতোধষ হাসিয়া! বলিল। শোন্‌। আমি একরকম 'সর্বতীর্থ ঘুরিলাম' ক'রে এখানে এসেছি কালকে । মাস খানেকের হোটেল-খরচ এখনও আছে সঙ্গে । কাজেই এক মাসের মধ্যে আমার একটা! ব্যবস্থা করা চাই। বাংল লিখতে জমি-শিকড়-আকাশ ৯৩ পারি। ভালই পাঁরি বোধ হয়। শুনেছি, সিনেমার সংলাপ লিখে বেশ টাক! পাওয়! যায়। একটু ধরপাকড ক'রে তারই একটা ব্যবস্থা করতে হবে। একট! ট্রায়েলের চাম্ন অন্তত যোগাড় করতে হবে। তারপর, দেখা যাক। কলকাতায়ই থাকব স্থির করলাম । হয়েছে? না, আর একটা কথা । আর আমার সঙ্গে প্রেম করবাব জন্টে একজন মেয়ে ঠিক করতে হবে । আ্যা? প্রেম করবার একজন মেয়ে চাউ, বাস্‌। আর কিছু চাই না। এইনাঁল বলু তুই ।--বীরেশ্বর আরাম করিয়া বসিল। ভবতোষ বলিল, এখন আলাপ কর! যায়? কাজের কথা তো হ'ল বাক্যের উত্তেজনা! নিঃশেষ হওয়ায় বীরেশ্বর অবসন্ন হইয়। পড়িতে ছিল। একটু হাসিয়! ঘাড নাড়িল। কি করছিলি এদ্দিন ? দ/লালি করছিলান ভাই । আর লিখছিলাম । ন1, লিখতে চেষ্ট। করছিলাম । কি? শীঘ্ব জবাব দিল না বীরেশ্বর । কি লিখছিলি ? ভলিউশন। মনের ।--একটু হাসিয়া অবশেষে বলিল বীরেশ্বর। সর্বনাশ ! সর্বনাশই ৰটে 1--বীরেশ্বর ক্রাম্তস্বরে বলিল, ছেড়ে দিয়েছি । ছেঁড়ে দিলি কেন? নাগাল পেলাম না। লিখলে ভুল কথাই হয়তো লিখব যখন মনে ৪ জমি-শিকড়-আকাশ হ'ল, তখন ছেড়ে দিলাম । স্থিত রাখলাম বরং। মনটা শেবকালে আমাকেই ভিকটিম ক'রে নান! খেল. শুরু ক'রে দিলে কিনা! তবতোধ হাসিয়| উঠিল।_-কি রকম? বীরেশ্বর সভয়ে পিছাইয়া গেল যেন।--পরে। পরে। ছুদিন জিরোতে দে ভাই। ভবতোষ নীরব দৃষ্টিতে তাকাইয়া৷ দেখিল কিছুক্ষণ। বীরেশ্বরের কথাবার্তার একটা অর্থ-সঙ্গতি স্পষ্ট হইয়া! উঠিল যেন। বলিল, আটা, তোকেই শেষকালে ভিকৃটিম করল ! খেল্ট] কি খেলল, সে থাক্‌ এখন। তারপরে ? হাতডে বেড়াচ্ছিস বুঝি? বেড়িয়েছি। কিন্ত, আর না । ভবতোষ ক্ষণকাল চুপ করিয়া থাকিয়া বলিল, চা খাবি ? হ্যা । ভবতোষ একটা হাক দিয়! চায়ের হুকুম দিল । লেখাটা নিয়ে এসেছিস ?_-তবতোব বলিল। বীরেশ্বর মুখখানা একটু বিকৃত করিয়া জবাব দিল, না। যাঁকগে, শেষ হ'লে দেখা যাবে ।--ভবতোব ছাড়িয়! দিল। এখন ত৷ হ'লে তোর কাজের কথায় আসা যাক। সিনেমার সংলাপ । ধু, একট ব্যবস্থ। হ'ল | কিন্তু সেট! দালালির চেয়ে উচ্চন্তরের মনে করছিস কেন? মোটেই তা নয় যে। সংলাপ মানে-_প্রলাপ। লিখতে পারৰি ? কথাট। মনে লাগিল বীরেশ্বরের ৷ কিন্ত ভাবিতে গিয়া! মনের মধ্যে একটা! ধাক্কা! খাইয়| যথাস্থানে ফিরিয়া আসিল আবার !__-এখানেই থাকতে হবে যে আমাকে । যেস্তরের হোক দালালি এখানে সম্ভব হ'লে তাই করতাম। যা হোক একটা কিছু করতে হবে তো । এটেই 'ক্ুবিধে মনে হচ্ছে। জমি-শিকড়-আকাশ ৯৫ বেশ, দেখ. চেষ্টা ক'রে । আচ্ছা তা হ'লে এক নম্বর গেল। এখন ছু নম্বর। প্রেম করবার মেয়ে । হ্যা, এট। আরও জরুরি । এটা আরও কঠিন রে তাই ।- তবতোষ অত্যন্ত গাম্তার্যের সঙ্গে বলিয়! ফেলিল ।-_লাখে লাখে মেয়ে প্রেম করছে, অথচ দরকার মত একজনও পাওয়। যাবে না। এই ছুঃখেই আমাকে বিয়ে করতে হ'ল যে। বিয়ে করেছিস তুই ? দু বছর। বীরেশ্বর কিছুকালে জন্য নির্বাক হ্ইয়! রহিল। হঠাৎ সোজা হয়! বসিয়৷ বলিল, বেশ, ভাল । কিন্ত বিয়ে করলে আর এখানে কেন? বাড়িই ফিরে যাই। বাস্‌. মুহতেফে'সে গেল সব ?-_-তবতোষ হো-হো! করিয়। হাসিয়া উঠিল। বীরেশ্বর পুনরায় পিছনে হেলান দিয়া পঙ়িয়! একটু হাসিয়! বলিল, কি করব? তুই নিরাশ ক'রে দিলি যে। তা ছাড়া-_| বাঁরেখরের কগঠম্বর তীক্ষ হইয়! উঠিল।__নতুন ফিলজফি দদব আমি--আমার মানসিক অবস্থা এমন না হ'লে চলে? চা আসিল। বীরেশ্বর এক চুমুক টানিয়! লইয়া বলিল, তবে ফিলজফি আছে আমার । দেব। তবে দিয়ে দেনা। ঢুকে যাক। উভয়েই হাসিয়া উঠিল । বীরেশ্বর বলিল, আমাদের ম্বামীজীর সঙ্গে তর্ক করবার সময় একট! ৯৬ জমি-শিকড়-আকাশ কথ! ব'লে ফেলেছিলাম । প্রচণ্ড দার্শনিক তথ্য । কি--রে ?1_-তবতোধ ইয়ারকির স্থুরে টানিয়! জিজ্ঞাসা করিল। মাঁনবদেহটা এখনও তৈরি হয় নি। কথাট! অবশ্য বৌঁকের ওপর বলেছিলাম । কিন্ত ক্রমশ যেন হাঁডে হাড়ে কথাটার সত্যতা, যাকে বলে উপলদ্ধ--করছি আমি । আমার নিজেরই অনেক কার্যকলাপের পরে বুঝলি, কেমন একটা অস্পষ্ট বানর-বানর ভাব এসে যায়। মনে হয়, আমি বানরই র'য়ে গেছি। জোরে হাসিতে গিয়। থাঁমিয় গেল ভবতোঁষ | বলিল, আর সকলকে কি মনে হয়? তখন আর অস্পষ্টত। থাকে না। স্পষ্ট বানর ? অধিকাংশ ক্ষেত্রে । দাঁলালিতে, প্রেমে-_ প্রেমেও ? খুব বেশি । তা ছাড়া, ব্যক্তিগত সমষ্টিগত-_ন্যাশনাল ইন্টার- স্যাণনাল যত প্রকার আছে--ধৃত” স্বার্থবৃদ্ধির চেচামেচিতে আসল জমি সম্বন্ধে ভুল হবার জো! নেই । ভবতোষ অনেকক্ষণ পরে ধীরে ধীরে বলিল, তোর কেস্টা আমি বুঝেছি । ভাল একটা চাকরি । তোকে রক্ষ! করতে হ'লে তাল চাকরি একটা চাইই। রোগট! এ । হ্যা, বোধট! একেবারে মেরে ফেলতে হ'লে তাই চাই। তোর মত! তাল চাকরিতে নিশ্ছিদ্র মজবুত হয়ে বসেছিস ! নইলে জীবন তোর দুর্বহ হয়ে উঠবে যে! একটু উঠূক।-_বীরেশ্বর উঠিয়া দ্রাড়াইল।-_-এখন অন্তত বোধ আছে বুঝতে পারি, সেটুকু আর ন্ট করতে চাস না। এই উপকারট! জমি-শিকড়-আকাশ ৯৭ করিস না আমার । আচ্ছা, করব না। ব'স্‌,বস্‌। বীরেশ্বর হাসিয়া! আবার বসিল। তা হ'লে আমাকে এখন কি করতে বলছিস £ - ভবতোষ মনে করাইয়া দ্িল। বীরেশবর চিত্ত করিতে করিতে ডুবিয়া গেল কিছুক্ষণের জন্য | হঠাৎ এক সময়ে বলিল, আচ্ছ!, আমি যদি এখন সিদ্ধাস্ত করি থে. কাল থেকে আমি রিকৃশ টানতে শুরু করব, ।ক চানাচুর ফেরি করব, কি থিয়েটারে টুঁকব, কি-_ অনেক আছে-_লিষ্টি বাড়িয়ে লাভ নেই। তা হ'লেকি-_তাই বল্‌। যেকোন সিদ্ধান্ত আমি নিতে পারি । আটকাবে কে? কেউ না। জ্ীনগরেই যদি জীবনট] কাটিয়ে দেবার মতলব করি আমি ? কিংবা কাটামুখুতে ? কে আটকাবে ? তাই বল্‌। আবার বাড়িও চ'লে যেতে পারি আজকেই । খুব__খুব ।--ভবতোব সহান্তে উৎসাহ দিল। আশ্চর্য শ্বাধীনতা রয়েছে আমার । তা ছ'লে বাড়িই যাই, কি বলিস ? কেন যাবি ন!? যাবার স্বাধীনতা রয়েছে যখন ? বীরেখবরও হাসিল । অত্যন্ত মান হাসি। বলিল, কলকাতায় থাকৰ এই সিদ্ধান্তই পথে করছিলাম । প্র্যানটা চমৎকার মনে হয়েছিল । এখন-- | তা ছাড়া তুইও তো৷ ভরস! দিতে পারলি না কিছু? ৯৮ জমি-শিকড়-আকাশ তবতোষ জবাব ন! দিয়! মুহুূর্তকাল চিন্তা করিয়া গম্ভীর মুখে বলিল, শোন্‌। মজবুত নিশ্ছিন্ লোকের একটা পরামর্শ শুনবি? বারেশ্বর একটা অবলম্বনের আশায় আশান্বিত হইয় উঠিল। 'বলিল, বল্‌। বাড়ি থেকে ঘুরে আয়। তারপরে মনস্থির ক'রে সিদ্ধান্ত একটা কর! আর সেই মত কাজ করা বাস্তবিকই কঠিন হবে ন! দেখবি । এখন চল্‌ প্যারাডাইসে ভাল হিন্দী ছবি আছে একটা, চল্। বীরেশ্বর তৎক্ষণাৎ উঠিয়া পঙিল। রাস্তায় ভবতোষ আর একবার উপদেশ দিল ।--জীবনটাকে একটু সহজভাবে নে, সহজ ভাবে দেখ, সব সহজ হয়ে যাবে। অনেকক্ষণ পরে বীরেশ্বর কথা বপিল, তাই করব । লেখা-টেখ৷! সব ছেড়ে দ্েব। দাদার মত হবার জন্তে চেষ্টা করব । গীতা, কল! চিড়ে, দই, এমন একাকার ক'রে, এমন সমগ্রভাবে গ্রহণ করেছেন দাদ! ! ক্বন্দর! তই করব। ভবতোধ বীরেশ্বরের অনেক কষ্টের ফাঁকা শান্তি ভঙ্গ করিল না । ৬৩ বীরেশ্বর পৌছিবামাত্র স্থুনয়ন! বলিলেন, জল-টল খেয়ে দীপিকার সঙ্গে একটু দেখা ক'রে এস। বীরেশ্বর ভ্রকুঞ্চিত করিল ।-কেন? আমার চিঠি পাও নি? না তো। ও !-_বলিয়া সুনয়না একটু থামিয়া বলিলেন, আমি ভেবেছিলাম, আমার চিঠি পেয়েই আসছ তুমি। জমি-শিকড়-আকাশ ৯৯ নাঃ। যা হোক, এসে ভাল করেছ ।--স্ুনয়না হ।লকা ঠাট্টার সুরে গুরুত্ব মিশাইয়া বলিলেন, মেয়েটা তোমার জন্যে কেঁদে কেদে ম'ল। কোন্‌ মেয়েটা বউদি? স্থুনয়না স্ুরটা সংশোধন করিয়া লইলেন, ঠাট্টা নয়। দাঞ্জিপিং থেকে ফিরে এসে তুমি চ'লে গেছ শুনে আমার কাছে ছুটে এসেছিল । ছুটে এসেছিল ! হয, তারপরে ? কিট হয়ে পড়ল বুঝি? স্থনয়না৷ একটু হাসিয়া বলিলেন, থাক্‌ এখন। পরে বলব। তুমি একটু ঠাণ্ডা হয়ে নাও । ন! না। তুমি বলনা বউদি! খুব ঠাপ্ডাই আছি আমি | হ্যা তার পরে কীদল? না, সবগুলো! একসঙ্গে ছাড়েনি বুঝি ? ভুল রাগ করছ ঠাকুরপো | রাগ! বীরেশ্বর হাসিয়া! উঠিল।__রাগ করব কার ওপর? দুঃখ করছি। এমন একট! খেল তার হাতছাড়। হয়ে গেল! তার ছুঃখে আমিও দুঃখিত বউদ্দি। সব শুনলে আর এ রকম ক'রে বলতে পারতে না ঠাকুরপো! 1-- স্ূুনয়ন। ধীরে ধীরে বলিলেন । বলে যাও। শুনতে আমার কোন আপত্তি নেই। থাক্‌, তার কাছেই শুনো । তার কাছে ?--বীরেশ্বর হাসিল। তা শুনব হয়তো! কোনদিন । দ্েখা-সাক্ষাৎ না হওয়ার তো কিছু নেই। দেখাও হবে, আলাপও হবে। না! হবার কি আছে ?-বারেশ্বর ভাল-মাহ্গষের মত নিশ্চিন্তে 'জিনিসপত্র গুছাইয়! রাখিতে প্রবৃত্ত হইল। সুনয়ন। নারবে দীড়াইয়। দেখিতে লাগিলেন। ১০০ জমি-শিকড়-আকাশ হঠাৎ আবার উঠিয়া! আসিয়া ছুনয়নার সম্মুখে দীড়াইল বীরেশ্বর বলিল, সে বুঝি খুব আনন্দ করেছে যে, তারই জন্যে আমি দেশত্যাগী হয়েছি? না, বউদি? কি যে বলছ ঠাকুরপো, আনন্দ করবে কেন? যা হ্যা, তাই করেছে, আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি ।--বীরেশ্বর অবুঝের' মত বলিতে লাগিল, তুমি তাই বুঝিয়েছ তাকে ! অথচ আমি যখন যাওয়। স্থির করি, তখন জানতামও ন! যে, ওরা কোথায় গেছে! এসব কোন কথাই হয় নি ওর সঙ্গে ।__ছুনয়না হাসিয়া বলিলেন-_ সত্যি বলছি ঠাকুরপো। বেশ, দেখা হ'লে কথাট! ব'লে দিও তুমি |-বীরেশ্বর আৰার কাজে, লাগিয়া গেল। নুনয়না চুপ করিয়া! গেলেন তখনকার মত। খাওয়ার সময় বীরেশ্বর বিভিন্ন প্রসঙ্গের অবতারণ! করিয়া ছুনয়নাকে কাক দিল না| দাদার শরীর ভাল আছে তো? ্যাঃ তা আছে। গীতাপাঠ রীতিমতই চলছে নিশ্চয়? আগের চেয়ে বেশি । , চিডে দই 1-_বীরেশ্বর হাসিয়া ফেলিল।-কলা? সেদিকে কোন ক্রটি নেই ।-_স্ুনয়না হাসিলেন।-আর সব দিকে খরচ কমাবার চেষ্টা হচ্ছে। ও !--বলিয় বীরেশ্বর গম্ভীর হইল । মুহূর্ত পরে ।-_স্বামীভীর খবর কি? স্বামীজীর খবর তো! আমি রাখি ন1।-_স্থনয়ন! বলিলেন, হ্যা, আশ্রমের--কি বলে প্রতিষ্ঠা-দিবস হবে শীগগিরই, স্বামীজী ব্যস্ত খুব। জমি-শিকড়-আকাশ ১০১ বেশ। আর--ইয়ে-__আর কি খবর বল? আর তো কোন খবর দেখি না। কিন্ত বীরেশ্বরের অভাব হইল না। শেষ পর্যন্ত চালাইয়। লয়! গেল। ঘরে গিয়! বীরেশ্বর যখন আলমারি হইতে বইগুলি এক-একথানা করিয়! বাহির করিয়া! দেখিতেছিল, স্ুনয়ন! আবার প্রবেশ করিলেন । পদশব্দ্েই বারেশ্বরের ঘাড় শক্ত হইয়! উদ্ঠিল। দীপিকা আসিয়াছে, অন্থুভব করিল। বইয়ের পাতা উল্টাইতে লাগিল। স্থনয়ন! অনেকক্ষণ প্রতিপক্ষ দীপিকায় মিশিয়! গিয়াছে ৰারেশ্বরের মনের মধ্যে । ক্ষণকাল নিঃশব্দে দাড়াইয়! থাকিয়া স্ুনয়ন৷ আন্তে আস্তে বলিতে লাগিলেন, ওর কাছে একবার যাও ঠাকুরপো । একট ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করেছে অনেক মেয়েটা! ! সে দীপিকাই আর নেই, জান? কাদল ব'লে ঠান্ট! করলে তুমি । সত্যি, সেদিন আমার কাছে সৰ বলতে বলতে সেকি কান্না! কিছুই লুকোয় নি, সব বলেছে আমার কাছে। ঘুমে বলেন্দু কি সব কেলেঙ্কারি করবার মতলব করেছিল, সে সৰ পর্যস্ত বলেছে আমার কাছে। বীরেশ্বর এবার সবেগে ঘুরিয়! দ্াড়াইল কি? সে অনেক কথ|।-_স্থনয়ন৷ একটু গুটাইলেন তখন ! কি কথা ?1--সংক্ষিপ্ত অধীর প্রশ্ন করিল বীরেশ্বর । স্থনয়না আর একটু বিলম্ব করিয়া তারপরে বলিয়। ফেলিলেন, আবার কি? বদ ছেলেদের য৷ কাজ তাই। একদিন দীপিকাকে একা! বাড়িতে পেয়ে ধরতে গিরেছিল এ বলেন্দু। কেন? ন্ুনয়ন! হাসিয়া ফেলিলেন । শোন বোকার কথ! ! কেন? ১০২ জমি-শিকড়-আকাশ বীরেশ্বর উত্তপ্ত হইয়া লাল হইয়া গেল লোহার মত। একেবারে খণ্যশূগ মুনি আমাদের !-_স্ুনয়না উত্তাপ বাড়াইয়া দিলেন । তারপরে ?1-বীরেশ্বর কোনমতে জিন্তাসা করিল । স্থনয়ন! দীপিকার গর্বে গরবিনী হইয়! উদ্ভিলেন যেন। তেজের সঙ্গে বলিলেন, তারপরে আবার কি? দীপিকাঁও তেজী মেয়ে, চেচাবার ভয় দেখিয়ে তখখুনি বার ক'রে দেয় ঘর থেকে । পরের দিনই চ'লে আসে। বীরেশ্বর অন্ভৃতির সীমান। ছাড়াইয়া “নে! ম্যান্স ল্যাণ্ডে” পড়িয়া গেল যেন। স্থনয়না বলিলেন, তুমি একবার যাও ঠাকুরপো । আগের দিন তুমি ওকে যে সব কথ! বলেছিলে, তার জবাব দিতে পারে নি ব'লেই ওর সবচেয়ে বেশী দুঃখ। বলে কি, শুনবে? বলেষে তোমার কাছে কথা কটা বলতে পারলেই ওর ম'রে যেতেও আপত্তি নেই। তখন আমার হাসি পেল অবিশ্তি। কিন্তু, সতি। কষ্ট পাচ্ছে। শরীরের মধ্যে এবার একট। মোচড় দিয়! উঠিল বীরেশ্বরের | স্তনয়না বলিলেন, তোমরা পুরুষেরা বড বোকা ! এত ভালবাসে তোমাকে, একদিনও বুঝতে পার নি তুমি? এতক্ষণে তর্ক-প্রবৃত্তির উপর ভর দিয়া ছাড়াইয়া বাচিয়া গেল বীরেশ্বর । বলিল, তোমরা আবার বেশি চালাক যে! বুঝতে তো৷ দেবেই না, নিজেকেও ফাকি দেবে । নিজেকে দিই বরং! কিন্ত আর কাউকে না ।-ক্ুনয়না গর্বের সঙ্গে বলিলেন । কিজানি তোমাদের কথ! !-বীরেশ্বর ক্রমশ সহজ হইয়া আসিতে চাহিল। আবার ঘুরিয়া দীাড়াইয়া বইগুলি নাড়াচাড়া করিতে লাগিল | জমি-শিকড়-আকাশ ঃ ১০৩ স্ুনয়ন! একটু হাসিয়া বলিলেন, আমার কতব্য আমি করলাম। এখন যা ভাল বোঝ কর | আমি যাই, কাজ আছে । বারেশ্বর নিঃসন্দেহ হইবার জন্য পিছন ফিরিয়া দেখিয়া লইল। জুনয়ন! চলিয়া! গিয়াছেন | খুট করিয়া! আলমারি বদ্ধ করিয়া দিল বীরেশ্বর । কিন্ত তৎক্ষণাৎ আবার খুলিয়া ফেলিল। একটার পর একট! বই সরাইয়! সরাইয়। সবগুলি দেখা হইয়া গেল। আবার বন্ধ করিতে হইল । তারপরে? হাতের মধ্যে ধরিবার মত একট! শক্ত অবলম্বন চাই | মনের ফাকটা কোঁন প্রকারে ডিউাইয1 যাওয়া দরকার । মুহুতে র অবসর দিলে মুখামুখি পড়িয়। যাইতে হইবে । সভয়ে পিছনে সরিতে লাগিল বীরেশ্বর। মনের পিছনে । মিথ্যে, বানোনো কথা সব। কিন্ত সমস্ত প্রয়াস ব্যর্থ করিয়। প্রভাতের আলোর নত একট! অস্পষ্ট আনন্দের আভাস চারিদিক হইতে বীরেশ্বরের মনটাকে আলোকিত করিয়। তুলিতেছিল। ধীরে বীরে। সহসা একট! তীব্র আলোতে মনটা ঝলকিয়া উঠিল। যদি সত্য হর! দীপিকার দেহটাই তে! তাহাকে রক্ষ। করিয়াছে! ইন্স্টিংট ? একটা সত্য আবিষ্কার করিল যেন। বিদ্বেষ কাটিয়া গেল অনেক- খানি। মনটা খুশি হইয়! উঠিল ছুনিয়ার উপর। জামা-কাপড় বদলাইয়! ফেলিল। বাছিয়! বাছিয়! ভাল জামাকাপড় পরিয়। আয়নার সম্মুখে দ্াড়াইল ৷ মনট! দমিয়া! গেল সঙ্গে সঙ্গে। চেহারাটা কোন দিনই খুব ভাল ছিল না । আজ আরও খারাপ মনে হইল বীরেশ্বরের । চোখে মুখে কালি পড়িয়া গিয়াছে যেন। একটু ঘুমাইয়া লইতে পারিলে শরীরটা অনেকখানি ঠিক হইয়া যাইত বোঁধ হয় ।-_-ভাবিল বীরেশ্বর | ১০৪ জমি-শিকড়-আকাশ তৎক্ষণাৎ এক টুকরা বক্র হাসি ফুটিয়া উঠিল ঠোটে ।-আমার ই ন্স্টিংটের বোধ করি আর ইভলিউশন হয় নি__গাছের আমলের পরে। এক রকমই আছে। না, হয়েছে। খারাপের দিকে । আর একট সত্য যেন বলকিত হইল । টুয়ার্ডস পার্ফেকৃশন | কচু ! মিথ্যে! বাহির হইবার পূর্বে স্বনয়নার সঙ্গে একটু কথা বলিবার প্রবল বাঁসনা হইল বীরেশ্বরের ৷ বসিয়া অপেক্ষা করিল কিছুক্ষণ | হুনয়না' আসিলেন না ঘরে। বাহির হইয়! স্ুনয়নার কাছে গিয়া! জ্বকুঞ্চিত হাসিমুখে দীড়াইল। বাচ্ছ নাকি ?-_স্ুনয়ন! হাসিয়া বলিলেন । হ্যা। মিছে কথা কতটা শিখেছ, যাচাই করতে যাচ্ছি। যাও। বীরেশ্বর কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাঁকিয়! হঠাৎ মাথা ঝীকিয়! উঠিল-_ খাকৃ। আমিযাবনা। না। কিহ'ল? না, থাক ।-_বীরেশ্বর যাইতে উদ্ধত হইল ।--আমি আর যাৰ না। তোমার খুশি । নাই গেলে ।-_সুনয়না কাজে মন দিলেন। ঘরে গিয়া জামা-কাপড় ছাড়িয়া একখান গল্পের বই লইয়া বীরেশ্বর শুইয়া পড়িল। অল্পক্ষণ পরেই জুতার শব্দে মুখ তুলিয়৷ দেখিল, প্রদীপ প্রবেশ করিতেছে । উগ্চিয়৷ বসিল বীরেশ্বর | এস প্রদীপ । ব'স। কেমন আছেন বীরেশদ1 ? কখন এলেন 1--প্রদীপ কথামত কুশল- সমাচার হইতে শুরু করিল। জমি-শিকড়-আকাশ ১০৫ তোমার খবর কি 1-বীরেশ্বর জবাব না দিয়া জিজ্ঞাসা করিল। ভাল।--একটু গভীর হইল প্রদীপ। এদিকে কোথায় যাচ্ছ ?--বীরেশ্বর আলাপের তঙ্গীতে জিজ্ঞাস! করিল। না, এখানেই । আপনি এসেছেন শুনে-_ ও! কার কাছে শুনলে ? লোচন গিয়েছিল ।-_সন্দিগ্ধ কণ্ঠে বলিল প্রদীপ । আমাদের লোচন? হ্যা। বীরেশ্বর শান্ত হইল। সঙ্গে সঙ্গে চুপ করিয়া গেল। াবিল, সত্য। আর কিছু জিজ্ঞাসা করিবার নাই তার। শাস্তিতে মনটা যেন ঘুমাইর। পড়িল। বেরুবেন না? চলুন না, আমাদের পাডা থেকে বেড়িয়ে আসবেন। _ প্রদীপ সংকুচিত কে বলিল। হাসি ফুটিয়। উঠিল বীরেশ্বরের মুখে |-স্থ্যা, বেকুব । চল যাই। তুমি বউদির সঙ্গে দেখা করবে না? ও, হ্যা ।-_প্রদীপের মনে পড়িয়া গেল ।--আপনি রেডি হয়ে নিন ততক্ষণ | প্রদীপের সঙ্গে স্থনয়না! আসিলেন। বীরেশ্বরের দিকে তাকাইয়। একটু হাসিলেন শুধু । বারেশ্বরও নীরব হান্তে কোন কথা ন! বলিয়া প্রদীপের সঙ্গে রওন! হইল। প্রদীপের বাড়ী পৌছিয়! প্রদীপের মাকে একট! প্রণাম করিয়া লইল বীরেশ্বর। শাস্তিলতা মাথায় হাত বুলাইয়া আশীর্বাদ করিলেন। বলিলেন, ঘরে গিয়ে ব'স বাবা । ১৩৬ জন্মি-শিকড়-আকাশ বীরেশ্বর ঘরের দিকে অগ্রসর হইল। দরজার সন্ম,খে আসিয়া! প্রদীপ বলিয়া! উঠিল, ও-হো, আমার একটু কাজ আছে যে। আপনি বস্ুনগে ।--বলিয়! ভারিক্কি চালে সরিয়! গেল। দীপিকা উপুড় হইয়। শুইয়| ছিল। বীরেশ্বর ভিতরে প্রবেশ করিবার পর ধীরে ধীরে উদ্ঠিয়া এক পাশে বসিল। বীরেশ্বর একটু দুরত্ব রক্ষ/ করিয়া পাশে বসিল। তারপরে উভয়ে একসঙ্গে উভয়ের দিকে তাকাইল। দীপিকার চোখের পাতা ভারী, দৃষ্টি করুণ_-আবেশ- মাথা । বীরেশ্বরের তল্লাশি । একসঙ্গেই উভয়ে নতচক্ষু হইল । ভি'ডিয় নামাইতে হইল যেন। দীপিকা বুঝিল, এখন বলিবার সময় | গুছানো কথাগুলি বলিতে গিয়া! গলায় আটকাইয়! গেল একটু । উঠিয়া হঠাৎ] বীরেশ্বরকে প্রণাম করিয়৷ বসিল একটা । এই অংশটা অন্তত কার্যে পরিণত করিতে পারিয়া তৃপ্ত হইল দীপিক1। লঙ্জাও বেশি হইল। বীরেশ্বরের কাছেই মশারি টাঙাইবার খাড়া কাঠট! ধরিয়া দাডাইল | প্রণামের সময় বীরেশ্বর দীপিকার মাথায় হাত লাগাইয়। ফেলিয়াছে। সেই পথে বাধ খানিকট!| খুলিয়! গিয়াছে । বলিল, ব'স। না, যাই।--বলিতে গলাট! ছাড়িয়। গেল দীপিকার । চোখের জলে রচনা কর! কথাগুলি এখনই বন! দরকার । বলিল, সেদিন আমি কোন জবাব দিই নি। ভেবেছিলাম, তুমি বুঝেছ।--একটু থামিয় 'তুমি'র রেশটা ভোগ করিয়া লইল।--ঘখন শুনলাম-_-| ক চাপিয়৷ আসিল ।-_-সব ভুল বুঝে__ চোখে জল আসিয়া! পড়িল ।--তার শাস্তি-। চোখ দুইটি জলে ভরিয়! উঠিয়! কণ্ঠ রুদ্ধ করিয়! দিল । করুণার তীরের মত বিধিয় গেল বীরেশ্বরের মর্মে। আহত পশুর মত লাফাইয়। উঠিয়া! দীপিকাকে টানিয়! লইয়া! বুকের কাছে মাথাটা জমি-শিকড়-আকাশ ১৩ চাপিয়! ধরিল। বলিতে লাগিল, আর ভূল হবে না, আর ভুল হবে না_ দীপিকা সুখের তীব্রতায় হাপাইয়! উঠিল ! বেশিক্ষণ সহা করিতে পারিল না । চাঁপা স্বরে “আসছি বলিয়। আস্তে আস্তে মুক্ত হইয়া ভারী বোঝার মত অবশ দেহটাকে টানিয়। বাহির হইয়া! গেল। ধপ করিয়া বসিয়! পড়িল বীরেশ্বর। শ্বাস-প্রশ্বাস আয়ক্তে আনিতে চেষ্টা করিতে লাগিল। ১৪ বাঁরেশ্বর ভবতোষের কাছে চিঠি লিখিল দিন তিনেক পরে । লিখিল-_ আমার বিবাহ এ মাসের পচিশে- আর মাত্র পনরো দিন পরে। তোকে 'আসতে হবে । এলে দেখবি, জীবন আর জীবন-দর্শন সম্বন্ধে আমাব ভান এই কদিনে কত পেকে উঠেছে । হাসবার দরকার নেই-_ জবাব$| আমি বুঝেছি । পচন ধরতে পারে জানি। বিরের তারিখট! সেই জন্যেই যতদূর সম্ভব এগিয়ে আনবার ব্যবস্থা করেছি । কিন্ত বর্তমানে আমি আশাবাদী । মনের শিকড় দেহের মধ্যে-- যার নাম ইন্্টিংট, দেহের রসে তার পুষ্টি। পঞ্চাশ হাজার বছর আগেকার দেহে নতুন কিছু ক্াশা করাই অন্যায় ।__এই ধারণ বদ্ধমূল হয়ে উঠেছিল আমার । মনের লতা আকাশে ছড়িয়ে পড়ে বটে। কিন্ত শিকড় থাকে জমিতে | ফল প্রত্যক্ষ । “ভাল দেহ চাই” শ্লোগান দিষে একটা! প্রচণ্ড ডিমন্স্টে শন দেবার পরিকল্পনা করছিলাম । আজ মনে হচ্ছে, দরকার নেই। ইন্্টিংটেরও ইভলিউশন-__ টুয়ার্ডস পার্ফেকৃশন ?-_হয় | অস্তত দীপিকার হয়েছে । দীপিকা, মানে-যার সঙ্গে আমার বিয়ে | ঘটনাট1 সাক্ষাতে বলব । তোর! একটু কৌতুহল হয়ে থাক্‌। ৬ ১০৮ জমি-শিকড়-আকাশ আরও অনেক কথ! আছে-- এই সময়ে স্থুনয়না প্রবেশ করিলেন ঘরে। বীরেশ্বর চিঠিখান শেষ করিয়! কেলিপ। মুখ তুলিয়া বলিল, বউদি, ঠিক পচিশে তো? হ্য। হ্যা । পঁচিশে, পঁচিশে | বাপ রে। জুনয়ন! ক্ষেপাইবার জন্ত বলিলেন । বীরেশ্বর হাসিল !-এক বন্ধুর কাছে চিঠি দিলাম কিনা তারিখটা ভূল হওয়! উচিত নয় । ভূল হবে না, আখি কথ দিচ্ছি। দেখে, তুমিই একমাত্র ভরসা ।-হাপিয়। বীরেশ্বর চিঠিখানা বন্ধ করিয়। উঠিল ।__কিস্তু, বউদি বল। আমার বড় ভয় করছে। বিয়ে তে। কোনদিন করি নি। স্ুনয়ন| খিলখিল করিয়। হাসিয়া উঠিলেন।-_-আগে থেকে যদি অভ্যাসট। ক'রে রাখতে ! আজ আর কোন অন্ুবিধেই হ'ত না তা হ'লে। ঠিক বলে5। ভুল হয়ে গেছে । এখন কি করা যায় বল দেখি? বিয়ের তারিখ পিছিয়ে দাও । এর মধ্যে অভ্যাসট। করে ফেল। বীরেশ্বর ইঙ্গিত ধরিতে পারিয়! লজ্জিত হইল । হ্যা, তাই দেখি ।-_বলিয়! তাড়াতাড়ি বাহির হইল । টাক।! নান। ভাবতরঙগের মধ্যে এইটাই ক্রমশ স্প্টতর এবং জোরদার হুইয়। উঠিতেছিল বীরেশ্বরের । টাক! কিছু অবশ্-প্রয়োজন | টাকার সঙ্গে সঙ্গে পাশাপাশি আরও কয়েকটা মুখ তাসিয়! উটিতেছিল মনের মধ্যে । সাগরমল--ম্থুবোধ লাছিড়ী__হিরণ মিত্র- বীরেশ্বর ঝাঁপ দিবার জন্ত অগ্রসর হইল। জমি-শিকড়-আকাশ ১০৯. ঘুরিতে ঘুরিতে রাস্তায় গৌড়ানন্দ-আশ্রমের নিত্যানন্দের সঙ্গে দেখা হইল । বীরেশ্বর আগ্রহভরে আলাপ করিতে আরম্ভ করিল। স্বামীজী কেমন আছেন ? ভাল আছেন । আরে, তাল কথা, আপনাদের সে ললিতা সুন্দরী গেট হয়েছে নাকি? হ্যা। অনেক গোলমালের পরে মিটে গেছে সব। গোলমাল কিসের ? নিত্যানন্দ আম্মপুিক বিবরণ দিলেন। বীরেশ্বর খুশিতে হাসিতে লাগিল । স্বামীন্জী আর নতুন বই-টই কিছু লিখছেন নাকি? লিখছেন । ম্যান আগ মোক্ষ। ওঃ! এটাও তাল হচ্ছে লেখা । ও-_ একট। স্টেশনারি দোকানের সম্মুখে আসিয় নিত্যানন্দ থামিলেন। কিছু কিনবেন বুঝি ? ্যা, একট! চিরুনি কিনতে হবে স্বামীজীর জন্তে। যেটা ছিল, ধীতগুলে! নাকি সবই ভেঙে গেছে তার। চিরুনি? হ্যা, একটা ভাল দেখে চিরুনি দিন তো--যশোরের দিন। বড় তাড়াতাড়ি ভেঙে যায় আর সব। আচ্ছা, একদিন যাব ।-_বীরেশ্বর বলিল । যাবেন। আমাদের প্রতিষ্ঠা-দিবস আসছে। আপনারা যাবেন আমর। আশা করি । “১১০ জমি-শিকড়-আকাশ যাঁব।--বলিয়। বীরেশ্বর বিদায় লইল। এতে হাসবার কিছু নেই ।--বীরেশ্বর নিজের মনে তর্ক করিতে করিতে চলিতেছিল।-_- আশ্রম করলে মাথায় সিথি কাট! যাবে না, এমন কোন কথ! নেই। বাজে কথা-_ কিন্ত অকারণে বীরেশ্বরের হাসি পাইতেছিল। ম্যান আযাণ্ড মোক্ষ! সাগরমল টাক! ধার দিল সহজেই | সুবোধ লাহিড়ী আশা দিল, একট! সাগ্রায়ের অডাঁর শীঘ্রই পাওয়া যাইবে । হিরণ মিত্তির তরস! দিয়াছেন অনেক । চমৎকার | বীরেশ্বর খুশি হইয়া উঠিল। এই সব পলিমাটিতে যেন বীরেশ্বরের মনটা সাময়িক ভাবে ভবিদ্াতের ফুলে ফলে পূর্ণ হইয়া উঠিল ।- নৃতন বই সে লিখিতে আরম্ভ করিয়াছে । লিখিতে লিণ্তে ক্লান্ত হইয়া ফিরিয়া চাছিয়! দেশিল, দীপিকা মজুত আছে। নিশ্চিন্ত হইয়া আবার লিটিতেছে। আবার লে" বন্ধ করিয়া দীপিকাকে পাইল । বই বিক্রয় হইতেছে। বইয়ের টাকা আপিতেছে ! সাগরমল, সুবোধ লাহিডী, হিরণ মিজের প্রয়োজন নাই তাহার। এতদিনে যুক্ত সে। সম্পূর্ণ মুক্ত । কিন্তু বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না । পলিমাটি সরিয়া যায়। কঠোর সমালোচক মনাংশ অনাবৃত হইয়! বারেশ্বরকে যেন ভেঙাইতে থাকে । সেই মনে দেখে আকাশে উড়িতে যায় বীরেশ্বর। দই কলা চিক্লনি সাগরমল দীপিকার! সকলে মিলিয়! মাটির দিকে টানে । হ্যা। দীপিকাও। বীরেশ্বর স্পষ্ট দেখিতে পায়। টানাটানির অবসাদ বাড়িয়া ফেলিয়া বীরেশ্বর চাঙ্গা হইয়া উঠিল দীপিকার নামে। চুপিচুপি চলিয়া গেল দীপিকার কাছে।